মঙ্গলবার, ৫ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

রাস্তায় ম্যানহোল ঝুঁকি

জয়শ্রী ভাদুড়ী

রাস্তায় ম্যানহোল ঝুঁকি

ম্যানহোলের ঢাকনা রাস্তার সমতলের মতো না হওয়ায় ‘গর্তের’ অবস্থা তৈরি হয়। এর ফলে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। ছবিটি রাজধানীর মধ্যবাড্ডা এলাকার ছবি : জয়ীতা রায়

গত বুধবার মালিবাগ থেকে মোটরসাইকেলে বাড্ডা আসছিলেন সাইফুর রহমান। রামপুরা বাজারে পৌঁছতেই ঘটে দুর্ঘটনা। ঢাকা মেডিকেল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেছেন তিনি। দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে বলেন, ওই রাস্তায় অধিকাংশ ম্যানহোল অনেকখানি নিচু এবং চারদিক এবড়ো খেবড়ো। দূর থেকে এটা বোঝার কোনো উপায় নেই। কাছে এসে এতটা নিচু ম্যানহোল দেখে গাড়ির গতি কমাতেই পেছন থেকে সিএনজি ধাক্কা দেয়। ধাক্কা সামলাতে না পেরে রাস্তায় পড়ে গেলে পায়ের লিগামেন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং হাতসহ শরীরের বেশ কিছু জায়গায় কেটে যায়। শুধু এই রাস্তা নয় রাজধানীর অধিকাংশ রাস্তাতেই ম্যানহোল অনেক বেশি নিচু থাকায় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।

রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে সমন্বয়হীনতার এ চিত্র। রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার অধিকাংশ ম্যানহোলই রাস্তা থেকে উঁচু কিংবা নিচু। ধানমন্ডি ২৭ মোড়ে রাপা প্লাজা থেকে শুরু হয়ে রোডের শেষ পর্যন্ত ৪টি ম্যানহোল রাস্তা থেকে অনেক নিচুতে। কিছু ম্যানহোল ডানপাশে আবার কিছু বাম পাশে। এর ফলে চালকরা ম্যানহোলের অবস্থান বুঝে উঠতে পারছেন না। এভাবে গাড়ি চালাতে গিয়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। লালবাগ এলাকার প্রতিটি রাস্তাতেই এরকম অসামঞ্জস্যপূর্ণ ম্যানহোলের দেখা মেলে। পুরো এলাকার রাস্তা খেয়াল করলে দেখা যায় রাস্তা ও ম্যানহোলের দূরত্ব প্রায় ৪-৫ ইঞ্চি। অনেক জায়গাতে আবার রাস্তা থেকে প্রায় তিন ইঞ্চি উঁচু ঢাকনা লাগানো ম্যানহোল। মিরপুর-১ এর বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে একই রকম অবস্থা। রাস্তা নির্মাণের পর ম্যানহোলের সঙ্গে সামঞ্জস্য না করে কার্পেটিং করায় তৈরি হয়েছে এ দুর্ভোগ। এসব রাস্তায় অনেক সময় হঠাৎ ব্রেক কষলে আহত হচ্ছেন যাত্রীরা। শ্যাওড়াপাড়ায় গিয়ে দেখা যায় ম্যানহোলের ঢাকনাই নেই। খোলা ম্যানহোলে বাঁশের মাথায় লাল কাপড় বেঁধে বিপদ সংকেত  বোঝানো হয়েছে। দুই পাশে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় রাস্তায় দিনরাত জমে থাকছে রিকশা ও মোটরসাইকেলের জট। চিড়িয়াখানা রোডে গিয়ে দেখা যায় ম্যানহোলের চারপাশে অনেকখানি রাস্তা ভাঙা। রাস্তার পাশের আচার বিক্রেতা সিরাজুল ইসলাম বলেন, এই জায়গা অনেক দিন ধরে এ অবস্থায় রয়েছে। প্রায়ই বাস, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন এখানে দুর্ঘটনার শিকার হয়। গত ১৪ ফেব্রুয়ারির দিনও এখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুটি ছেলে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে।

নগরবিশ্লেষক স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, আমাদের দেশের কোনো কাজে সামঞ্জস্যতা নেই। কখনো ওয়াসা কাজ করে আবার কখনো সিটি করপোরেশন। সবার কাজ শেষ হওয়ার পর রাস্তা কার্পেটিং করলে এ সমস্যা তৈরি হতো না। নির্মাণ কাজ চলাকালীন কর্তৃপক্ষকে সেগুলো নিয়মিত তদারকি করতে হবে। ঠিকাদারের হাতে ছেড়ে দিলে নির্মাণ কাজে অসামঞ্জস্যতা থেকে যাবে। রাজধানীর মিন্টোরোডে রাস্তার বামপাশ ঘেঁষে একটু কিছুদূর পর পর ম্যানহোল বসানো। রাস্তার কার্পেটিং করার সময় ম্যানহোল চারপাশে সিমেন্টের উঁচু ঢাকনাও ঢেকে দেওয়া হয়েছে। ফলে রাস্তা থেকে ম্যানহোলের আশপাশের অংশ প্রায় পাঁচ ইঞ্চি পরিমাণ উঁচু। মোটরসাইকেলচালক নাজিমুদ্দিন বলেন, গত শুক্রবার এই রাস্তা দিয়ে আমি স্ত্রীকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে শাহবাগ যাচ্ছিলাম। রাস্তা ফাঁকা থাকায় হঠাৎ পেছন থেকে একটা গাড়ি দ্রুত গতিতে আমার মোটরসাইকেলের পাশে চলে আসে। কোনোরকমে দুর্ঘটনা এড়িয়ে বামে যেতেই ঘটে বিপদ। ম্যানহোলের কারণে একটা পাশ উঁচু আবার অনেকটা নিচু। গাড়ির গতি কিছুটা কমাতে পারলেও খেই রাখতে পারেনি। পড়ে গিয়ে আমরা দুজনেই আহত হয়েছি। যেসব এলাকায় রাস্তা ম্যানহোলের সঙ্গে মিলিয়ে কার্পেটিং করা হয়নি সেখানেই এ সমস্যা তৈরি হয়েছে। গুলশান-বনানীর রাস্তায় এরকম সমস্যা না থাকলেও রাজধানীজুড়ে ম্যানহোলের অসাঞ্জস্যতায় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (সিভিল সার্কেল) মো. শরীফ উদ্দীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রাস্তা তৈরির সময় কার্পেটিং ভালোভাবে না করলে এ সমস্যা হয়। উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতায় থাকা রোডগুলোতে কাজ চলছে। প্রগতি সরণি রোডে কার্পেটিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে। পুরো রাস্তা কার্পেটিং হলে ম্যানহোলের অসামঞ্জস্যতাজনিত ভোগান্তি নগরবাসীকে পোহাতে হবে না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর