মঙ্গলবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

কুমিল্লায় দখল হয়ে যাচ্ছে পুরাতন গোমতী

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

কুমিল্লায় দখল হয়ে যাচ্ছে পুরাতন গোমতী

দখল হয়ে যাচ্ছে কুমিল্লা নগরীর পুরাতন গোমতী নদী

কুমিল্লার পুরাতন গোমতী নদীর অধিকাংশ প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেছে। দখল হওয়া নদীর এ বিশাল এলাকাজুড়ে সরকারি জমিতে নির্মিত হয়েছে দোকানপাট ও বহুতল ভবন। নদীর বাকি অংশে সুয়ারেজ লাইন এবং আবর্জনা ফেলায় তা মরা খালে পরিণত হচ্ছে। নদীটি দখলমুক্ত করে এখানে বিনোদন পার্ক করা যেতে পারে। এতে বাড়বে নগরীর সৌন্দর্য। সূত্র মতে, বর্তমানে প্রভাবশালী দখলদারদের ৭৭২ জনের তালিকা করা হয়েছে। তবে গত এক যুগ ধরে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করার জন্য প্রশাসন থেকে পদক্ষেপ নিলেও রাজনৈতিক এবং বিভিন্ন কারণে আজও তা কার্যকর হয়নি। হালনাগাদ তালিকা অনুযায়ী ২৫৮.৭৪ একর স্থানে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে এমন খবর জেনে দখলদাররা অভিযান ঠেকাতে তদবির অব্যাহত রেখেছে।

গোমতী নদী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিবিরবাজার সীমান্ত দিয়ে কুমিল্লা জেলায় প্রবেশ করে। শহর রক্ষার জন্য এ নদীর গতিপথ পরিবর্তন করা হলে শহরের উত্তর প্রান্তে কাপ্তানবাজার থেকে শুভপুর পর্যন্ত দীর্ঘ নদীটি পুরাতন গোমতী নদী নামে পরিচিতি লাভ করে। এরপর থেকে স্থানীয় প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে দখল করে নির্মাণ করে বাড়িঘর ও দোকানপাট। কেউ কেউ প্রশাসনের যোগসাজশে বহুতল ভবনও নির্মাণ করেছে।

সূত্র জানায়, শুভপুর, চাঁনপুর, সুজানগর, গাংচর, টিক্কারচর, গয়ামবাগিচা, মোগলটুলী (শাহসুজা মসজিদ রোড), পুরাতন চৌধুরীপাড়া, কাপ্তানবাজার, ভাটপাড়া, বিষ্ণপুর ও বজ্রপুর এলাকার মধ্যে পুরাতন গোমতীর দুই পাড়ের প্রায় ২শ’ একর সরকারি জমি অবৈধ দখলদারদের কবলে রয়েছে। এর মধ্যে ৫২২ জন অবৈধ দখলদারের তালিকা করা হয়েছে। ২০০৩ সাল থেকে এসব অবৈধ দখলদারকে ৮-৯ বার উচ্ছেদ নোটিস দেওয়া হয়। দখলদারদের মধ্যে রাজনৈতিক প্রভাবশালী নেতা থাকায় উচ্ছেদ কার্যক্রমে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি জেলা প্রশাসন। আদর্শ সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. শামীম হোসেন গত বছরের ১৮ জানুয়ারি অবৈধ দখলীয় খাস জমি ও জলাভূমির তথ্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) কাছে পাঠান। ওই তথ্যে অবৈধ দখলীয় কৃষি জমির পরিমাণ ১৫৬.৭৪ একর, অবৈধ দখলীয় অকৃষি খাস জমির পরিমাণ ১০২ একর উল্লেখ করে ওই জমি অবৈধ দখলদারমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উত্তর প্রান্তে শুভপুর এবং দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে চকবাজার হয়ে টিক্কারচর শ্মশানঘাট পর্যন্ত গোমতী নদীর পূর্ব প্রান্তে টিক্কারচর সুইপার কলোনির পর থেকে শ্মশান ঘাট পর্যন্ত বিশাল অংশজুড়ে নদীর পাড় দখলের সঙ্গে নদীর অংশও দখলে নিয়ে অবৈধভাবে শতাধিক ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন কুমিল্লার সভাপতি ডা. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, নদীটি দখলমুক্ত করে এখানে বিনোদন পার্ক করা যেতে পারে। নদীটি রক্ষায় আমরা ইতিমধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছি। জেলা প্রশাসক ও সিটি মেয়রকে স্মারকলিপি দিয়েছি। কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল বলেন, পুরাতন গোমতী দখলমুক্ত করতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (রাজস্ব) প্রধান করে একটি কমিটি গঠিত হয়েছে। এ ছাড়া সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে সিটি মেয়র সাহেবের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর