মঙ্গলবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ফুটপাথে দোকান পথচারী রাস্তায়

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

ফুটপাথে দোকান পথচারী রাস্তায়

নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, নগরীর জিইসি মোড় থেকে এ কে খানগামী জাকির হোসেন সড়কের দামপাড়া অংশ থাকে ঢাকাগামী বাস মালিকদের দখলে। এমইএস কলেজ, ওমেন কলেজ, ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় গেট সংলগ্ন অংশ ছাড়া পুরো ফুটপাথই গায়েব। খুলশী টাউন সেন্টার, খুলশী মার্টে আগতদের গাড়ি ফুটপাথ ছাড়িয়ে রাস্তায় পার্কিং করা হয়। ওই সব স্থানে পথচারীরা চলাচল করেন রাস্তায়

 

চট্টগ্রাম নগরীর বিআরটিসি মোড় থেকে নিউমার্কেট মোড়। প্রায় এক কি.মি সড়কের দুই পাশ দখল করে নিয়েছে খেলনা, মেট্রেস, জামা-কাপড়ের ব্যবসায়ীরা। একই সড়কের পুরাতন স্ট্যান্ড চত্বর থেকে ফলমন্ডি পর্যন্ত প্রকাশ্যেই চলে মাদক বেচাকেনা আর সেবন। এটা নগরীর ফুটপাথ বেদখলের খণ্ড চিত্র। এভাবেই চট্টগ্রাম নগরের বেশিরভাগ ফুটপাথ রয়েছে বেদখলে। যাতে হাঁটার উপায় নেই পথচারীদের। নগরীর সিংহভাগ সড়কের দুই পাশের ফুটপাথজুড়ে গড়ে উঠেছে অসংখ্য দোকানপাট, স্থাপনা। ফুটপাথ দখলে থাকায় পথচারীরা বাধ্য হন রাস্তায় হাঁটতে। যত্রতত্র গাড়ি ও রিকশা ‘পার্কিং’ তো রয়েছেই। ফুটপাথে ব্যবসা করা ব্যক্তিরা বলছেন, ‘পুলিশ ও নেতাদের ম্যানেজ’ করেই ব্যবসা চালাচ্ছেন তারা।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কমিশনার মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ফুটপাথে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে আমরা মাঝে মধ্যে অভিযান চালাই। অভিযানে তাদের উচ্ছেদ করা হলেও পরে আবার পুনরায় উচ্ছেদ করা জায়গায় বসে পড়ে।’ নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, ফুটপাথ তৈরি করা হয় পথচারীদের হাঁটা-চলার জন্য। অথচ আমাদের নগরে ফুটপাথ দখলে উপেক্ষিত পথচারীরা। ফুটপাথ অবৈধ দখলে চলে যাওয়ায় পথচারীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তার মধ্যেই হাঁটা-চলা করে। বেদখলে চলে যাওয়া ফুটপাথ দখল করতে প্রশাসনের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের নেতা ম. মাহমদুর রহমান শাওন বলেন, ‘চট্টগ্রামের বিভিন্ন সেবা সংস্থার সমন্বয়হীনতা ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের দখলদারিত্বের কারণে বেদখলে চলে গেছে নগরীর ফুটপাথগুলো। ফুটপাথ দখলের ফলে নগরীতে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে। সমন্বিত উদ্যোগই পারে বেদখল হয়ে যাওয়া ফুটপাথ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে।’

নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, নগরীর জিইসি মোড় থেকে এ কে খানগামী জাকির হোসেন সড়কের দামপাড়া অংশ থাকে ঢাকাগামী বাস মালিকদের দখলে। এমইএস কলেজ, ওমেন কলেজ, ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় গেট সংলগ্ন অংশ ছাড়া পুরো ফুটপাথই গায়েব। খুলশী টাউন সেন্টার, খুলশী মার্টে আগতদের গাড়ি ফুটপাথ ছাড়িয়ে রাস্তায় পার্কিং করা হয়। ওই সব স্থানে পথচারীরা চলাচল করেন রাস্তায়। পাঁচলাইশ থানার মোড় থেকে কাজীর দেউড়িগামী সড়কের দুপাশ দখল হয়েছে অভিনব পন্থায়। মূল ভবন নিজের জায়গায় রেখে ঢালু স্লেভ দিয়ে ফুটপাথের অংশটুকু পথচারী ব্যবহারের অনুপযোগী করে রেখেছেন বাড়ির মালিকরা। মুরাদপুর থেকে অক্সিজেনগামী সড়কের চিত্রও একই। গাড়ির ইঞ্জিন, ওয়ার্কশপ, শো-রুমের মালামালসহ যে যেভাবে পেরেছে দখলে রেখেছে। নগরীর দেওয়ান হাট থেকে অলঙ্কারমুখী সড়কের একপাশে প্রায় চার ফুট প্রস্থের যে ফুটপাথ আছে তার বিশাল একটা অংশ নতুন-পুরাতন ফার্নিচার ব্যবসায়ীদের দখলে। কদমতলী এলাকায় সহজেই পাওয়া যায় যানবাহনের ইঞ্জিনসহ খুচরা যন্ত্রাংশ। সেখানে ব্যবসায়ীরা ফুটপাথ দখলের পর রাস্তারও অন্তত ১০ ফুট দখল করে যন্ত্রাংশ সাজিয়ে রাখেন। এই এলাকায় মোটরসাইকেল মেরামতকারীদের দখলে থাকে রাস্তার বিশাল একটা অংশ। ফুটপাথে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত’ পুলিশই ফুটপাথ দখল করেছে। নগরীর ৪২টি পয়েন্টে ফুটপাথ দখল করে ‘ট্রাফিক পুলিশ বক্স’ বসিয়েছে পুলিশ। অভিযোগ রয়েছে ফুটপাথে গড়ে ভ্রাম্যমাণ দোকান দেখে দৈনিক হারে চাঁদা উত্তোলন করে পুলিশ ও স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতারা।

 

 

সর্বশেষ খবর