মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

সরকারি প্রাইমারি স্কুল বন্ধ ১৪ মাস

শাহজাদা মিয়া আজাদ, রংপুর

সরকারি প্রাইমারি স্কুল বন্ধ ১৪ মাস

রংপুর নগরীর কামাল কাছনা পূর্ব শালবন এলাকায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৪ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। স্কুলের শিক্ষার্থীদের অনেকেই দূরের বিদ্যালয়ে যাওয়ার সামর্থ্য না থাকায় তাদের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেছে। এলাকার দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের পরিবারের সন্তানরা প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। জাতীয়করণের তিন বছরের মাথায় কল্যাণ সংসদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বন্ধ করে দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিদ্যালয়টি চালুর জন্য রংপুর বিভাগীয় ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস দেড় মাস আগে চিঠি পাঠালেও এখন পর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাড়া মিলছে না।  

জানা গেছে, ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত রংপুর সিটি করপোরেশনের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কামাল কাছনা পূর্ব শালবন বিদ্যালয়টি ২০১৩ সালে জাতীয়করণ করা হয়। বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণিতে ৩০, প্রথম শ্রেণিতে ৪০, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৫০, তৃতীয় শ্রেণিতে ৬০, চতুর্থ শ্রেণিতে ৫৬ এবং পঞ্চম শ্রেণিতে ৬০ জন ছাত্রছাত্রী পড়ালেখা করত। কিন্তু শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার অভিযোগে ২০১৬ সালের ১৩ নভেম্বর বিদ্যালয়টি বন্ধ করে দেয় মন্ত্রণালয়। বিদ্যালয়ের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে সিলগালা করে দেয় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। শিক্ষার্থীদের কেউ স্থানীয় কিন্ডার গার্টেনে আবার কেউ তিন কিলোমিটার দূরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পড়ালেখা করছে। বিপাকে পড়েছে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের পরিবারের শিক্ষার্থীরা।   

এলাকার রিকশাচালক আক্কেল আলী বলেন, ‘ওই স্কুলোত আমার দুই ছেলে-মেয়ে পড়ত। সেটা বন্ধ করি দেওয়ায় আশপাশে কোনো স্কুল না থাকায় তামারগুল্যার (তাদের) পড়ালেখা বন্ধ হয়া গেইচে’। চা দোকানের কর্মচারী তছলিম মিয়া বলেন, ‘ওই স্কুলে আমার তিন ছেলে-মেয়ে পড়ালেখা করত। সেটা বন্ধ হয়া যাওয়ায় কিন্ডার গার্টেনে পড়ানোর সামর্থ্য নাই।’

বিদ্যালয়টি বন্ধ করে দেওয়ার সময় পর্যন্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন মাজেদা খাতুন। বিদ্যালয়টি বন্ধ করে দেওয়ার দিন তাকে রংপুর রোটারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়। তিনি জানান, ‘একটি জাতীয় পত্রিকার সাংবাদিক ২০১৬ সালের ৯ জানুয়ারি বিদ্যালয়ে আসেন। তখন নতুন শিক্ষাবর্ষ। নতুন বই বিতরণ করা হচ্ছিল। সে সময় এমনিতেই শিক্ষার্থী কম থাকে। ওই সাংবাদিক ফিরে গিয়ে ‘শিক্ষার্থী শূন্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করেন। ওই সংবাদের ভিত্তিতেই বিদ্যালয়টি বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে উল্লেখ করা ছিল’। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সাবেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা খগেন্দ্র  নাথ বর্মণ বলেন, ‘যেদিন বিদ্যালয়টি বন্ধ করে দেওয়া হয় সেদিনও বিদ্যালয়ে ৫৫ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। ক্লাস চলাকালীন সময়ে দুজন শিক্ষা কর্মকর্তা শিক্ষার্থীদের বের করে দিয়ে মূল ফটকে তালা লাগিয়ে সিলগালা করে দেন’। রংপুর বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমি গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে যোগদান করার আগেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিদ্যালয়টি বন্ধ করে দেয়। দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের কথা চিন্তা আমরা বিদ্যালয়টি চালুর উদ্যোগ নিই। গত ১৮ ডিসেম্বর বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি এবং এলাকাবাসীকে নিয়ে সভা করা হয়। পরবর্তীতে বিদ্যালয়টি চালুর অনুরোধ জানিয়ে ২৫ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ের কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। আশা করছি শিগগিরই ফল পাওয়া যাবে।

সর্বশেষ খবর