শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

অব্যবস্থাপনায় ময়লার ভাগাড় ঢাকা

জান্নাতুন নূর

অব্যবস্থাপনায় ময়লার ভাগাড় ঢাকা

রাজধানীর কুড়িল-বিশ্বরোড ফ্লাইওভার থেকে নেমে ৩০০ ফুট সড়কের শুরুতেই একটি ময়লার ভাগাড় গড়ে তোলা হয়েছে ছবি : জয়ীতা রায়

রাজধানীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বেহালদশার কারণে প্রতিনিয়ত পথ চলতে গিয়ে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে। বর্জ্য অপসারণের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ঢাকা সিটি করপোরেশন কার্যকর ভূমিকা রাখতে না পারায় পুরো শহরই এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে সিটি করপোরেশনের নির্দিষ্ট ময়লা ফেলার স্থান না থাকায় বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়ি থেকে ময়লাবাহী ভ্যানগাড়ি চালকরা ময়লা সংগ্রহ করে তা প্রধান সড়কের পাশে, কিছু আবাসিক এলাকায় বাড়িঘরের পাশে, বাসস্ট্যান্ডে, বাজারে, হাসপাতালে এমনকি স্কুলের সামনের খালি জায়গাতেও ফেলছেন। এর ফলে নগরবাসী স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন। দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। কিন্তু দীর্ঘদিনের এই বেহাল দশা থেকে ঢাকাবাসীকে বাঁচাতে পারছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কারণ হিসেবে সিটি করপোরেশন ময়লা ফেলার জায়গা জটিলতা ও জনবল স্বল্পতাকে দায়ী করে।

দুই সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, নগরীতে প্রতিদিন প্রায় চার হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য উত্পাদন হচ্ছে। বর্জ্য অপসারণে পর্যাপ্ত জনবল ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি না থাকায় সঠিকভাবে শহরের বর্জ্য অপসারণ করা যাচ্ছে না। উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপক ক্যাপ্টেন বিপন কুমার সাহা বলেন, আমাদের প্রধান সমস্যা হচ্ছে অপ্রতুল জনবল। এত স্বল্প জনবল দিয়ে নিয়মিত বিপুল ময়লা পরিষ্কার করা অসম্ভব। রাজধানীর কুড়িল-বিশ্বরোড ফ্লাইওভার থেকে নেমে ৩০০ ফুট সড়কের শুরুতেই একটি ময়লার ভাগাড় গড়ে তোলা হয়েছে। এতে এই এলাকার সামনে দিয়ে চলাচলকারী পথচারীদের কটু দুর্গন্ধ সহ্য করতে হয়। অবস্থা এতই খারাপ যে, উত্তর সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী ট্রাকগুলো প্রতিদিন যখন ময়লা বহন করে নিয়ে যায় তখন বেশ কয়েক ঘণ্টা সে এলাকার বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে থাকে। এ ছাড়া ট্রাকগুলো থেকে ময়লা বহনের সময় প্রতিদিনই রাস্তায় ময়লা পড়া স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নগরীর পুরান ঢাকা, যাত্রাবাড়ী, কলাবাগান, রামপুরা, মালিবাগ, মৌচাক, সিদ্ধেশ্বরী, খিলগাঁও, বাসাবো, গ্রিনরোড, কাঁঠালবাগান, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, ধোলাইখাল, বাড্ডা ও নতুনবাজারে রাস্তার উপরই যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখা হচ্ছে। এতে আশপাশে তীব্র দুর্গন্ধে পথচারীদের যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু হাসপাতাল ও মোহাম্মদপুর ফার্টিলিটি সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের প্রবেশমুখেই সিটি করপোরেশনের ময়লা স্থানান্তর কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। রোগী ও পথচারীদের দুর্ভোগের কারণে বহুদিন ধরেই এই হাসপাতালটির সামনে থেকে ময়লা-আবর্জনা সরিয়ে নিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা চাইলেও ময়লা স্থানান্তর কেন্দ্রটি সরিয়ে নেওয়ার কোনো উদ্যোগ হচ্ছে না। উত্তর সিটি করপোরেশনের অঞ্চল ৫-এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, হাসপাতালের সামনে ময়লা রাখার বিষয়টি অত্যন্ত বিব্রতকর। কিন্তু স্থান না থাকায় অনেকটা বাধ্য হয়ে করপোরেশন এখানে ময়লা রাখছে। তিনি বলেন, আশা করছি আগামী ছয় মাসের মধ্যে আমরা হাসপাতাল ও বাজারের সামনে থেকে সব ময়লা স্থানান্তর কেন্দ্রগুলো সরিয়ে নিতে পারব। পরিবেশবাদী সংগঠন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) তথ্যে, ঢাকা শহরের গৃহস্থালি ময়লা-আবর্জনাসহ অন্যান্য বর্জ্যের ৬০ শতাংশ সরানোর দায়িত্ব পালন করে সিটি করপোরেশন। বাকি ৪০% প্রতিষ্ঠানটি জনবল স্বল্পতাসহ নানাবিধ কারণে সরাতে অক্ষম। আর এ ময়লাগুলো পরবর্তীতে সেই নির্দিষ্ট এলাকার পার্শ্ববর্তী ড্রেন ও নালা-নর্দমায় পড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে। পরিবেশ সংগঠনগুলোর আরও অভিযোগ এই যে, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলো সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা মেনে চলছে না। জরিপে দেখা যায়, এসব প্রতিষ্ঠানের ৯০ শতাংশ বর্জ্যই রাস্তার ওপর খোলা ডাস্টবিন, নর্দমা বা আশপাশের ডোবা-নদীতে ফেলা হচ্ছে। আর চিকিত্সা বর্জ্যগুলোর মধ্যে আছে রোগীর ব্যবহূত সুই, সিরিঞ্জ, রক্ত ও পুঁজযুক্ত তুলা, গজ, ব্যান্ডেজ, মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, ওষুধের ব্যবহূত শিশি, ব্যবহূত স্যালাইনের প্যাকেট, টিউমার, রক্তের ব্যাগ, রাসায়নিক দ্রব্যসহ বিভিন্ন ধরনের চিকিত্সাজাত ময়লা-আবর্জনা। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে যেখানে-সেখানে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। ফলে পুরো শহরই ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, গৃহস্থালি বর্জ্যের পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম ক্ষতিকর ও ঝুঁকিপূর্ণ হাসপাতাল বর্জ্যও একই সঙ্গে ফেলা হচ্ছে। এগুলো সাধারণ বর্জ্যের সঙ্গে মিশে সংক্রামক ও ক্ষতিকর বর্জ্যে পরিণত হচ্ছে। এর ফলে ছড়িয়ে পড়ছে হেপাটাইটিস ‘বি’, হেপাটাইটিস ‘সি’, যক্ষ্মা, ডিপথেরিয়ার মতো রোগ।

সর্বশেষ খবর