সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
সার্চ ইঞ্জিন গুগল

যেভাবে বদলে দিয়েছে বিশ্ব

গুগল ম্যাপের অগ্রগতি হলো- ভৌগোলিক তথ্যকে অনেক বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। তবে নেতিবাচক দিক হলো- এটি সবসময় আপনাকে ট্র্যাকিং করে চলেছে।

যেভাবে বদলে দিয়েছে বিশ্ব

বিশ্বব্যাপী গুগল ম্যাপ ব্যবহার করেন ১ বিলিয়নেরও বেশি মানুষ। গত ১৭ বছরে এটি ডেস্কটপ অ্যাপ্লিকেশন থেকে একটি বিশাল মোবাইল প্ল্যাটফরমে বিকশিত হয়েছে, যা বিভিন্ন জায়গার অবস্থান সম্পর্কে ক্রমাগত তথ্য আপডেট করছে।

 

গুগল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সারা বিশ্বে তাদের ১৫ কোটিরও বেশি মানুষ তথ্য আপডেটে অবদান রাখছেন। এর মধ্যে বিভিন্ন কমিউনিটি এবং সরকারি খাত থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫ কোটি আপডেট পাওয়া যায়। তাই গুগল ম্যাপকে একরকম ‘জীবিত সত্তা’ হিসেবেও ভাবা যায়। আর গুগল সার্চ যে প্রযুক্তি খাতে বিপ্লব সৃষ্টি করেছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। জেনে নেওয়া যাক, গুগল ম্যাপের পেছনের প্রযুক্তি সম্পর্কে।

 

গুগলে প্রায় সবকিছুরই অনুসন্ধান করা সম্ভব। তবে ডিজিটাল ম্যাপটি একসময় প্রথম, এমনকি দ্বিতীয় স্থানেও ছিল না। ২০০০ দশকের মাঝামাঝি গুগল ম্যাপ চালু হয়, তখন এতে এমন সব প্রযুক্তি ছিল, যা বিশ্ববাসী আগে কখনো দেখেনি। যুক্তরাষ্ট্রের হফস্ট্রা ইউনিভার্সিটির ভূগোল বিভাগের অধ্যাপক এবং ডেটাচালিত জিওটেকনোলজি বিশেষজ্ঞ ক্রেগ বলেন, ‘যে দিন ব্রাউজারে স্যাটেলাইট চিত্রসহ গুগল ম্যাপ চালু হয়! সবাই সেখানে গিয়ে শুধু নিজের বাড়ির ছবি খুঁজছিলেন। কারণ এর আগে স্যাটেলাইট চিত্রে কেউ কখনো নিজের বাড়ি দেখেননি, বিশেষ করে রঙিন ছবিতে। পুরো বিশ্বের জন্য এটি ছিল এক নতুন দৃশ্য।’ গুগল ম্যাপের এই সাফল্য প্রাথমিকভাবে সম্ভব হয়েছিল ‘হোয়্যার টু টেকনোলজি’ (জিপিএস নেভিগেশন সার্ভিস) এবং ‘কিহোল’-এর (সফটওয়্যার কোম্পানি) মতো প্রতিষ্ঠান অধিগ্রহণের কারণে, যা ম্যাপিংকে ভোক্তাদের কাছে আরও সহজলভ্য করে তুলেছিল।

 

অন্যদিকে হোয়্যার টু টেকনোলজি তাদের দিয়েছে ভালো ইউজার ইন্টারফেস। আর গুগল অল্প ব্যয়েই এসব প্রযুক্তিকে এক করেছে এবং বিভিন্ন উপায়ে সেগুলোকে আরও বিকশিত করে এমন একটি সিস্টেম দাঁড় করিয়েছে, যা আগে দেখা যায়নি। ডেভেলপারদের কাছে উন্মুক্ত করা, রাস্তার দৃশ্যকে একীভূত করা এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস অ্যাপ চালু করে নিজস্ব প্রযুক্তি দ্রুত প্রসারিত করেছে গুগল ম্যাপ। কিন্তু কীভাবে?

 

অ্যাপলিকেশনের (গুগল ম্যাপ) মূল অংশটি ছিল একটি বাস্তব বিশ্বের মডেল। রাস্তার দৃশ্যসহ বাস্তব জগতে কী ঘটছে তার ডিজিটাল রূপও বলা যায় একে। সঠিক একটি মানচিত্র তৈরি করতে স্যাটেলাইট এবং এরিয়াল ছবি দিয়ে যাত্রা শুরু করে গুগল। এটি করার জন্য তারা ‘ফটোগ্রামমেট্রি’ নামের একটি প্রক্রিয়া ব্যবহার করে। এ ফটোগ্রামমেট্রি এবং জিপিএস ডেটা ব্যবহার করে তারা ছবির জন্য সঠিক স্থানাঙ্কগুলো চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়। ক্রিস্টোফার ফিলিপস বলেন, ‘এটিকে একটি বড় ‘জিগস পাজল’ হিসেবে ভাবতে পারেন, যেখানে আমরা ছবিগুলোকে একসঙ্গে রাখতে পারি এবং এসব ছবির মধ্যে দূরত্ব, তাদের প্রকৃত অবস্থান বা জিপিএস অবস্থান বুঝতে পারি। ৫০০ পাউন্ডের একটি ক্যামেরা দিয়ে গুগলের ক্যালিফোর্নিয়ার ক্যাম্পাসে শুরু হয়েছিল এ কার্যক্রম।’

 

আপনি হয়তো কোনো না কোনো সময়ে একটি স্ট্রিট ভিউ গাড়ি দেখেছেন, যার ওপর একটি ৩৬০ ডিগ্রি ক্যামেরা রয়েছে। এর কিছু সংস্করণ আছে ‘লাইডার’ সেন্সর দিয়ে সজ্জিত, যা ক্যামেরা থেকে তার চারপাশের বস্তুর দূরত্ব পরিমাপ করে। সুনির্দিষ্ট লোকেশন দিতে এতে রয়েছে জিপিএস প্রযুক্তিও। কিন্তু প্রত্যন্ত এলাকা বা স্থানে পৌঁছানোর জন্য পরবর্তীতে সহজে বহনযোগ্য ক্যামেরাও যুক্ত করেছে গুগল। গাড়ি পৌঁছাতে পারে না এমন জায়গায় যাওয়ার জন্য গুগল ব্যাকপ্যাক ক্যামেরাও রেখেছে। এ ছাড়া তারা মোটরসাইকেল এবং স্নোমোবাইলের মতো পরিবহনও ব্যবহার করেছে। এমনকি কিছু বিরল ক্ষেত্রে উট, ডুবুরি এবং মহাকাশচারীদের কাছ থেকেও ছবি পেয়েছে গুগল। এখন পর্যন্ত ২৫০টিরও বেশি দেশ এবং অঞ্চল ম্যাপের আওতায় এনেছে গুগল। কিন্তু দিন দিন গুগল যত ডেটা যোগ করছে এবং আমাদের যাপিতজীবন এবং সংস্কৃতিতে নিজেকে গেঁথে দিয়েছে।

 

       তথ্যসূত্র : ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল

সর্বশেষ খবর