মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

রামপুরা বাড্ডায় ইউলুপের ভোগান্তি

জয়শ্রী ভাদুড়ী

রামপুরা বাড্ডায় ইউলুপের ভোগান্তি

রাজধানীর হাতিরঝিল প্রকল্পের নর্থ ইউলুপ নির্মাণ বিলম্বের কারণে রামপুরা বাড্ডা সড়কে ভোগান্তি কমছে না । ছবি : জয়ীতা রায়

প্রায় আড়াই বছরেও শেষ হলো না বাড্ডায় নির্মাণাধীন ইউলুপের কাজ। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে বাড়িয়ে মার্চে নেওয়া হয়েছিল নির্মাণ কাজের মেয়াদ। কেবল ৮৮ শতাংশ কাজ শেষ হওয়ায় জুন মাসে নির্মাণ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক জামাল আক্তার ভূঁইয়া।

গত বছরের শুরুতে প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছিলেন, ওই বছর জুনের মধ্যে এই ইউলুপ চালু করা যাবে। জুন পার হয়ে ডিসেম্বরেও শেষ হয়নি ইউলুপ নির্মাণ। এখন এ বছরের জুনে শেষ হবে বলে জানিয়েছেন তারা। এভাবে দফায় দফায় মেয়াদ বাড়ালেও আলোর মুখ দেখছে না এই প্রকল্পটি। মূলত ইউলুপ ব্যবহার করা হয় গাড়ির লেন পরিবর্তনের জন্য। হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের অংশ হিসেবে যানজটপ্রবণ এই এলাকার বাসিন্দা ও যাত্রীদের ভোগান্তি লাঘবে রামপুরা ও বাড্ডা প্রান্তে দুটি ইউলুপ নির্মাণের পরিকল্পনা করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। বাড্ডা ইউলুপটি দৈর্ঘ্যে ৪৫০ ও প্রস্থে ১০ মিটার। প্রকল্প ব্যয় প্রায় ৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে গত বছরের ২৫ জুন রামপুরা প্রান্তের (দক্ষিণ) ইউলুপটি চালু হয়। কিন্তু দুই বছরেরও বেশি সময় আগে ২০১৫ সালের মাঝামাঝিতে শুরু হওয়া বাড্ডা ইউলুপটির কাজ চলছে কচ্ছপ গতিতে।

এই ইউলুপের কারণে আড়াই বছর ধরে রামপুরা-বাড্ডা সড়কে চলাচলকারী গাড়িগুলোকে সরু পথে দীর্ঘ যানজট ঠেলে এগোতে হচ্ছে। এতে যানজটের ভোগান্তি নিত্যসঙ্গী হয়ে পড়েছে এই সড়ক ব্যবহারকারীদের। একই প্রকল্পের আওতায় নির্মিত রামপুরা ইউলুপটি ব্যবহার করে বনশ্রী এলাকার যানবাহন স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করলেও বাড্ডার নর্থ ইউলুপ প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষের দুর্ভোগের অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

দক্ষিণ ইউলুপটি নির্মাণের পর যানজট নিরসনে বেশ সাফল্য পাওয়া গেছে। যানবাহনগুলো বনশ্রী থেকে কোনো সিগন্যাল ছাড়াই হাতিরঝিল, বাড্ডা যেতে পারছে। ওই এলাকায় রামপুরা ব্রিজের যানজটও কমে গেছে। কিন্তু হাতিরঝিল থেকে বাড্ডার দিকে যেতে মেরুল বাড্ডার শেষ প্রান্তে চলছে দ্বিতীয় ইউলুপ (উত্তর) নির্মাণের কাজ।

গতকাল মেরুল বাড্ডার ইউলুপ প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ইউলুপের দুই পাশের র্যাম্প নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। মাঝের ইস্পাতের বক্সগুলো জোড়া লাগানো হয়েছে। কিছু অংশে ঢালাই কাজ চলছে। বাকি অংশে রড ফেলে রাখা হয়েছে। মাঝের মূল অংশটিতে এখনো ঢালাই শুরু হয়নি। বৃহৎ অংশের এই কাজ বাকি থাকায় এগোচ্ছে না প্রকল্পের কাজ। দুই বছরেরও বেশি সময় নিয়ে কাজ শুরু হয়ে এতদিনে ৮৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। কাজের এই ধীরগতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মানুষের ভোগান্তি। এই রুটে চলাচলকারী গাড়িগুলোকে ইউলুপের নিচে পিলারের ফাঁক দিয়ে সরু রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে দেখা যায়। দুই পাশের গাড়ি এক লেনে চলতে গিয়ে বাঁধছে যানজট। সকাল এবং বিকালের দিকে তীব্র যানজট বেঁধে যায় এ জায়গায়। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হয় মানুষকে।

দীর্ঘদিন প্রকল্পের কাজের কারণে ক্ষতির মুখে পড়ছে আশপাশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো। বেশকিছু জায়গা ঘিরে কাজ চলায় বন্ধ হয়ে পড়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো। দোকানে যাওয়া-আসার মতো রাস্তা পর্যন্ত নেই। ব্যবসায়ী আবদুল মতিন বলেন, দুই বছর হলো দোকানে খরিদ্দার নেই। একবার মনে করি অন্য জায়গায় চলে যাব। বছরখানেক ধরে শুনছি যে ইউলুপ চালু হবে, কিন্তু চালু আর হয় না। আরেক বাসিন্দা ইমরুল কবির বলেন, বর্ষার সময় কাদাপানিতে সরোবর হয়ে যায় এই রাস্তা আর গরমে ধুলায় শ্বাস নেওয়া কষ্ট। প্রকল্প শুরু হওয়া থেকে আমরা এ কষ্ট ভোগ করছি। এ রাস্তায় চলাচলকারী যাত্রী রিয়াজুল কবির বলেন, এই রাস্তার ভোগান্তি কোনো দিনও কমবে না। আগে ফ্লাইওভারের কারণে ঘণ্টা ধরে আটকে থাকতে হতো। সেটা থেকে রক্ষা পেলেও এই ইউলুপ নির্মাণ কাজ মনে হয় আর শেষ হবে না।

প্রতিদিন অফিসে যাওয়া-আসার পথে এখানে যানজটে পড়তে হয়। নির্মাণ কাজের দীর্ঘসূত্রতার বিষয়ে হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক জামাল আক্তার ভূঁইয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাড্ডার ইউলুপের কাজ ৮৮ শতাংশ শেষ হয়েছে। এ বছর অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে কাজে কিছুটা সমস্যা হয়েছে।

এ জন্য ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারায় এই প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে জুন করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ইউলুপ যেখানে হচ্ছে সেখানে মূল সড়কের নিচে ডেসকো, বিটিসিএল, তিতাস, ওয়াসাসহ বেশকিছু পরিসেবা সংস্থার তার ছিল। সেগুলো সরাতে সময় বেশি লেগেছে। আর জমি অধিগ্রহণ-সংক্রান্ত জটিলতা বিলম্বের আরেকটি কারণ।1

সর্বশেষ খবর