বুধবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভূমি অফিস বদলে দেওয়ার গল্প

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

ভূমি অফিস বদলে দেওয়ার গল্প

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার কুমিরার কোর্টপাড়ার অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা কবির আহমদ ১৯৯৩ সালে ১৭ শতক খাস জমি বন্দোবস্ত পান। বন্দোবস্ত মামলামূলে তার নামে খতিয়ান হয় ওই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর। কিন্তু অনেক চেষ্টার পরও খতিয়ান হাতে পাননি। ২৪ বছর পর গত ৫ জুলাই মাত্র ১০ মিনিটে হাতে পান খতিয়ান। তিনি ‘ভূমি অফিসে সেবা প্রাপ্তিতে আমার প্রতিক্রিয়া’ শীর্ষক খাতায় লিখেন, ‘গত ২৪ বছরে ধরে আমার নামে ভূমি অফিস থেকে যে ১৭ শতক জায়গা দেওয়া হয়েছিল সেই খাস জমির খতিয়ান রূহুল আমীনের কল্যাণে মাত্র ১০ মিনিটে পেলাম।

আমার কাছে মনে হচ্ছে এটি সম্পূর্ণ অলীক ব্যাপার। ভূমি অফিসে সচরাচর যা দেখা যায় না তাই আজ আমি দেখলাম।’ ভূমি অফিস নিয়ে সাধারণ মানুষের অভিযোগ অন্তহীন। ভুক্তভোগীদের কাছে ভূমি অফিসগুলো অনেকটাই অলিখিতভাবে ‘হয়রানির কেন্দ্র’ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু নেতিবাচকতার এই ধারার আমূল পরিবর্তন করতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সীতাকুণ্ড উপজেলা ভূমি অফিসে। মুহাম্মদ রূহুল আমীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে গত বছরের ১৩ জুলাই যোগ দেওয়ার পর থেকে শুরু হয় এই বদলে দেওয়ার গল্প। ‘ভূমি অফিসে হয়রানি রোধে, সচেতন করার দায়িত্ব নেব কাঁধে’ শীর্ষক স্লোগানে বদলে দেওয়ার গল্পের সর্বশেষ সংযোজন ছিল মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবাসীদের সেবায় খোলা হয়েছে ‘মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক’। এর আগে ভূমি সংক্রান্ত নানা ফি’র তালিকা উপজেলার সব বাজারে লিফলেট আকারে ছাড়া, দ্রুত সেবা দিতে দৈনিক ১০টা থেকে ৫টা পর্যন্ত গণশুনানি, গড়ে ৭০ জনের সঙ্গে কথা বলে সমস্যার সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়। 

সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ রূহুল আমীন বলেন, উপজেলায় ভূমি নিয়ে ভুক্তভোগী মানুষের জন্য কিছু করা চেষ্টা করছি। ভূমি অফিসকেন্দ্রিক দালালরা আমার ওপর ক্ষুব্ধ হলেও উপজেলার জনগণ অনেক খুশি। কোনো কাজে কাউকে প্রয়োজনীয় সময়ের বাইরে এক সেকেন্ডও অপেক্ষা করতে হয় না। কোনো সেবাপ্রত্যাশী এই ভূমি অফিসে ভোগান্তিতে পরবে না, এটিই আমার অঙ্গীকার। জানা যায়, ১৩ জুলাই ২০১৬ থেকে ১৩ জুলাই ২০১৭ পর্যন্ত নামজারির আবেদন জমা হয় সীতাকুণ্ড ভূমি অফিসে ৫ হাজার ৬৮৭টি। পূর্ববর্তীগুলোসহ এ সময় নামজারি নিষ্পত্তি হয় ৬ হাজার ৮৯৩টি। নিষ্পত্তির হার ৭৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ। মামলা নিষ্পত্তি করে সরকারি রাজস্ব আদায় হয় ৬০ লাখ ৩৫ হাজার ২০০ টাকা। গত অর্থবছরে অর্পিত সম্পত্তি থেকে দাবিকৃত ১১ লাখ ৭ হাজার ৫৯৬ টাকা রাজস্বের মধ্যে ৮ লাখ ৩১ হাজার ৮৯৫ টাকা আদায় হয়। আগের অর্থবছরে আদায় হয় ২ লাখ ১৯ হাজার ১৮৬ টাকা। গত অর্থবছরে ১২৭টি একসনা জাহাজের বিভাজন মামলা নবায়নপূর্বক ৯৪ লাখ ২৩ হাজার ৬৬৭ টাকা রাজস্ব আদায় হয়। সংস্থা খাতে দাবিকৃত ৩২ কোটি ৯৩ লাখ ৩২ হাজার টাকা রাজস্বের বিপরীতে আদায় করা হয় ১৭ কোটি ৪৯ লাখ ৩৩ হাজার ১৪১ টাকা।

সর্বশেষ খবর