নগরজীবনে সবুজের ছোঁয়াও অনেকটাই অধরা। এখানে সবুজের চর্চা, চাষ বা নির্মাণ-কোনোটাই হয় না। আছে ইট-পাথরের কোলাহল, সরু, অন্ধকার গলি-ঘুপসির আর্তনাদ। ফুলের সৌরভের পরিবর্তে আছে দুর্গন্ধময় ময়লার ভাগাড়, নর্দমা আর কালো ধোঁয়ার যন্ত্রণায় বসবাস রাজধানীবাসীর। দারিদ্র্যের সঙ্গে হাত ধরে চলে দূষণ। বাংলাদেশ এখন দারিদ্র্যের অভিশাপমুক্তির পথে এগোচ্ছে। তাই দূষণমুক্ত সবুজ নগরীর প্রত্যাশা নিয়ে কাজ শুরু করেছেন নগরীর দুই মেয়র। ঢাকাকে সবুজ নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে ফুট ওভারব্রিজগুলোর ওপর ইতিমধ্যে লাগানো হয়েছে ফুলের গাছ। উত্তর ও দক্ষিণ দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক এবং মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ‘ক্লিন ঢাকা গ্রিন ঢাকা’ পূরণের লক্ষ্যে এ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। তখন পরিবেশবিদরা বলছিলেন, শুধু ফুট ওভারব্রিজই নয়, সবুজায়নের জন্য ব্যাপকভিত্তিক উদ্যোগ প্রয়োজন। এখন সবুজ নগরী গড়ে তোলার জন্য বাসাবাড়ির ছাদে বা রাস্তার পাশে গাছ লাগাতে উদ্বুদ্ধ করছেন দুই মেয়র। এমনকি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন ঘোষণা দিয়েছেন, যেসব বাড়ির ছাদে, বারান্দায় বা আঙ্গিনায় বাগান গড়ে তোলা হবে, সেসব মালিকের হোল্ডিং থেকে ১০ শতাংশ ট্যাক্স মওকুফ করা হবে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, বাসার ছাদের ওপর গাছ, শাকসবজি, ফুল-ফলসহ বিভিন্ন ধরনের দেশি-বিদেশি গাছের বাগান গড়ে তুলছেন বাসিন্দারা। বাড়ির গৃহিণীরা যেমন করছেন, বিভিন্ন পেশাজীবীও অবসরে এ ধরনের বাগানে সময় দিচ্ছেন। ফলে সবুজের পথে ছুটছে নগরী। ঢাকার মালিবাগ এলাকার বাসিন্দা লায়লা আহমেদ। আড়াই কাঠা জমির ওপর নির্মিত তাদের ছয় তলা ভবনের ছাদটিতে উঠলেই গাছ আর গাছ। টব এবং ড্রামে লাগানো ৩০০ ধরনের প্রায় দুই হাজার গাছ আছে। লায়লা আহমেদ ছাদে বাগান করছেন ১৫ বছর ধরে। শখের বাগান গড়ে তুললেও এখান থেকে আয় রোজগারেরও উপায় রয়েছে, জানান লায়লা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, আমরা ঢাকা শহরকে সবুজ দেখতে চাই। আমরা ঢাকাকে ‘গ্রিন সিটি ক্লিন সিটি’ করতে চাই। এজন্য বাড়ির ছাদে বা বারান্দায় কিংবা আঙ্গিনায় বাগান করলে ১০ শতাংশ পর্যন্ত হোল্ডিং ট্যাক্স ছাড় দেওয়া হবে। তিনি বলেন, যেভাবে জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে, তাতে পরিকল্পিত সবুজ ঢাকা গড়তে এর বিকল্প নেই। মেয়রদের পাশাপাশি সবুজ নগরী গড়তে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন ওয়ার্ড কাউন্সিলররাও। তারা স্থানীয় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে জনসচেতনতা বাড়াচ্ছেন। তেমনি দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এক নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. ওয়াহিদুল ইসলাম মিল্টন নিজ এলাকা খিলগাঁওয়ের সব শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বৈঠক করেছেন। সবুজ নগরী গড়ে তুলতে তিনি নিজ উদ্যোগেও গাছ বিতরণসহ উদ্যোক্তাদের সহায়তা করছেন, নিজ এলাকায় শুরু করেছেন বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি।