বুধবার, ২০ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে বেহাল সড়কে নাভিশ্বাস

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে বেহাল সড়কে নাভিশ্বাস

উড়াল সেতু নির্মাণে সংকুচিত হয় সড়কটি। ফলে যান চলাচলে এমনিতেই বিঘ্ন ঘটছে। কিন্তু অবশিষ্ট সড়কও গর্ত ও খানাখন্দে ভরা। এ কারণে দীর্ঘক্ষণ ধরে যানজট লেগেই থাকে এ সড়কে। নগরীর বহদ্দারহাট থেকে শাহ্ আমানত সেতু পর্যন্ত সড়কটির অবস্থা অত্যন্ত বেহাল। আছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। ভাঙাচোরা গর্তে বারবার থেমে যায় যানবাহনের চাকা।

চট্টগ্রাম মহানগরের অধিকাংশ প্রধান সড়ক বেহাল। শোচনীয় অবস্থায় আছে নগরের অভ্যন্তরীণ সড়ক উপ-সড়কগুলোও। ছোট-বড় গর্ত ও খানা-খন্দ সৃষ্টি হওয়া, বিটুমিন উঠে যাওয়া, কংক্রিটের সড়কে ঢালাই উঠে যাওয়ায় সড়কে বিঘ্ন হচ্ছে স্বাভাবিক যান চলাচল। যাতায়াতে নাভিশ্বাস উঠেছে। 

নগরবাসীর অভিযোগ, নিম্নমানের উপকরণ ও যথাযথভাবে কাজ না করার ফলে বছর না ঘুরতেই সড়কের অবস্থা বেহাল হয়। এতে যেমন টাকা গচ্চা যায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক), তেমনি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রী ও পথচারীদের। সঙ্গে বেহাল সড়কে নিত্য সঙ্গী হয় যানজট।  চসিকের ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরে বাজেট থেকে জানা যায়, চসিক সড়ক, নর্দমা, কাটা রাস্তা মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ২০ কোটি টাকা। তাছাড়া এডিপির আওতায় বিভিন্ন রাস্তা অ্যাসপল্ট প্লান্টের মাধ্যমে উন্নয়নে ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয়েছিল আরও ৫০ কোটি টাকা। অন্যদিকে, ওয়াসা নগরীতে পাইপ লাইন স্থাপনের জন্য বিভিন্ন সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করে। আর তা সংস্কারের জন্য চসিককে কয়েক দফায় ৩০ কোটি টাকা দেওয়ার কথা। ইতিমধ্যে প্রায় ৫ কোটি টাকা পরিশোধ করে বলেও জানা যায়। কিন্তু তারপরও নগরের সড়কগুলোর বেহাল দশা বলে অভিযোগ। 

চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, প্রকৌশল বিভাগ ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের সংস্কার কাজ শুরু করেছে। ৫টি টিম পৃথকভাবে কাজ করছে। কেবল সংস্কার কাজের জন্য আড়াইশ শ্রমিক নিয়মিত কাজ করছে। আমাদের নিজস্ব অ্যাসপল্ট প্লান্ট থেকে দৈনিক ৭টি গাড়ি হট মিক্স দিয়ে সড়কের সংস্কার কাজ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, পুরো শহরেই মাঝে-মধ্যে খানা-খন্দ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে আলাদা করে কত কিলোমিটার তা নির্ণয় করা কঠিন। তবে যেখানেই খানাখন্দ বা গর্ত দেখা যাচ্ছে সেখানেই সংস্কার করা হচ্ছে। বৃষ্টি না হলে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সড়কগুলো ব্যবহার উপযোগী করা হবে।  

বর্তমানে চসিকের ৪১ ওয়ার্ডে মোট সড়ক আছে এক হাজার ৪৯ দশমিক ২২ কিলোমিটার। এর মধ্যে পিচ ঢালাই সড়ক আছে ৫৫৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ৮৯১টি। কংক্রিটের আছে ২৭৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এক হাজার ২৭টি।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত চলছে উড়াল সেতু নির্মাণ কাজ। এটি নগরের মূল সড়ক হওয়ায় প্রতিনিয়তই অত্যন্ত ব্যস্ত থাকে। উড়াল সেতু নির্মাণে সংকুচিত হয় সড়কটি। ফলে যান চলাচলে এমনিতেই বিঘ্ন ঘটছে। কিন্তু অবশিষ্ট সড়কও গর্ত ও খানাখন্দে ভরা। এ কারণে দীর্ঘক্ষণ ধরে যানজট লেগেই থাকে এ সড়কে। নগরীর বহদ্দারহাট থেকে শাহ্ আমানত সেতু পর্যন্ত সড়কটির অবস্থা অত্যন্ত বেহাল। আছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। ভাঙাচোরা গর্তে বারবার থেমে যায় যানবাহনের চাকা। কর্ণফুলী নদী তীরবর্তী মেরিনার্স সড়কের প্রায় পুরো অংশেই উঠে গেছে কংক্রিট। কোতোয়ালি মোড় থেকে পাথরঘাটা-চামড়া গুদাম হয়ে শাহ্ আমানত সেতু মোড় পর্যন্ত সড়কটির অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। ঢেউ খেলে ছোট যানবাহন। ষোলশহর ২নং গেট-বায়েজিদ বোস্তামী সড়কের বিভিন্ন অংশে উঠে গেছে পিচ ঢালাই। সৃষ্টি হয়েছে গর্ত। বহদ্দারহাট-কালুরঘাট আরাকান সড়কের বিভিন্ন অংশে উঠে যায় পিচ। বহদ্দারহাট থেকে হাজির পুল পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সড়কের পুরোটায় খানাখন্দে ভরা।

আতুরার ডিপো থেকে চাইলতাতলী পর্যন্ত সড়কটির অবস্থা নাজুক। এ সড়কের অধিকাংশ অংশে কার্পেটিং উঠে গেছে। কোনো কোনো জায়গায় উঠে গেছে কংক্রিট। দেড় বছর আগে ওয়াসার পাইলাইন নিতে সড়কটি কাটা হলেও এখনো সংস্কার করা হয়নি। বহদ্দারহাট-তালতলা-ফরিদার পাড়া পর্যন্ত সড়কে আছে অসংখ্য গর্ত। অল্প বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় পানির নিচে। কাতালগঞ্জের আবদুল্লাহ বাই লেইন সড়কের বিভিন্ন অংশে আছে গর্ত। কাতালগঞ্জ দিয়ে সড়কে প্রবেশ মুখেই আছে বড় গর্ত। ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক দিয়ে যান চলে ধীর গতিতে। সৃষ্টি হয় যানজট।

সর্বশেষ খবর