সোমবার, ১৬ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

বাংলাদেশ প্রতিদিনের জন্য শুভকামনা

ইমদাদুল হক মিলন, সম্পাদক, কালের কণ্ঠ

বাংলাদেশ প্রতিদিনের জন্য শুভকামনা

পৃথিবীর যে প্রান্তে যত বাঙালি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে তাদের প্রত্যেকের কাছে কোনো না কোনোভাবে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ প্রতিদিন

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজামকে চিনি পঁয়ত্রিশ/ছত্রিশ বছর হবে। আমি যখন লেখালেখির জগতে দাঁড়াবার চেষ্টা করছি, পায়ের তলার মাটি শক্ত করবার চেষ্টা করছি সে সময় টগবগে এই তরুণের সঙ্গে আমার পরিচয়। সে সাংবাদিকতার জগতে ঢুকেছে, ছাত্ররাজনীতি করছে, মাথায় চমৎকার সব আইডিয়া নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। গল্পও লিখল কয়েকটি। তখনকার অত্যন্ত জনপ্রিয় দৈনিক সংবাদে তার গল্প ছাপাও হলো। তখন থেকে অত্যন্ত রাজনীতিসচেতন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক, বঙ্গবন্ধুকন্যার স্নেহের পাত্র। প্রিন্ট মিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকা অবস্থাতেই ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত হলো। সেখানেও রাখল সে তার মেধার পরিচয়। আমার গেন্ডারিয়া ফ্ল্যাটে প্রায়ই যেত। বহু সন্ধ্যা তার সঙ্গে আমি কাটিয়েছি। জীবনের অনেক সুখ-দুঃখের স্মৃতির সঙ্গে নঈম জড়িয়ে আছে। একবার সে তার এলাকা থেকে নির্বাচন করার কথা ভেবেছিল। এক বিকালে তার এলাকায় আমাকে নিয়েও গিয়েছিল। কুড়ি-পঁচিশ বছর আগের কথা। তখনই দেখি সে তার এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয়। তার নেতৃত্বগুণ অসাধারণ। মানুষের প্রতি মমত্ববোধ, দায়িত্বশীলতা এবং বিপদে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়ানো নঈম কর্তব্য মনে করে এবং সেভাবেই জীবন পরিচালনা করছে। বয়সে আমার চেয়ে অনেক ছোট তার পরও আমি তাকে আমার একজন অভিভাবক মনে করি।

কালের কণ্ঠের সঙ্গে আমার যুক্ত হওয়ার পেছনেও আছে নঈমের বিশাল অবদান। কালের কণ্ঠ প্রকাশের প্রস্তুতি চলছে। ২০০৯ সালের কথা। বসুন্ধরা সিটির আন্ডারগ্রাউন্ডে রাজকীয় অফিস। আবেদ খান এবং মুস্তাফিজ শফি চাইছেন আমি এই পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হই। পরামর্শের জন্য ফোন করলাম নঈমকে। সে এক মুহূর্তও দেরি না করে বলল, ‘নির্দ্বিধায় জয়েন করুন। মালিকপক্ষের সঙ্গে নানা কাজে আমি যুক্ত। পত্রিকার পরিকল্পনা সম্পর্কেও আমার সব জানা। আপনি জয়েন করুন।’ তারপর এই এত দূর হেঁটে আসা। আমার আজকের এই জীবনের জন্য আমি নঈমের কাছে বিশালভাবে কৃতজ্ঞ, বিশালভাবে ঋণী। এ ধরনের ঋণ কখনো শোধ করা যায় না। নঈমের ঋণও কখনো শোধ করা হবে না। ভালোবাসার ঋণ ভালোবাসা দিয়েই শোধ করতে হয়। আমি নঈমকে খুবই ভালোবাসি।

কালের কণ্ঠ প্রকাশের কিছু দিন পরই প্রকাশিত হলো ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’। নঈমের হাত ধরেই প্রকাশিত হলো। তবে শুরুতেই নঈম সম্পাদক ছিল না। নিজে সম্পাদক না হয়ে শাহজাহান সরদারকে সম্পাদক হিসেবে নিয়ে এলো নঈম। একটা সময় শাহজাহান সরদার চলে গেলেন। প্রায় কাছাকাছি সময়ে আবেদ খানও চলে গেলেন কালের কণ্ঠ ছেড়ে। কয়েক দিন আগে পরে বসুন্ধরা গ্রুপের মাননীয় চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব সায়েম সোবহান আনভীর নঈম নিজাম এবং আমাকে সম্পাদক নিযুক্ত করলেন। নতুন আঙ্গিকে যাত্রা করল বাংলাদেশ প্রতিদিন ও কালের কণ্ঠ। একই হাউসের দুটো বাংলা কাগজ। বাংলাদেশ প্রতিদিন ১২ পৃষ্ঠার, কালের কণ্ঠ ২৪ পৃষ্ঠার। একটার দাম পাঁচ টাকা আরেকটা দশ টাকা। পত্রিকা দুটোর চরিত্রও আলাদা ধরনের। নঈম নিজাম তার মেধা, কর্মদক্ষতা ও মননশীলতা দিয়ে প্রায় রাতারাতি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে নিয়ে গেল। ১২ পৃষ্ঠার কাগজে ঠেসে দিতে শুরু করল সংবাদ আর সংবাদ। কোনো সংবাদ বাদ যায় না কাগজ থেকে। ছোট ছোট সংবাদে পরিপূর্ণ বাংলাদেশ প্রতিদিন। মানুষ লুফে নিল কাগজ। পাশাপাশি এমন সব বিজ্ঞজনের কলাম ছাপতে শুরু করল, সব মিলিয়ে বাংলাদেশের সংবাদপত্র জগৎ তোলপাড় করে দিল বাংলাদেশ প্রতিদিন। বহু দুঃসাহসী প্রতিবেদন ছেপে বাংলাদেশ প্রতিদিন আসন গেড়ে বসল দেশের পাঠক-অন্তরে। নঈম বুঝেছিল আজকের পৃথিবীতে এত সময় নেই মানুষের, যে সাবেকি আমলের মতো দীর্ঘক্ষণ ধরে খবরের কাগজ পড়বে। এখন অতি অল্প সময়ে কীভাবে মানুষের মনে সংবাদ গেঁথে দেওয়া যায় সে পথ উদ্ভাবন করল সে। নঈমের কল্যাণেই আজ বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দৈনিক ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’। এখন আমেরিকা ও ইংল্যান্ড থেকে প্রকাশিত হচ্ছে এই পত্রিকা। পৃথিবীর যে প্রান্তে যত বাঙালি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে তাদের প্রত্যেকের কাছে কোনো না কোনোভাবে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ প্রতিদিন। এই কৃতিত্ব সর্বান্তঃকরণে নঈম নিজামের।

দেশের বৃহত্তম শিল্প পরিবার বসুন্ধরা গ্রুপের মিডিয়া উইং ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ। ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ এ মুহূর্তে দেশের বৃহত্তম মিডিয়া হাউস। তিনটি দৈনিক পত্রিকা- কালের কণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন ও ডেইলি সান। একটি নিউজ পোর্টাল ‘বাংলানিউজ২৪.কম’, একটি এফএম রেডিও- ‘রেডিও ক্যাপিটাল’ এবং দুটি টেলিভিশন- ‘নিউজ টুয়েন্টি ফোর’ ও ‘তিতাস টিভি’। তিতাস এখনো যাত্রা করেনি। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই টিভি দর্শকরা পরিচিত হবেন এই চ্যানেলের সঙ্গে। চ্যানেলটি হতে যাচ্ছে স্পোর্টস চ্যানেল।

বাংলাদেশ প্রতিদিন ১১ বছরে পদার্পণ করল। সংবাদপত্র জগতের জন্য এ এক বিরাট সংবাদ। বিরাট সংবাদ এ কারণে যে, এখনো প্রতিদিন বাংলাদেশ প্রতিদিনের সার্কুলেশন বেড়েই চলেছে। যেখানে এক অর্থে শুরু হয়েছে প্রিন্ট মিডিয়ার দুর্দিন সেখানে বাংলাদেশ প্রতিদিনের এ অগ্রযাত্রা বিস্ময়কর। বাংলাদেশ প্রতিদিনের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক। নঈম নিজামের মেধার আলোয় আরও আলোকিত হয়ে উঠুক পত্রিকাটি। এই আমার প্রার্থনা। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে যুক্ত সবাইকে অভিনন্দন।

সর্বশেষ খবর