শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৫ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

বেসরকারি মেডিকেলে বাড়ছে বিদেশি শিক্ষার্থী

রেজাউল করিম মানিক, রংপুর

বেসরকারি মেডিকেলে বাড়ছে বিদেশি শিক্ষার্থী

মেডিকেল শিক্ষায় রংপুর নগরীতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। নেপাল, ভারত, পাকিস্তান, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও আফগানিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে মেডিকেল সায়েন্সে উচ্চ শিক্ষা নিতে প্রতি বছর রংপুরে আসেন শত শত শিক্ষার্থী। গত বছরেও রংপুর প্রাইম মেডিকেল কলেজ, কমিউনিটি মেডিকেল কলেজসহ অন্য বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে কয়েকশ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, অন্যান্য দেশের তুলনায় কম খরচ, মানসম্পন্ন শিক্ষা এবং জীবনযাত্রার ব্যয় কম হওয়ায় তারা রংপুরে আসছেন। বেসরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের দাবি, শিক্ষার পরিবেশ ও মানসম্মত শিক্ষাদানের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রংপুরের সুনাম বেড়ে চলেছে। ইতিপূর্বে জর্ডানসহ অন্য দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা রংপুর মেডিকেল কলেজের শিক্ষা জীবন শেষ করে গেছেন। ডাক্তারি পড়তে রংপুরকে বেছে নিয়েছেন নেপালের সেইঞ্জা প্রদেশের শিক্ষার্থী কেষব রোকা। প্রায় পাঁচ বছর ধরে তিনি প্রাইম মেডিকেল কলেজে পড়ছেন। আপন করে নিয়েছেন এখানকার মানুষ, ভাষা ও সংস্কৃতিকে। কেষব রোকা বলেন, বাংলাদেশ আমার পছন্দের জায়গা। এ দেশে মেডিকেল সায়েন্সে পড়াশোনার মান খুব ভালো। সেই সঙ্গে খরচও অনেক কম। তাই এখানে পড়তে এসেছি। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি না হয়ে রংপুরে কেন ভর্তি হয়েছেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিশেষ করে দেশের সঙ্গে যাতায়াতের সুবিধার কারণে রংপুরে থাকা। তিনি বলেন, এখানে থাকতে থাকতে এখানকার ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে গিয়েছি। বেশির ভাগ সময়ই বাংলা ভাষায় কথা বলছি। আমাকে দেখে অনেকে বাংলাদেশিই মনে করে। 

ভারতের কাশ্মীর থেকে রংপুরে পড়তে এসেছেন আসেম আবু বকর, ওমর সালামসহ বেশ কয়েকজন। তারা রংপুর প্রাইম মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। রংপুরে কেন পড়তে এসেছেন জানতে চাইলে তারা বলেন, ভারতের মেডিকেল কলেজগুলোর চেয়ে বাংলাদেশের মেডিকেল কলেজের টিউশন ফি অনেক কম এবং পড়াশোনার মান অনেক ভালো। তাই এখানে পড়তে এসেছি। এখানে পড়তে বেশ ভালোই লাগে।

মালদ্বীপ থেকে পড়তে আসা রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মরিয়ম সাজনা ও আমেনাত নাজদা বলেন, আমাদের দেশে কোনো মেডিকেল কলেজ নেই। তাই মেডিকেল সায়েন্সে পড়তে বাংলাদেশে এসেছি। এশিয়ার অন্যান্য দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে কেন এসেছেন জানতে চাইলে তারা বলেন, এদেশের মেডিকেল সায়েন্সে পড়াশোনার মান অত্যন্ত ভালো। সেই সঙ্গে খরচও অনেক কম। এ ছাড়া অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে আসা সহজ হয়। সার্কভুক্ত রাষ্ট্রের জন্য কোটা আছে। আর কলেজে ভর্তি হতে তেমন একটা জটিলতা নেই। তারা বলেন, এর আগেও আমাদের দেশ থেকে বাংলাদেশে ডাক্তারি পড়তে অনেকে এসেছেন। তারা দেশে ফিরে গিয়ে অনেক ভালো জায়গায় চাকরি করছেন। এদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেক ভালো উল্লেখ করে তারা বলেন, এখানে স্বাধীনভাবে সব জায়গায় চলাফেরা করা যায়। এদেশের মানুষের ব্যবহার অত্যন্ত ভালো। দেশে ফিরে গেলে এদেশের মানুষকে অনেক মিস করব। ভুটানের দাগানা অঞ্চল থেকে পড়তে আসা শিক্ষার্থী ফুরবা বানচু বলেন, এখানকার পড়াশোনার পরিবেশ ভালো। বাইরের অনেক ছাত্রের সঙ্গে আমি বন্ধুত্ব করেছি। দূরবর্তী দেশগুলো থেকে আসা বন্ধুদের সঙ্গে পড়াশোনা আমাকে বহির্মুখী ও আত্মবিশ্বাসী বানিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা অনুসারে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই মোট আসনের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারেন। এক্ষেত্রে প্রতি বিদেশি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রতিষ্ঠানভেদে ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার ডলার ফি আদায় করা হয় পাঁচ বছরের জন্য। শিক্ষাবিদ ডক্টর তুহিন ওয়াদুদ বলেছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীর উপস্থিতি বাড়াতে পারলে তা দেশের অর্থনীতির জন্য লাভজনক হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসন থাকা সত্ত্বেও আর্থিক সমস্যার কারণে অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারে না। এই শূন্য আসনগুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করা গেলে তা অর্থনীতির জন্য লাভজনক হবে।

 

সর্বশেষ খবর