১১ জুন, ২০১৮ ১৪:১৮

যেভাবে কাছাকাছি এলেন ট্রাম্প-কিম

নিজস্ব প্রতিবেদক

যেভাবে কাছাকাছি এলেন ট্রাম্প-কিম

সিঙ্গাপুরে পৌঁছানোর পর ট্রাম্প ও কিম (ডানে)

একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার জের ধরে ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার তিক্ততা চরমে পৌঁছায় যা এর আগের বছরগুলোতে দেখা যায়নি। দুই দেশের সর্বোচ্চ দুই নেতা বাগযুদ্ধও দেখেছে বিশ্ব। কিন্তু সব ভুলে আগামীকাল সিঙ্গাপুরে বৈঠকে বসছেন এসময়ের সবচেয়ে আলোচিত দুই রাষ্ট্র নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কিম জং উন। দুই মেরুর দুই ব্যক্তি যেভাবে একে অপরের কাছাকাছি এলেন:

২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি নববর্ষ উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বক্তৃতা দেন উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন। এসময় শীতকালীন অলিম্পিকের আয়োজক প্রতিবেশী দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতি শুভকামনার কথা জানান। তখন এও জানান, যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্যবস্তুতে হামলায় সক্ষম উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র।

২ জানুয়ারি কিমের এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ভিন্ন ভিন্নভাবে সাড়া দেন ট্রাম্প ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন। ট্রাম্প কিমের পারমাণবিক বোতাম নিয়ে ঠাট্টা করেন। তবে মুন জানান, তিনি কিমের সঙ্গে বৈঠকে আগ্রহী।

৩ জানুয়ারি উত্তর কোরিয়া-দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যকার হটলাইন ফের সচল হয় যেটি এর আগের দুই বছর ব্যবহারই করা হয়নি। এর পরের দিন কিম-ট্রাম্প শীতকালীন অলিম্পিক চলাকালে সামরিক মহড়া বাতিল করতে সম্মত হন। তার দুই দিন পর দক্ষিণ কোরিয়া জানায়, উত্তর কোরিয়া বৈঠকে বসতে আগ্রহী।

৯ জানুয়ারি দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হয় এবং উত্তর কোরিয়া দক্ষিণ কোরিয়ায় শীতকালীন অলিম্পিকে প্রতিনিধি দল পাঠাতে রাজি হয়। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরের পর এটিই ছিল প্রথম মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক।

১৯ জানুয়ারি দক্ষিণ কোরিয়া জানায়, উত্তর কোরিয়া নিজেদের সামরিক বাহিনীর মহড়াতে তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। শীতকালীন অলিম্পিক শুরুর আগের দিন অর্থাৎ ৮ ফেব্রুয়ারির ওই মহড়ায় প্রধান অতিথি ছিলেন কিম জং উন।

৯ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ কোরিয়ার শীতকালীন অলিম্পিকে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার সফর করেন কিম জং উনের বোন কিম ইয়ো জং। ভাইয়ের পক্ষ থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টকে উত্তর কোরিয়ার সফরের আমন্ত্রণ জানান কিম ইয়ো জং। তবে মুন জায়ে ইন সেটি প্রথমে গ্রহণ করেননি। তিনি জানান, সঠিক পরিস্থিতি তৈরির পর দুই দেশেরই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া উচিত। 

২৩ ফেব্রুয়ারি উত্তর কোরিয়ার ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। ৬ মার্চ দক্ষিণ কোরিয়ার নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান উত্তর কোরিয়ার সফল করলে কিম জানান, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে আলোচনায় বসতে আগ্রহী। এরপরের দিন  জানানো হয়, বৈঠকে বসতে যাচ্ছে উত্তর-দক্ষিণ কোরিয়ার সর্বোচ্চ দুই নেতা।

৯ মার্চ দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্র গিয়ে জানায়, উত্তর কোরিয়ার নেতা ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে আগ্রহী। ট্রাম্প দ্রুত সে প্রস্তাব গ্রহণ করেন।

প্রথমবারের মতো চীন সফর করেন কিম জং উন। ২৭ মার্চ তার সফরের খবরটি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়। উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে বৈঠক করেন তৎকালীন সিআইএ প্রধান ও বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। এপ্রিলের মাঝামাঝি এ খবরটি প্রকাশিত হয়। তবে এরও দুই সপ্তাহ আগে (৩০ মার্চ-১ এপ্রিল) সিআইএ প্রধানের সঙ্গে বৈঠকটি হয়েছিল।

১ এপ্রিল উত্তর কোরিয়ার সফর করেন দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্কৃতি মন্ত্রী। তার সঙ্গে যাওয়া দক্ষিণ কোরীয় শিল্পীরা কিমের জন্য পারফরম্যান্স করেন। ২০ এপ্রিল ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা ও পরামাণু অস্ত্র পরীক্ষাগার বন্ধের ঘোষণা দেন কিম-ট্রাম্প। ২৭ এপ্রিল কিম-মুন জায়ে ইন ঐতিহাসিক বৈঠকে মিলিত হন।

মে (৭-৮) মাসে ই দ্বিতীয়বার চীন সফর করেন কিম জং উন। দুই দিন চীনে ছিলেন তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পর মে মাসে (৯-১০) কিম জং উনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মাইক পম্পেও। কিম আমেরিকান বন্দীদের মুক্তি দিতে রাজি হন। ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক নিয়েও ওই সময় আলোচনা হয়।

১৫ মে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন কিম। যুক্তরাষ্ট্র-দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক মহড়াকে কেন্দ্র করে তিনি ওই সিদ্ধান্ত নেন। ওই সময় তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক বাতিলেরও হুমকি দেন। ১৬ মে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন উত্তর কোরিয়ার ক্ষেত্রে লিবিয়ার মডেল অনুসরণ করার কথা বলেন।

২২ মে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইনের সঙ্গে বৈঠকে ট্রাম্প বলেন, 'কিম জং উনের সঙ্গে তার বৈঠক নাও হতে পারে।' তবে ওই দিনই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও জানান, তিনি বৈঠকের বিষয়ে আশাবাদী।

২৪ মে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে পুঙ্গে রি পারমাণবিক পরীক্ষা কেন্দ্র বিষ্ফোরণের মাধ্যমে উড়িয়ে দেয় উত্তর কোরিয়া। আর ওই দিনই আনুষ্ঠানিকভাবে কিমের সঙ্গে বৈঠক বাতিল করেন ট্রাম্প।

২৫ মে এই ঘোষণাকে দুঃখজনক আখ্যা দেয় উত্তর কোরিয়া। তারা ট্রাম্পের ঘোষণার পরও বৈঠকের বিষয়ে আশাবাদী বলে জানায়। ওই দিনই ট্রাম্প জানান, বৈঠক হতেও পারে।

২৬ মে দুই কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা হঠাৎ বৈঠক করেন। ওই দিনই ট্রাম্প জানান, কোনো কিছু পরিবর্তন হয়নি। ১২ জুন সিঙ্গাপুরের বৈঠক হবে। তার পরের দিনই যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকরা উত্তর কোরিয়া সফর করে।

৩০ মে যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন কিমের সবচেয়ে বিশ্বস্ত উপদেষ্টা কিম ইয়ং চোল। ২০ বছরের ইতিহাসে তিনিই উত্তর কোরিয়ার জ্যৈষ্ঠ নেতা যিনি যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। ১ জুন ওয়াশিংটনের ওভাল অফিসে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন কিম ইয়ং চোল। এরপর ট্রাম্প জানান, বৈঠক হচ্ছে।

এয়ার চায়নার একটি বিমানে ১০ জুন সিঙ্গাপুর পৌঁছান কিম জং উন। এরইমধ্যে ট্রাম্পও পৌঁছেছেন সিঙ্গাপুরে। আগামীকাল প্রথমবারের মতো বৈঠকে বসবেন যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার দুই সর্বোচ্চ নেতা।

সূত্র: সিএনএন

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর