মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

ফুটপাথজুড়ে পুলিশ বক্স

আলী আজম ও জয়শ্রী ভাদুড়ী

ফুটপাথজুড়ে পুলিশ বক্স

ফার্মগেটের ফুটপাথে বেহাল পুলিশ বক্স ছবি : জয়ীতা রায়

রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে চোখে পড়ে রঙিন টিন ও স্টিল দিয়ে ঘেরা চারকোনা পুলিশ বক্স। অধিকাংশ বক্সেই ঝুলছে বিজ্ঞাপন। বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য আছে যোগাযোগের নম্বরও। ফুটপাথের ওপর আধা কিলোমিটারের চেয়েও কম দূরত্বে গড়ে উঠেছে এসব বক্স। রাজধানীতে এসব পুলিশ বক্সের সঠিক সংখ্যা জানা নেই ট্রাফিক বিভাগেরও।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মীর রেজাউল আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, রাজধানীতে ট্রাফিক পুলিশের কর্মকাণ্ড সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য একাধিক ট্রাফিক পুলিশ বক্স রয়েছে। তবে সেটা কী পরিমাণ রয়েছে তা আমার জানা নেই। এ ছাড়া নতুন যোগদান করায় ট্রাফিক পুলিশ বক্স স্থাপনে কোনো নিয়মনীতি রয়েছে কিনা সে বিষয়েও জানেন না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নগরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাসহ মহল্লায়ও এমন পুলিশ বক্স রয়েছে। শাহবাগ, বাংলামোটর মোড়ের ইস্কাটন রোড, গুলশান, বনানী, মহাখালী, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ সংযোগ পয়েন্ট, সার্ক ফোয়ারা মোড়, টেকনিক্যাল মোড়, মিরপুর-১০, পান্থপথ, রাসেল স্কয়ার, আড়ং ক্রসিং, গণভবন ক্রসিং, কাকরাইল তাবলিগ মসজিদ মোড়, নীলক্ষেত এবং বনানী-কাকলী ক্রসিং, উত্তরা, যাত্রাবাড়ীতে ফুটপাথের ওপর অসংখ্য পুলিশ বক্স নির্মাণ করা হয়েছে। এসব পুলিশ বক্সে বিদ্যুৎ সংযোগ, চেয়ার-টেবিল, ফ্যান সবকিছুই রয়েছে। দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের বিশ্রামের জন্য এসব বক্স নির্মাণ করা হয়েছে। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে দায়িত্ব পালন করা পুলিশ সদস্যদের খাওয়া, বিশ্রাম এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রী রাখেন এই স্থানে। এসব পুলিশ বক্স নির্মাণ করে দিয়েছে বেশ কিছু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। পুলিশ বক্সের গায়ে ঝুলছে বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন। বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য লেখা আছে নম্বরও। এভাবে যথেচ্ছ পুলিশ বক্স নির্মাণ করায় সৌন্দর্যহানির অভিযোগ তুলেছেন নগরবাসী। ফার্মগেট এলাকার বাসিন্দা সোহেল আহমেদ বলেন, মোড়ে মোড়ে এত পুলিশ বক্স তৈরি করায় ফুটপাথের জায়গা নষ্ট হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ জায়গা চিহ্নিত করে সেখানে পুলিশ বক্স নির্মাণ করা উচিত। এসব বক্সকে কেন্দ্র করে চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাতে এসব পুলিশ বক্স থাকে অরক্ষিত। রাজধানীতে এমন অনেক পুলিশ বক্স রয়েছে যেগুলো পুলিশের কোনো কাজেই লাগে না।

এ ব্যাপারে ট্রাফিক উত্তরের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) প্রবীর কুমার রায় বলেন, ট্রাফিক পুলিশ ঝড়-ঝঞ্ঝা মাথায় নিয়ে রাস্তায় দিনরাত পরিশ্রম করে। তাদের একটু বিশ্রামের কথা চিন্তা করে এই বক্সগুলো বানানো। প্রথমদিকে কিছু নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বক্সগুলো তৈরি করে দেওয়ায় তারা বিজ্ঞাপন লাগিয়েছে। তবে নতুন করে আর কোনো বক্স তৈরি করা হচ্ছে না। পরিকল্পনা মতো দৃষ্টিনন্দন পুলিশ বক্স তৈরি করার জন্য মহানগর পুলিশকে প্রস্তাবনা দেয় দুই সিটি করপোরেশন। প্রয়োজনীয় পুলিশ বক্সের তালিকা চাওয়া হয় পুলিশের কাছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, পুলিশের তালিকা অনুযায়ী সড়ক বিভাজক ও ফুটপাথে ৭৭টি পুলিশ বক্স নতুন করে তৈরি করে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। ডিএসসিসির ৭১টি পুলিশ বক্স নির্মাণ এ প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ কোটি টাকা। গড়ে ৮-১২ ফুট প্রতিটি পুলিশ বক্সের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা। বক্সের ভিতরে ফ্যান ও বসার জায়গা থাকবে। চারপাশে গ্রিল ও থাই গ্লাস লাগানো হবে যাতে ভিতর থেকে বাইরের অবস্থা দেখা যায়। সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ছোট ছোট ফুল গাছ লাগানো হবে। এর মধ্যেই গুলিস্তানের গোলাপ শাহ মাজার এলাকায় সড়ক বিভাজকের ওপর নির্মিত নতুন একটি পুলিশ বক্সের উদ্বোধন করেছেন ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকন। এ ছাড়া বঙ্গবাজার, শিক্ষা চত্বর, কদম ফোয়ারা, কাকরাইল, রূপসী বাংলা, মিন্টো রোড, মৎস্য ভবন, এলাকায় ৭টির কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। খুব শিগগিরই সেগুলো উদ্বোধন করা হবে বলে জানা গেছে। আরও ৩০টির কাজ চলমান রয়েছে। জায়গা না পাওয়ায় বাকিগুলোর কাজ শুরু করতে পারেনি সংস্থাটি। ২০১৬ সালের জুনে শুরু হয়ে চলতি বছরের জুনে মেয়াদ শেষ হবে প্রকল্পটির। উত্তর সিটি করপোরেশনেও চলমান রয়েছে প্রকল্প।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর