শনিবার, ২ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

নিকোলা টেসলার পৃথিবী কাঁপানো আবিষ্কার

টেকনোলজি ডেস্ক

নিকোলা টেসলার পৃথিবী কাঁপানো আবিষ্কার

স্কুলে পড়ার সময়ই পদার্থবিজ্ঞানের এক শিক্ষক তাঁকে পদার্থবিজ্ঞানে আগ্রহী করে তোলেন। অনেকেই দাবি করেছেন, টেসলা সে সময় ক্যালকুলাসের বড় বড় অঙ্ক মনে করে ফেলতে পারতেন।  চার বছরের বিদ্যালয় জীবন তিনি তিন বছরে শেষ করেছিলেন...

 

বর্তমান ক্রোয়েশিয়ায়, ১৮৬৫ সালে জন্মেছিলেন টেসলা। যাকে বিদ্যুতের জাদুকর বলে চেনে এ বিশ্ব। ছোটবেলা থেকেই তার তীক্ষ্ণ মেধার সুনাম শোনা যায়। পড়াশোনায় ভালো ছিলেন। আগ্রহী ছিলেন আবিষ্কার ও নতুন কিছু গড়তে। স্কুলে পড়ার সময়ই পদার্থবিজ্ঞানের এক শিক্ষক তাঁকে পদার্থবিজ্ঞানে আগ্রহী করে তোলেন। অনেকেই দাবি করেছেন, টেসলা সে সময় ক্যালকুলাসের বড় বড় অঙ্ক মনে করে ফেলতে পারতেন। চার বছরের বিদ্যালয় জীবন তিনি তিন বছরে শেষ করেছিলেন।

১৮৭৪ সালে টেসলা অস্ট্রীয়-হাঙ্গেরীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৮৭৫ সালে অস্ট্রিয়ার গারাজে সেনাবাহিনীর একটা বৃত্তি পান। কঠোর পরিশ্রম করে পড়াশোনা করতেন টেসলা। রবিবার ও ছুটির দিনগুলো ছাড়া বাকি দিনগুলোয় ভোররাত ৩টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত পড়াশোনা করতেন। কলেজের দ্বিতীয় বর্ষে বৃত্তি হারান। খরচ জোগাতে জুয়া খেলায় আসক্ত হয়ে পড়েন। ১৮৭৮ সালে ঘর, পরিবার সব ছেড়ে মারিবর চলে যান। ১৮৮২ সালে ফ্রান্সে এডিসনের কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন টেসলা।

এসি কারেন্ট বা অলটারনেটিং কারেন্ট নিয়ে কাজ করে বিশ্বকে চমকে দেন তিনি। ওয়্যারলেস নিয়ন্ত্রিত প্রথম নৌকাও তিনি তৈরি করেন। ‘এসি কারেন্ট’ এর ব্যবসা থেকে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেছিলেন, সেগুলো আবার খরচ করতেন বিভিন্ন গবেষণার কাজে।

 

সারা জীবনে মোট ৩০০টিরও বেশি উদ্ভাবন পেটেন্ট করেছেন টেসলা। ১৮৯৩ সালে টেসলা বানিয়েছিলেন বাষ্পচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন যন্ত্র টেসলা অসিলেটর,  যাতে বাষ্পের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করা যেত...

 

টেসলার আবিষ্কার

ডিম ফেটানোর মেশিন : পাঁচ বছর বয়সে টেসলা তৈরি করেন স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র। তা ছিল, পানির প্রবাহ দিয়ে চলা একটা ডিম ফেটানোর মেশিন। এক পাশে পানি ঢেলে দিলে সেই পানি পড়ার সময় ১টা চাকা ঘোরাতেন, আর সেই চাকার ঘূর্ণনেই চলত মেশিনটা।

বিদ্যুতের জাদুকর টেসলার ক্যারিয়ার শুরু হয় বুদাপেস্টের টেলিফোন এক্সচেঞ্জে। সেখানে কিছুদিন কাজ করার পর যোগ দিলেন প্যারিসের অ্যাডিসন ইলেকট্রিক কোম্পানিতে। কাজেকর্মে তাঁর দক্ষতা টের পেয়ে কদিন পরই আমেরিকায় অ্যাডিসন কোম্পানির নিউইয়র্ক শাখায় পাঠানো হলো তাঁকে। ইলেকট্রিক জেনারেটর আর লাইট বানানো ও মেরামত করার দক্ষতায় সবাইকে তাক লাগিয়ে দিলেন। কোম্পানির মালিক ছিলেন আরেক বিখ্যাত উদ্ভাবক টমাস আলভা অ্যাডিসন।

এসি বিদ্যুৎ : টেসলা এসি কারেন্ট আবিষ্কার করেননি বটে কিন্তু এসি বিদ্যুৎ প্রবাহ এবং সেই বিদ্যুৎ নানা জায়গায় সরবরাহ করার যে সিস্টেম বর্তমানে বিশ্বের সর্বত্র ব্যবহৃত হয়, তা টেসলার হাতেই গড়া। খুব উচ্চ কম্পাঙ্কের এসি প্রবাহ দিয়ে টেসলা তৈরি করেছিলেন টেসলা কয়েল, যা দিয়ে ল্যাবে বসেই বজ্রপাতের মতো বিদ্যুৎ চমক বা আর্ক তৈরি করা সম্ভব।

ইন্ডাকশন মোটর : বাসার সিলিং ফ্যানে যে ধরনের মোটর ব্যবহার করা হয়, তার নাম ইন্ডাকশন মোটর। এটার আবিষ্কারক টেসলা।

প্রথম জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র : নায়াগ্রা ফলসের বিশাল জলপ্রবাহকে কাজে লাগিয়ে টেসলার নকশায় তৈরি হয় বিশ্বের প্রথম জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র।

রেডিও : বেতার তরঙ্গ নিয়ে টেসলা অনেক কাজ করে গেছেন। তিনি বেতার তরঙ্গ দিয়ে রিমোট কন্ট্রোল জাহাজ বানিয়ে দেখিয়েছিলেন।

কৃত্রিম বজ্রপাত : তিনি কৃত্রিম বজ্রপাত তৈরি করেছিলেন (চার্জবিহীন এবং মিলিয়ন ভোল্ট, ১৩৫ ফুট উপরে)। তাই বজ্রপাতের শব্দ ১৫ মাইল দূরে ক্রিপল কিক কলোরাডোতেও শোনা যায়। মানুষ রাস্তায় হাঁটার সময় আগুনের স্ফুলিঙ্গ দেখেছিল। এই স্ফুলিঙ্গ যখন পানির পাইপে প্রবেশ করেছিল তখন থেকে কিছু কমে যেতে থাকে। সুইচ বন্ধ করার পরও সেখানকার বাতিগুলো জ্বলছিল।

সারা জীবনে মোট ৩০০টিরও বেশি উদ্ভাবন পেটেন্ট করেছেন টেসলা। ১৮৯৩ সালে টেসলা বানিয়েছিলেন বাষ্পচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন যন্ত্র টেসলা অসিলেটর, যাতে বাষ্পের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করা যেত। এই যন্ত্রটি চালানোর সময় খুব জোরে কাঁপত। টেসলা অনেক দিন কাজ করেছিলেন তারবিহীন বিদ্যুৎ সরবরাহ বানানোর। টেসলার সবচেয়ে অদ্ভুত উদ্ভাবণের পরিকল্পনা ছিল ডেথ রে বা মারণরশ্মি বানানো। টেসলা বেঁচে ছিলেন ৮৬ বছর। ১৯৪৩ সালের ৭ জানুয়ারি নিউইয়র্কের একটি হোটেলে চরম দারিদ্র্যের মাঝে মারা যান টেসলা।

সর্বশেষ খবর