মঙ্গলবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

নগরীর বুকে সবুজ বন ‘ডেলনী বাড়ি’

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

নগরীর বুকে সবুজ বন ‘ডেলনী বাড়ি’

ইট-পাথরের কুমিল্লা নগরীর বুকে যেন এক খণ্ড সবুজ বন। সাড়ে পাঁচ একর আয়তনের বাড়িটি নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থিত। দেয়ালঘেরা বাড়িটি অনেকের নজর এড়িয়ে যায়। দেয়াল ছাড়িয়ে মাথা উঁচু করে রেখেছে বড় বড় গাছ। গাছের ভিতরে একটি সাদা রঙের একতলা বাড়ি

 

ডেলনী বাড়ি। ইট-পাথরের কুমিল্লা নগরীর বুকে যেন এক খণ্ড সবুজ বন। সাড়ে পাঁচ একর আয়তনের বাড়িটি নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থিত। দেয়ালঘেরা বাড়িটি অনেকের নজর এড়িয়ে যায়। দেয়াল ছাড়িয়ে মাথা উঁচু করে রেখেছে বড় বড় গাছ। গাছের ভিতরে একটি সাদা রঙের একতলা বাড়ি। এই বাড়ির লাগোয়া উত্তর পাশে কুমিল্লা আদালত, পশ্চিম পাশে কয়েকটি সরকারি অফিস, দক্ষিণ পাশে ফৌজদারি মোড়, পূর্ব পাশে ইসলামপুর। সব দিকেই বড় বড় ইট-পাথরের ইমারত। মাঝে এই বাড়িতে সবুজ শ্যামলরা গড়াগড়ি খায়।

বাড়িতে প্রবেশ করে দেখা যায়, সেখানে দুইটি পুকুর। পুকুরপাড়ে সান বাঁধানো ঘাট। সেখানে মাছ ও হাঁসের ঝাঁক লুকোচুরি খেলছে। আকাশের দিকে ছুটতে থাকা গাছের মাথায় লুকিয়ে থেকে ডাকছে নাম না জানা বিভিন্ন পাখি। রয়েছে ধান খেতও। এই বাড়িতে লোকজন কম। পুকুরঘাটে বসা ছিলেন বাড়ির সদস্য পল এলবার্ট ববি। তিনি জানান, বাড়ির পূর্ব পুরুষদের কথা।

১৮০০ সালের গোড়ার দিকের কথা। এই বাড়ির পূর্ব পুরুষ ডেলনী সাহেব ফ্রান্সের নৌ-বাহিনীতে কাজ করতেন। মিসরের কাছে আবুকর বে নামক স্থানে ব্রিটিশদের সঙ্গে ফ্রান্সের যুদ্ধ হয়। সেই যুদ্ধে ফ্রান্স হেরে যায়। হেরে যাওয়ার পর ডেলনী সাহেব চাকরি ছেড়ে দেন। চলে যান লোকচক্ষুর আড়ালে। তবে সমুদ্র তাকে বার বার ডাকতে থাকে। তিনি জাহাজ কিনে ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। তার দুইটি জাহাজ ছিল। তিনি লবণ ও পাটের ব্যবসা করতেন। এক সময় তিনি বাংলাদেশের নোয়াখালীতে জমি লিজ নিয়ে বসবাস করতে থাকলেন। ছোটখাটো জমিদারি ছিল তার। এক সময় নদীর ভাঙনে তার বাড়িঘর তলিয়ে যায়। ১৮১৫ সালের দিকে তিনি কুমিল্লা নগরীতে বসবাস শুরু করেন। বর্তমানে কুমিল্লায় এই পরিবারের ষষ্ঠ পুুরুষের বসবাস চলছে। পরিবারের সদস্যরা দেশে চাকরি ও প্রবাসে কাজ করেন। 

পল এলবার্ট ববি বলেন, এই বাড়ির সদস্য পল আই ডেলনী বাংলাদেশে প্রথম রিকশা আনেন। তা প্রথম কুমিল্লায় চলাচল শুরু করে।

১৯৪০ সালে কুমিল্লা পৌরসভায় আটটি রিকশার লাইসেন্স হয়। নগরীর সাইকেল মেরামতকারীদের নিমন্ত্রণ জানিয়ে তিনি রিকশা তৈরি করার কথা বলেন। কুমিল্লার ইতিহাস গবেষক অ্যাডভোকেট গোলাম ফারুক বলেন, ডেলনী বাড়ির পূর্ব পুরুষ ব্যবসা করতে এসে এখানে স্থায়ী হন। এখনকার খিস্টান পরিবারের সদস্যরা বাইরে তেমন কারও সঙ্গে মেশেন না, তাই তাদের সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায়নি।

সর্বশেষ খবর