শনিবার, ২০ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

এয়ারপোর্টে লাগেজ হারানো প্রতিরোধে নব-প্রযুক্তি

টেক ডেস্ক

এয়ারপোর্টে লাগেজ হারানো প্রতিরোধে নব-প্রযুক্তি

সম্প্রতি এয়ারট্যাগের বিক্রি অনেক বেড়েছে। স্মার্টফোন বা কম্পিউটারের মাধ্যমে এয়ারট্যাগযুক্ত স্যুটকেসগুলোকে পৃথিবীর যে কোনো জায়গায় চিহ্নিত করা সম্ভব।

সুদূর পথ পাড়ি দিয়ে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাতায়াতের সবচেয়ে সহজ মাধ্যম বিমানে যাতায়াত। আর প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে বিমানবন্দরে যাতায়াত করা যাত্রীরা সঙ্গে বহন করেন লাগেজ কিংবা ব্যাগ। তবে বিমানবন্দরগুলোয় সেই লাগেজ কিংবা ব্যাগ হারানোও নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিমানবন্দরে যাত্রীদের লাগেজ হারানোর ঘটনা অনেক বেড়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ বিষয়ে বিস্তর লেখালেখিও হচ্ছে। এ সমস্যার হাত থেকে বাঁচতে যাত্রী ও উড়োজাহাজ সংস্থাগুলো প্রযুক্তিভিত্তিক সমাধানের দিকে ঝুঁকছেন। যুক্তরাজ্যের সংবাদ সংস্থা বিবিসির এক প্রতিবেদনে এমন কয়েকটি সমাধানের বিষয়ে বলা হয়েছে।

 

কেন লাগেজ হারিয়ে যায়?

২০২০ সালের মহামারির সংক্রমণে বিশ্ববাসী যখন বিপর্যস্ত, তখন বিশ্বে উড়োজাহাজ চলাচল কার্যত বন্ধ ছিল। ফলে বিমানবন্দরগুলোয় বাড়তি কর্মী ছাঁটাই করা হয়। তবে বছর না পেরোতেই আবারও ছুটির মৌসুমে মানুষের বিদেশ ভ্রমণের প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সীমিত কর্মী দিয়ে লাগেজ ব্যবস্থাপনাসহ গুরুত্বপূর্ণ সেবাগুলো দিতে হিমশিম খাচ্ছে। বিমান সংস্থা ম্যাপফ্রে জানিয়েছে, এই গ্রীষ্মে লাগেজ হারিয়ে ফেলা ভ্রমণকারীর সংখ্যা ২০১৯ সালের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি। লাগেজ ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এসআইটিএর বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৯ সালে সারা বিশ্বে ১ কোটি ৯০ লাখ ব্যাগ ও স্যুটকেস যাত্রীদের সঙ্গে একই ফ্লাইটে ওঠেনি। এর মধ্যে ১৩ লাখ ব্যাগ ও স্যুটকেসের আর কোনো হদিসই পাওয়া যায়নি।

 

জিপিএস ট্র্যাকার ব্যবহার

অনেক যাত্রী আছেন যারা নিজেদের ব্যাগের খোঁজ রাখতে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে প্রযুক্তির সাহায্য নিচ্ছেন। তারা তাদের লাগেজের সঙ্গে অ্যাপলের এয়ারট্যাগের মতো জিপিএস ট্র্যাকার সংযুক্ত করে দিচ্ছেন। অ্যাপল জানিয়েছে, সম্প্রতি এয়ারট্যাগের বিক্রি অনেক বেড়েছে। স্মার্টফোন বা কম্পিউটারের মাধ্যমে এয়ারট্যাগযুক্ত স্যুটকেসগুলোকে পৃথিবীর যে কোনো জায়গায় চিহ্নিত করা সম্ভব। ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদন বলা হয়েছে, এক ব্যক্তি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া থেকে স্কটল্যান্ডে যান। কিন্তু তিনি ট্র্যাকারে দেখতে পান তার লাগেজ কানাডার টরন্টো হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ডেট্রয়েটে চলে গেছে। তবে পরিবহন খাত বিশেষজ্ঞ এরিক লিওপল্ডের মতে, ট্যাগিং যন্ত্র যাত্রীদের মনে সাময়িক প্রশান্তি আনলেও মূল সমস্যা থেকেই যায়। তার মতে, লাগেজের ব্যবস্থাপনা ও ফ্লাইট ছেড়ে যাওয়ার সময়ের মধ্যে সমন্বয় না হলে এর সমাধান হবে না।

 

সিট্রুর সমাধান

সিট্রু নামের একটি প্রতিষ্ঠান বিমানবন্দর ও উড়োজাহাজ সংস্থাগুলোকে বিমানে আরও উপযোগিতার সঙ্গে লাগেজ ওঠানোর ক্ষেত্রে সহায়তা করার ব্যাপারে আশাবাদী। ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠানটি  এমন একটি সফটওয়্যার তৈরি করেছে, যা নিরাপত্তা কর্মীদের চেয়ে দ্রুত চেক-ইন লাগেজ স্ক্যান করতে সক্ষম। সিট্রুর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আসসাফ ফ্রেনকেল বলেন, ‘সিট্রু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও কম্পিউটার ভিশন অ্যালগোরিদম ব্যবহার করে ব্যাগে নিষিদ্ধ বস্তুর উপস্থিতি চিহ্নিত করে।’ এটি এক্স-রে ও সিটি স্ক্যানারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মানব চোখের চেয়ে দ্রুত এবং তাৎক্ষণিকভাবে এসব উপকরণ চিহ্নিত করতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। আসসাফ ফ্রেনকেল আরও বলেন, ‘এটি সব সময় চালু থাকে, কখনো অন্যমনস্ক বা ক্লান্ত হয় না।’ ফ্রেনকেল দাবি করেন, এই প্রযুক্তির সহায়তায় লাগেজগুলো নির্ধারিত সময় অনুযায়ী উড়োজাহাজে উঠানো যায়।

 

এয়ারপোর্টারের সমাধান

যুক্তরাজ্যের একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান প্রস্তাব করে জানিয়েছে, বিমানবন্দরে যাত্রীদের লাইন ধরে লাগেজ পরীক্ষা করারই প্রয়োজন নেই। এর পরিবর্তে যাত্রীদের বাসা থেকে এসে লাগেজ নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছে ওই প্রতিষ্ঠানটি। একটি অ্যাপ কিংবা ওয়েবসাইট ব্যবহার করে এই সেবা নিতে পারেন ভ্রমণকারীরা। আপাতত লন্ডন থেকে জেনেভার ফ্লাইটে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ ও সুইস ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের ফ্লাইটগুলোতে এই সেবা চালু করেছে। এয়ারপোর্টারের একজন কর্মী ভ্রমণকারীদের বাসায় গিয়ে তাদের কাছ থেকে স্যুটকেস সংগ্রহ করবেন। তারপর সরাসরি এই লাগেজ বিমানবন্দরে নিরাপত্তা পরীক্ষা ও চেক-ইনের জন্য চলে যাবে। যাত্রী গন্তব্যে পৌঁছানোর পর এয়ারপোর্টারের পরিবহন অংশীদাররা যাত্রীর দেওয়া ঠিকানায় লাগেজ পৌঁছে দেবেন।

এ মুহূর্তে দুটি দেশে কাজ করলেও পর্যায়ক্রমে এই সেবা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা আছে কর্তৃপক্ষের। যদি যাত্রার এক দিন আগে লাগেজ সংগ্রহ করা হয়, সে ক্ষেত্রে যাত্রীকে প্রতিটি ব্যাগের জন্য ৪০ পাউন্ড করে দিতে হবে। তবে শেষ মুহূর্তে এ সেবা গ্রহণে খরচ বেড়ে যেতে পারে। বিমানবন্দর থেকে দূরত্বের ওপরেও মূল্যের তারতম্য হয়। এটি এখন বিলাসবহুল সেবা হলেও আগামীতে এর খরচ কমিয়ে সহজলভ্য করার চেষ্টা করা হবে বলে জানান এয়ারপোর্টারের প্রধান নির্বাহী র‌্যান্ডেল ডার্বি। তিনি বলেন, বিমানবন্দর ও উড়োজাহাজ সংস্থা ভর্তুকি দিয়ে হলেও এ ধরনের সেবাকে জনপ্রিয় করার চেষ্টা করবে। কারণ ভর্তুকির পরও এর প্রক্রিয়ায় বিমানবন্দরে যাত্রীদের লাগেজ ব্যবস্থাপনার খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি থাকবে। আশা করা যাচ্ছে, আগামীতে আরও উন্নত ও বুদ্ধিদীপ্ত সমাধানের মাধ্যমে যাত্রীদের লাগেজ কিংবা ব্যাগ হারিয়ে যাওয়ার বিড়ম্বনা রোধ করা সম্ভব।

সর্বশেষ খবর