মঙ্গলবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

বাস স্টপে থামে না বাস

জয়শ্রী ভাদুড়ী

বাস স্টপে থামে না বাস

রাজধানীর ফার্মগেটে মাঝপথে গাড়ি থামিয়ে চলছে যাত্রী ওঠানো-নামানো। ছবি : জয়ীতা রায়

ট্রাফিক উত্তর জোনে ৫২টি স্থান নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে বাস স্টপেজের জন্য। এই তালিকা মালিক-শ্রমিক সংগঠনেও পাঠানো হয়েছে

 

বিকাল ৪টা। শাহবাগ মোড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজের গেট পার হয়ে যাত্রী ছাউনিসহ আশপাশে দাঁড়িয়ে আছেন প্রায় ৫০-৬০ জন যাত্রী। বিভিন্ন গন্তব্যেও বাসের জন্য আধাঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে থাকলেও যাত্রী ছাউনিতে দাঁড়াচ্ছে না গাড়ি। অনেকেই লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন রাস্তায়। মাঝখানে কোনো গাড়ি কিছুটা গতি কমিয়ে যাত্রী উঠতে না উঠতেই ছেড়ে দিচ্ছে।

 

অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বাসে উঠতে না পেরে বিরক্ত হয়ে মাঝ বয়সী এক নারী রাস্তায় দাঁড়ানো এক বাসে উঠতে চেষ্টা করেন। তিনি হাতল ধরে ওঠার চেষ্টা করতেই ছেড়ে দেয় বাস। গতির সঙ্গে শক্তিতে না পেরে রাস্তার মাঝে পড়ে যান তিনি। এই দৃশ্য দেখে দূরে দাঁড়ানো ট্রাফিক পুলিশের এক সদস্য এই রাস্তার গাড়িগুলোকে সিগন্যালে থামিয়ে দেন। এতে করে ভয়াবহ এক দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পান ওই নারী। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ রাজধানী জুড়ে বাস স্টপেজের জন্য জায়গা নির্ধারণ করে দিলেও সেখানে থামে না বাসগুলো। বরং যেখানে লেখা রয়েছে বাস থামানো নিষেধ সেখানেই দাঁড়ায় বাস। নির্ধারিত স্টপেজে বাস না থামায় ঝুঁকি নিয়ে গাড়িতে উঠতে হয় যাত্রীদের। ঢাকার ট্রাফিক (উত্তর) পুলিশের উপ-কমিশনার প্রবীর কুমার রায় বলেন, ট্রাফিক উত্তর জোনে ৫২টি স্থান নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে বাস স্টপেজের জন্য। এই তালিকা মালিক-শ্রমিক সংগঠনেও পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া মালিক-শ্রমিক সমিতির নেতা এবং এই রুটে চলাচলকারী গাড়ির চালকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। আবদুল্লাহপুরে এখনো নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। মহাখালী বাস স্ট্যান্ডে আমরা নিজেরা দাঁড়িয়ে চালকদের সঙ্গে কথা বলেছি এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেছি।

এর পরেও যদি স্টপেজে না দাঁড়িয়ে যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানো নামানো হয় তাহলে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাস্তায় যেখানে-সেখানে যাত্রী ওঠানো-নামানো হলে চালকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে। আশা করছি গাড়ির চালকরা নিয়মের সঙ্গে তালমিলিয়ে চলবেন। রাজধানীর কুড়িল বাস স্ট্যান্ডে দিনের সব সময়ই যাত্রীর ভিড় থাকে। গতকাল সকাল ৯টার দিকে প্রায় ২০০ মানুষ অপেক্ষা করছেন কাকলী, বনানী, মহাখালী, ফার্মগেট, মিরপুর রুটের বাসগুলোর জন্য। একটি বাস দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলায় অন্য গাড়ি ফুটপাথ ঘেঁষে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। এই দুই বাস দাঁড়ানোয় অন্য বাসগুলো রাস্তার মাঝে যাত্রী নামিয়ে দিচ্ছে। ফলে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়ানো যাত্রীরা একেক সময় একেক দিকে দৌড় দিচ্ছেন। বিকাশ পরিবহনের একটি বাস রাস্তার মাঝামাঝি দাঁড়ালে এক বয়স্ক ব্যক্তি দৌড় দেন বাসে উঠতে। হেলপার বাস থামানোর ইশারা দিলেও চালক সেটা খেয়াল না করে গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেন। কোনো রকমে হাতল ধরতে পারলেও পুরোপুরি উঠতে না পেরে বেশ কিছুক্ষণ ঝুলে থাকেন তিনি। অবশেষে পাশের যাত্রী কোনো রকমে হাত ধরে টেনে তুললে দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পান তিনি। এক চিত্র রাজধানীর কারওয়ান বাজারের। গোল চত্বরে অসংখ্য মানুষ দাঁড়িয়ে থাকে বাসে ওঠার অপেক্ষায়। শাহবাগ থেকে ফার্মগেটমুখী গাড়িগুলো কিছুটা গতি কমিয়ে যাত্রী তোলার চেষ্টা করে। ট্রাফিক পুলিশ এই জায়গায় গাড়ি থামাতে না দেওয়ায় কিছুদূর গিয়ে মাঝ রাস্তায় বাস থামায় তারা। বাসে ওঠার জন্য ঝুঁকি নিয়ে রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে থাকেন যাত্রীরা।

এই জায়গায় প্রায়ই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলেও খেয়াল নেই যাত্রী এবং চালকদের। শুধু তাই নয় ফ্লাইওভারের মুখে যাত্রী ওঠানো-নামানোর জন্য থামানো হয় গাড়ি। গত রবিবার বেলা ১২টার দিকে দেখা যায় মহাখালী ফ্লাইওভারের জাহাঙ্গীরগেট প্রান্তে বাসটি থেমে আছে। ঠিক ফ্লাইওভারের মুখেই এর পেছনে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানো করছে আরও দুটি গাড়ি।

 এতে করে দ্রুত গতির প্রাইভেট কার এবং মোটরসাইকেলচালকরা ঝুঁকির মধ্যে পড়ছেন। সম্প্রতি এই ফ্লাইওভারে দুর্ঘটনায় দুজন মোটরসাইকেলচালক নিহত হলেও নজর নেই কারও।

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর