মঙ্গলবার, ১২ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

রাজধানীজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা

মির্জা মেহেদী তমাল

রাজধানীজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা

রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে চলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তল্লাশি। বেড়েছে নিরাপত্তা টহল ছবি— জয়ীতা রায়

গুলশান হামলার পর থেকে রাজধানীজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। র‌্যাব-পুলিশের পাশাপাশি কূটনৈতিক এলাকা গুলশান বারিধারায় বিজিবি সদস্যরাও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন। এ ছাড়া বিদেশিদের নিরাপত্তায় পুলিশের বিশেষ টিম কাজ করছে নগরজুড়ে। রাজধানীর মোড়ে মোড়ে ও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বসানো হয়েছে র‌্যাব-পুলিশের চেকপোস্ট। পুলিশকে সহযোগিতা করতে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন-এপিবিএন ও আনসার বাহিনীকেও মাঠে নামানো হয়েছে। গুলশানের প্রবেশপথে মহাখালী, বনানী, সংসদ ভবন ও এর আশপাশ এলাকাসহ পুরো মহানগরীতে তিন শতাধিক চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এ ছাড়া মহানগরীর প্রবেশপথ গাবতলী, উত্তরা, আবদুল্লাহপুর ও যাত্রাবাড়ী এলাকাতে চেকপোস্টের পাশাপাশি অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সদরঘাট ও কমলাপুর রেলস্টেশনেও নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, মহানগরীতে পর্যায়ক্রমে ১০ হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য এবং কয়েক হাজার র‌্যাব সদস্য সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, পুরো মহানগরী এখন আমাদের নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে। সিসি ক্যামেরায় সবকিছু মনিটরিং করা হচ্ছে। তিনি বলেন, মন্ত্রী পাড়া, কূটনৈতিক পাড়া এগুলো স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। সব সময়ই সেখানে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে। এসব এলাকায় ভিআইপিদের বসবাস। তাই নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, মূলত রাজধানী জুড়েই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ বলেন, আমরা শুধু রাজধানী নয়, দেশব্যাপীই নিরাপত্তা জোরদার করেছি। র‌্যাবের প্রতিটি সদস্য সার্বক্ষণিক দায়িত্বে নিয়োজিত আছে। নাশকতা ও জঙ্গি তত্পরতা রোধে আমাদের গোয়েন্দা কার্যক্রম ব্যাপক হারে বাড়ানো হয়েছে। রাজধানীর মোড়ে মোড়ে র‌্যাবের টহল জোরদার করা হয়েছে। আছে গোয়েন্দা টিম। পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, গুলশান হামলার পর জঙ্গি হামলা ও নাশকতা রোধে শুধু পোশাকধারী নয়, সাদা পোশাকেও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা কড়া নজরদারিতে রেখেছেন। মন্ত্রী পাড়া ও আশপাশ এলাকায় অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

গত শুক্রবার দুপুর থেকে হোটেল শেরাটন এলাকা, রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন, গোয়েন্দা কার্যালয় ও ইস্কাটনের সামনে দিয়ে মিন্টো রোডে প্রবেশের প্রতিটি রাস্তায় যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এ ছাড়া গুলশানের প্রতিটি রাস্তায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।

জানা গেছে, এসব এলাকার বিভিন্ন প্রবেশমুখে ব্যারিকেড বসিয়ে যানবাহনে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। প্রাইভেট কার, সিএনজিচালিত ট্যাক্সিক্যাব ও মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য যানবাহনকে ভিন্ন রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পায়ে হেঁটে যারা এসব রাস্তায় ঢুকছেন তাদেরও তল্লাশি করে তারপর ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। হঠাৎ একসঙ্গে বেশকিছু প্রবেশপথে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রিত করায় ঈদের ছুটিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে বের হয়ে বহু মানুষকে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে। অনেকটা পথ ঘুরে তবেই গন্তব্যে যেতে পারছেন তারা।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, পুরো রাজধানীতে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে। প্রায় ১০ হাজার পুলিশ সদস্য সার্বক্ষণিক দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। রাজধানীর মন্ত্রী পাড়ায়, কূটনৈতিক পাড়ায় এবং সংসদ ভবন এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। মন্ত্রী পাড়া হিসেবে পরিচিত রাজধানীর মিন্টো রোডে, বেইলি রোড ও হেয়ার রোড এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় গ্রহণ করা হয়েছে। এসব এলাকা সিসি ক্যামেরায় সন্দেহভাজনদের গতিবিধি মনিটরিং করা হচ্ছে। গুলশানের ঘটনার পর থেকে মিন্টো রোড ও আশপাশের প্রবেশ পথে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও অন্যান্য ভিভিআইপিদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে এ পথে যানবাহন চলাচল একেবারে বন্ধ হয়নি বলে তিনি জানান। গুলশান জোনের একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ বিরতিহীন দায়িত্ব পালন করছে। পুলিশের সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে ঈদের আগেই। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও পুলিশ কাজ করছে।

সর্বশেষ খবর