অভাবনীয় এ পদ্ধতিতেও বিদ্যুৎ চুরি এবং সিস্টেম লস হবে কি না সে খবর এখনো জানা যায়নি। উন্নত প্রযুক্তি ও অভাবনীয় বৈজ্ঞানিক উন্নতির জমানায় আর কিছুই অসম্ভব নয়। সেদিন আর দূরে নয়, যেদিন মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কের মতো দেশের প্রতিটি আনাচে-কানাচে সহজেই পৌঁছে যাবে বিদ্যুৎ।
বিদ্যুৎ ছাড়া আমাদের প্রাত্যহিক জীবন বলতে গেলে অচল। বিদ্যুৎ সংযোগের কারণে আমাদের আশপাশে বৈদ্যুতিক তারের জটলা থাকে। তাতে ঝামেলা কি কম বেড়েছে? একটু ঝড়-বৃষ্টি হলেই তার ছিঁড়ে যায়, ফলে কয়েক ঘণ্টার জন্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রগুলো অচল হয়ে যায়। বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে নানা ধরনের ছোট-বড় দুর্ঘটনা, এমনকি প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এর সঙ্গে বিদ্যুৎ ও বিদ্যুতের তার চুরির ঘটনা তো ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ আছেই। এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যেত যদি খুঁটি আর তার ছাড়াই মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কের মতো শুধু শক্তিশালী মাল্টি ইউজ টাওয়ার বসিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হতো। সেই টাওয়ারগুলো থেকেই ঘরে ঘরে ‘বিম’ করে দেওয়া যেত বিদ্যুৎ। বিজ্ঞানীরা এখন অবশ্য তার ছাড়াই বিদ্যুৎ বিম করতে সক্ষম হয়েছেন। ট্রায়ালেও সফল। ব্যাপক হারে প্রয়োগের জন্য জোর গবেষণা চালাচ্ছেন ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা। তারা এই তারবিহীন বিদ্যুৎ পরিবহনের নাম দিয়েছেন উইটিসিটি। একটি তামার তারের কুন্ডলী থেকে আরেকটি কুন্ডলিতে পরস্পরের সংযোগ ছাড়াই বিদ্যুৎ পরিবহন করা যায়। পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় একেই বলা হয় তড়িৎ চুম্বকীয় আবেশ। তারা এমন ট্রান্সমিটার তৈরি করেছেন যা সারা বাড়িতে এ আবেশ ছড়াবে। আবিষ্কারকদের মতে, এ তড়িৎ চুম্বকীয় আবেশ ঘরে অবস্থিত মানুষ-আসবাবপত্র ইত্যাদিতে এর কোনো প্রভাবই পড়বে না। একমাত্র যেসব প্রয়োজনীয় বস্তুতে থাকবে বিশেষ ব্যবস্থা, কেবল সেগুলোই ওই চুম্বকীয় আবেশ গ্রহণ করবে। আবিষ্কার অবশ্য এখানেই থেমে থাকবে না আরও গবেষণা চলছে এবং তাদের আশা শুধু বাড়ির ভেতর নয়, এ পদ্ধতিতে বাইরেও বিদ্যুৎ বিম করা সম্ভব হবে। এর ফলে আগামী দিনে মাইলের পর মাইল ওভারহেড তার আর ছোট-বড় দৈত্যাকৃতি খুঁটি বসিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগের বিশাল আয়োজনের সমস্যা থাকবে না। থাকবে গগনচুম্বী টাওয়ার। শক্তিশালী উন্নত প্রযুক্তিতে তৈরি ট্রান্সমিটার বসানো হবে সেখানে। এভাবে তৈরি হবে বিদ্যুৎ সরবরাহের নেটওয়ার্ক। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে তড়িৎ বিম হয়ে ট্রান্সমিশন লাইন অর্থাৎ ডিমান্ড সেন্টারে যাবে। সেখান থেকে ট্রান্সফরমার অর্থাৎ যেখান থেকে উচ্চক্ষমতা যুক্ত তড়িৎকে নিয়ন্ত্রিত করে কম ভোল্টেজে নামিয়ে এনে বিভিন্ন সেক্টরে সরবরাহ করা হবে। এর সঙ্গে কমে যাবে বিদ্যুৎ সরবরাহের খরচও। তবে অভাবনীয় এ পদ্ধতিতেও বিদ্যুৎ চুরি এবং সিস্টেম লস হবে কিনা সে খবর এখনো জানা যায়নি। উন্নত প্রযুক্তি ও অভাবনীয় বৈজ্ঞানিক উন্নতির জমানায় আর কিছুই অসম্ভব নয়। সে দিন আর দূরে নয়, যেদিন মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কের মতো দেশের প্রতিটি আনাচে-কানাচে সহজেই পৌঁছে যাবে বিদ্যুৎ।