মঙ্গলবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

কুবির গণরুমের আনন্দ-বেদনা!

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

কুবির গণরুমের আনন্দ-বেদনা!

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ছাত্রদের তিন হলে রয়েছে পাঁচটি গণরুম। এখানে থাকেন শতাধিক শিক্ষার্থী। গণরুমে কষ্টের পাশে রয়েছে আনন্দও। হৈ-হুল্লোড়ে সময় কেটে যায় তাদের। ছাত্রদের তিনটি হল কাজী নজরুল, বঙ্গবন্ধু ও ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত হলে ঘুরে দেখা যায়। কোনো গণরুমের ফ্যান নষ্ট। কোনটির বাতি জ্বলে না। কোনটির ডাইনিং সুবিধা ভালো নয়। কিংবা শৌচাগার ব্যবহারের অনুুপযোগী।

ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত হলে গিয়ে দেখা যায়, দুপুরের খাবার পর একজন গিটারে সুর তুলেছেন। তাকে ঘিরে অন্যরা গোল হয়ে বসেছেন। গিটারের সুরের সঙ্গে চলছে গান আর হাততালি। গণরুমের একটি ফ্যান নষ্ট হওয়ায় অন্যরা ভালো ফ্যানের নিচে তাদের বেড নিয়ে এসে গাদাগাদি করে থাকছেন।

গণরুমগুলোর দেয়ালে নানা মজার ও শিক্ষণীয় কথা লেখা রয়েছে। নজরুল হলের গণরুমের দরজার উপরে লেখা-‘নিন্দুকেরা বলে গণরুম-আমরা বলি গণভবন!’ তার দেয়ালে লেখা রয়েছে ‘কাউকে আপনার কলিজাটা ভাজা করে খাওয়ালেও বলবে, লবণ কম হয়েছে!’ আরেক স্থানে লেখা হয়েছে ‘শিক্ষার্থীরা বাঁচে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন পর্যন্ত, তারপর তারা একটা ভালো মৃত্যুর প্রস্তুতি নেয়।’ এসব বাণীর লেখক শিক্ষার্থীরাই।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯টি বিভাগে নিয়মিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছয় হাজার ২৮০ জন। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি আবাসিক হলে মাত্র ৬০৪ জন শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে। ৬০৪টি সিট থাকলেও সেখানে গাদাগাদি করে থাকছেন প্রায় ৯০০ শিক্ষার্থী। অর্থাৎ মোট শিক্ষার্থীর ৮৬ শতাংশই আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট চারটি হলের তিনটি ছাত্রদের আর ছাত্রীদের হল মাত্র একটি। আবাসন সুবিধা পর্যাপ্ত না থাকায় শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে ও শহরে বিভিন্ন মেসে থাকতে হচ্ছে। মেস বা বাসার মালিকরাও ভাড়া নিচ্ছেন অনেক বেশি। তাছাড়াও শিক্ষার্থীদের বাইরে থাকায় নিরাপত্তাহীনতা, যাতায়াতে ভোগান্তিসহ বিভিন্ন ধরনের দুর্ভোগে পড়তে হয়। তীব্র আবাসন সংকট থাকায় হলগুলোতে একরকম মানবেতর জীবনযাপন করছেন বেশ ক’জন শিক্ষার্থী। গণরুমে থাকা শিক্ষার্থী মো. সামিউল বলেন, ‘একসঙ্গে ২০-২২ জন করে থাকায় পড়ালেখার বিঘ্ন হচ্ছে। তাছাড়া সময়মতো ঘুমানোও যায় না। ফ্যানগুলো বাতাসের চেয়ে শব্দ উত্পাদন করে বেশি! টয়লেটগুলোর অবস্থাও খারাপ।’ জামালপুরের অধিবাসী শিক্ষার্থী সিফাত বলেন, ‘গণরুমে নানা সমস্যা থাকলেও আমাদের ভিতরে আন্তরিকতা তৈরি হয়। কয়েকদিন একজন অন্যজনকে না দেখলে অনেক মিস করি।’ নেত্রকোনা জেলার অধিবাসী আইসিটি বিভাগের শিক্ষার্থী সজীব সরকার বলেন, ‘গণরুমে আনন্দ ও বেদনা দুটোই রয়েছে। ফ্যান, বাতি, ডাইনিং আর শৌচাগারের ভালো ব্যবস্থা থাকলে খুব সমস্যা হয় না। কারণ একসঙ্গে চলার প্রশিক্ষণ হয়ে যায় গণরুমে। বিশেষ করে কারও গরম লাগে, কারও ঠাণ্ডা লাগে। কিন্তু ফ্যান ঘুরছেই। এখানে অন্যজনের জন্য সেক্রিফাইসের বিষয়টি শেখা যায়।’ কুবি ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াছ হোসেন সবুজ বলেন, ‘এখানে আবাসনের তীব্র সংকট রয়েছে। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় মনোযোগী হতে আবাসনের সুব্যবস্থা জরুরি হয়ে পড়েছে।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো. আবু তাহের বলেন, ‘ছয় মাসের মধ্যে আমরা ৩০০ ছাত্র ও ৩০০ ছাত্রীর আবাসন ব্যবস্থা করে দিতে পারব। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের দশ তলা একটি ছাত্র হল এবং একটি ছাত্রী হল নির্মাণের প্রজেক্ট হাতে নেওয়া হয়েছে। ’

সর্বশেষ খবর