সোমবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিরাপদ থাকার কৌশল

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিরাপদ থাকার কৌশল

সোশ্যাল মিডিয়া আজকাল মানুষের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সকাল থেকে রাত অবধি সোশ্যাল মিডিয়াতে স্ক্রল করাটা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।  তাই এর নিরাপত্তায় অবশ্যই সচেতনতা উচিত...

 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম (সোশ্যাল মিডিয়া) হলো এক ধরনের কম্পিউটার ভিত্তিক প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে বিভিন্ন ভার্চুয়াল নেটওয়ার্ক ও সম্প্রদায়ের মধ্যে ডিজিটালভাবে ধারণা, চিন্তাভাবনা ও তথ্য ভাগ করে নেওয়া যায়। মূলত এটি নেটদুনিয়ার ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ্লিকেশনগুলোর একটি সম্মিলিত শব্দ বা যোগাযোগ ব্যবস্থা। জনসাধারণ তাদের বন্ধু, পরিবার এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে এবং যোগাযোগ করতে সামাজিক মিডিয়া ব্যবহার করে থাকে। এ ছাড়া ব্যবসায়ীরা নেটভিত্তিক পণ্য বাজারজাতকরণ এবং প্রচারণা এবং গ্রাহক সন্তুষ্টির বিষয় সম্পর্কে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বিশদ জানতে পারে। অর্থাৎ সামাজিক মাধ্যমগুলো হলো ইন্টারনেটভিত্তিক; তাই ব্যবহারকারীরা এতে তাদের ব্যক্তিগত তথ্য, ভিডিও ও ফটোর মতো সামগ্রীকে দ্রুত ইলেকট্রনিক যোগাযোগের সুবিধা দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ব্যবহারকারীরা কোনো কম্পিউটার, স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটের সাহায্যে ওয়েবভিত্তিক সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে, সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।

 

আমাদের নিত্যদিনের নেট-প্রযুক্তির একটি বড় অংশজুড়ে রয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। বিশেষত ফেসবুক, মেসেঞ্জার, টুইটার, টিকটক, ইনস্টাগ্রাম,  হোয়াটসঅ্যাপ ও স্ন্যাপচ্যাটের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। যত দিন যাচ্ছে ইউজার সংখ্যাও বাড়ছে। আর এরই মধ্যে কিছু দুষ্কৃতকারী অনলাইনে আপনার তথ্য চুরি কিংবা অ্যাকাউন্ট চুরি করে নানা অপকর্ম করছে। অনেক সময় অনেকের টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। তাই নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতনতা দরকার। অনলাইনে নিজেকে নিরাপদ রাখবেন কীভাবে? আজ জানব সেসব...

 

ফেসবুকের নিরাপত্তা

এটি এমন একটি মাধ্যম, যেখানে আমরা নিজের মনের অভিব্যক্তি, ভালো লাগা, খারাপ লাগা সব শেয়ার করে থাকে। এর মাধ্যমে পরিচিতজনরা আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য জানতে পারেন। তবে আশঙ্কার বিষয় হলো- অনেক অপরিচিতও এই তথ্য জেনে যেতে পারে। দেখা গেছে, এসব তথ্য ব্যবহার করে সাইবার হামলা কিংবা অন্যের আর্থিক ক্ষতির মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ে কিছু চক্র। ফেসবুকের নিরাপত্তা বিষয়ে ব্যক্তিগত কিছু ভুলেও এমনটা হয়ে থাকে। সেই বিষয়গুলো হলো।

 

►  বন্ধু তালিকায় অপরিচিত কাউকে না রাখাই ভালো। এমনকি নতুন কাউকে ফ্রেন্ডলিস্টে অ্যাড করলে তার প্রোফাইল দেখে নিন। অন্তত একবার ফ্রেন্ডলিস্ট চেক করুন। তাতে বুঝতে পারবেন কোন অ্যাকাউন্টগুলো ইনেকটিভ কিংবা বন্ধ। সচরাচর ফ্রেন্ডলিস্টে অপরিচিত, ফেক অ্যাকাউন্ট রাখবেন না।

►  ফেসবুকে আপনার তথ্য কারা দেখবে বা আদৌ দেখতে পারবে কিনা তা নির্ধারণ করুন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আপনার তথ্যকে গুরুত্ব দেয়। তাই নিজের ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে অবহেলা নয়।

►  পাসওয়ার্ড সংরক্ষণে ও নির্ধারণে সতর্ক হোন। একেবারে সহজ পাসওয়ার্ড দেওয়া উচিত নয়। আর সময়ে সময়ে নিজের পাসওয়ার্ড বদল করুন। এক পাসওয়ার্ড দীর্ঘদিন ব্যবহার করবেন না।

►  দুই ধাপ নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। এতে সহজে আপনার অ্যাকাউন্টে পাসওয়ার্ড জানা সত্ত্বেও প্রবেশ করতে পারবে না।

►  আজকাল ফেসবুকে ব্যবসা পরিচালনার জন্য অনেকে একই অ্যাকাউন্ট দিয়ে পেজ ম্যানেজ করেন। এতে কিন্তু আপনার নিজের অ্যাকাউন্ট বিপদে পড়তে পারে। ফেসবুক পেজে বিভিন্ন পদে যোগ করার সুযোগ আছে।

►  ফেসবুকে আজকাল অনেক গেম দেখা যায়। আবার আজকাল কিছু অ্যাপ আসে যেগুলোর মাধ্যমে অন্যরা নাম গোপন রেখে আপনায় মেসেজ দিতে পারে। এ ধরনের অ্যাপ থেকে সাবধান। এতে গেম খেলার সময় আপনার অনেক তথ্য চুরি হতে পারে। অ্যাকাউন্টও হারাতে পারেন। 

►  ফেসবুক প্রাইভেসি চেকআপের ((facebook.com/privacy/checkup)  মাধ্যমে নিজের প্রোফাইলের নিরাপত্তা দেখতে পারবেন।

 

ইনস্টাগ্রামের নিরাপত্তা

ফেসবুকে নিরাপত্তা কিংবা প্রাইভেসি নির্ধারণ অনেক সহজ। কিন্তু ইনস্টাগ্রামের একই কাজটি একটু জটিল। ফেসবুকে প্রতিটি পোস্টে প্রাইভেসি নির্ধারণ করা যায়। ইনস্টাগ্রামে তা নেই। সেক্ষেত্রে আপনার ফলোয়ার এর অবস্থা দেখে নেবেন। অপরিচিতদের যোগ না করাই ভালো। অ্যাকাউন্ট প্রাইভেট করে রাখুন। এতে ফলোয়ারে থাকা ব্যক্তিরাই শুধু দেখতে পারবে আপনার দেওয়া ছবি বা ভিডিও।

ঝামেলা দেখলে রিপোর্ট করুন

অনলাইনে অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখাটাই একমাত্র উপায় নয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপত্তিকর পোস্ট বা বাজে কন্টেন্ট পেলেই রিপোর্ট করুন। সেক্ষেত্রে নিজেকে সংযুক্ত না করে রিপোর্ট করুন।

মেসেঞ্জার ব্যবহারে সতর্কতা

ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মেসেজ দেখতে মেসেঞ্জার এখন বহুল জনপ্রিয়। মেসেঞ্জারে কিছু বাড়তি নিরাপত্তা গ্রহণ করতে হয়। যেমন মেসেঞ্জারে যেহেতু পারসোনাল ইনবক্স থাকে তাই একে সিকিউর রাখুন। এমনকি মেসেঞ্জারে চাওয়া ক্যামেরা, অডিও পারমিশন না দেওয়াই ভালো। এতে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য নিরাপদ থাকবে।

ই-মেইলের নিরাপত্তা

যে কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ই-মেইল ব্যবহার বাধ্যতামূলক। তাই ই-মেইল নিরাপদ রাখতে প্রয়োজন বাড়তি সতর্কতা। শুধু আপনার ই-মেইল হ্যাক করতে পারলে হারাতে পারে অনেক কিছু। যে কোনো ডিভাইসে আপনার ই-মেইল দিয়ে লগইন দেবেন না। নিজের রেগুলার ডিভাইসেই মেইল অ্যাকাউন্ট রাখুন।

লোকেশন সার্ভিস বন্ধ রাখুন

লোকেশন শেয়ার সার্ভিস অপ্রয়োজনে চালু করবেন না। আজকাল আমরা হুটহাট গুগল ম্যাপের লোকেশন দিয়ে রাখি। এতে আপনার ফোনের অনেক প্রাইভেট ডাটাও অন্য কেউ চেক করতে পারে। বিশেষ প্রয়োজনে লোকেশন শেয়ার করতেই পারেন। এর বাইরে লোকেশন সার্ভিস চালু রাখবেন না।

অনলাইনে কেনাকাটায় সাবধান

আজকাল মানুষ কেনাকাটা অনলাইনেই করে। মোশ্যাল মাধ্যমে বিভিন্ন পেজ বা লিংকের মাধ্যমে অনলাইন শপে কেনাকাটা করে। অনেক সময় কিছু লিংকে প্রবেশ করে পেমেন্ট করে নানা ভোগান্তির শিকার হতে হয়। পেমেন্ট করার সময় আমরা সচরাচর কার্ড ব্যবহার করি। পেমেন্ট করার পর ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করে কার্ডের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত হোন।

আর্থিক লেনদেন

ব্যাংকিং ব্যবস্থাও এখন ডিজিটাল হয়ে গেছে। আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে সব সময় সবকিছু চেক করে নেবেন। কোথাও টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রেও সবকিছু নিশ্চিত হয়ে দেবেন। লেনদেনের ক্ষেত্রে সব সময় প্রমাণ ও ট্র্যাকিং প্রমাণ রাখবেন। তথ্যসূত্র : মিডিয়া সেফটি

সর্বশেষ খবর