মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

সড়কে আইন অমান্যে কী আনন্দ!

বিশেষ প্রতিনিধি

সড়কে আইন অমান্যে কী আনন্দ!

সড়ক দুর্ঘটনার জন্য পথচারীদের বেপরোয়া চলাচল ও আইন অমান্যের ঘটনাও কম দায়ী নয়। নগরীর ফার্মগেট এলাকা থেকে তোলা ছবি : জয়ীতা রায়

রাজধানীর রাজপথে মাঝে মধ্যেই একটি বিরল ট্রাফিক সতর্কীকরণ দেখা যায়, ‘চলন্ত গাড়ির সামনে দিয়ে দৌড় দেবেন না’। তবুও মানুষ ফুটওভার ব্রিজ পাশ কাটিয়ে গাড়ির সামনে দিয়ে দৌড় দেন। হাজার হাজার পথচারী ট্রাফিক সিগন্যাল উপেক্ষা করে রাস্তা পার হতে গিয়ে চলন্ত গাড়িবহর থামিয়ে দেন। নগরীতে একটি যাত্রীবাহী বাস কিংবা কার যখন ৫০-৬০ কিলোমিটার গতিতে চলে কিংবা মহাসড়কে ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার গতিতে অতিক্রম করে তখন সামনে দিয়ে দৌড় দেওয়া পথচারীকে বাঁচানো দুরূহ হয়ে পড়ে। সড়ক দুর্ঘটনায় চালকের পাশাপাশি যাত্রী ও পথচারীর দায়িত্বহীনতাও কম দায়ী নয়।      

রাস্তায় চলাচলেরও যে একটা নিয়মশৃঙ্খলা আছে তা কেউই মানতে চান না। এই নগরীতে যে যার ইচ্ছামতো রাস্তা পার হচ্ছেন। কেউ কেউ মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হচ্ছেন। তাদের মধ্যে অধিকাংশই আনমনে রাস্তা পার হন। আবার কেউ কেউ মাথায় বোঝা নিয়ে পার হচ্ছেন। পাশেই জেব্রা ক্রসিং কিংবা ফুটওভার ব্রিজ। কিন্তু সেখান দিয়ে পার না হয়ে যে যার মতো রাস্তা পারাপার হচ্ছেন। এর মাঝেই ধেয়ে আসছে গাড়ি। হাত বাড়িয়ে তা থামানোর চেষ্টা। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারসেকশনে এমন চিত্র দেখা যায়। শুধু মানুষ যত্রতত্র পারাপারই নয়, যেখানে-সেখানে থামছে বাসগুলো। ইচ্ছামতো সড়কের ওপরই যাত্রী তোলা হচ্ছে। মানুষও দৌড়ে ঝুঁকি নিয়ে বাসে ওঠানামা করছেন। এসব ঘটছে ট্রাফিক পুলিশের সামনেই। অবশ্য ট্রাফিক পুলিশও নিজের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে জানান, আপনি যা দেখছেন তা সকাল থেকে রাত অবধি প্রতিনিয়ত চলছে।

মানুষ সচেতন না হলে শুধু আইন দিয়ে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে না। কারওয়ান বাজার ও বাংলামোটর সিগন্যালে দীর্ঘ সময় থেকে দেখা  গেছে, জেব্রা ক্রসিং ছাড়াই রাস্তা পারাপার হচ্ছেন মানুষ। অনেকেই মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে ঝুঁকি নিয়ে চলন্ত যানবাহনের সামনে দিয়ে যখন-তখন রাস্তা পার হচ্ছেন। এভাবে রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে যুবক, বৃদ্ধ, নারী, শিক্ষার্থী কেউ পিছিয়ে নেই। অনেককে দেখা যায়, রাস্তা পার হওয়ার সময় অনেকটা বেখেয়ালি। আবার বাস থামার অনুমতি নেই এমন স্থানে বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানো হচ্ছে। চলন্ত বাসের দরজা বন্ধ থাকার কথা থাকলেও তা রয়েছে খোলা।

এদিকে ফুটওভার ব্রিজ থাকার পরও রাস্তা দিয়ে পার হন অনেকে। সচেতন মানুষ হয়েও কেন ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করছেন না- জানতে চাইলে এক ব্যাংকার বলেন, ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে পার হতে অনেক সময় লাগে। দেখেশুনেই তো পার হচ্ছি। কারওয়ান বাজারে দায়িত্বরত এক ট্রাফিক সার্জেন্ট নাম প্রকাশ না করে বলেন, শুধু আইন করে সড়কে শৃঙ্খলা আনা সম্ভব নয়। ঝুঁকি নিয়ে চলন্ত গাড়ির সামনে দিয়ে ছুটে মানুষ রাস্তা পারাপার হচ্ছেন। জেব্রা ক্রসিং থাকতেও পার হচ্ছেন না। ফুটওভার ব্রিজও ব্যবহার করছেন না। কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটলে সব দায় পুলিশের ওপর পড়ছে।

প্রতিটি মোড়ে সার্জেন্টসহ ৮ থেকে ১০ জন ট্রাফিক পুলিশ সদস্য থাকেন। তারা যান চলাচল ও ভিআইপি পারাপারে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তার ওপর এ জনবসতিপূর্ণ শহরে এত মানুষ নিয়ন্ত্রণ করা পুলিশের জন্য কষ্টসাধ্য। রাস্তা পারাপারে মানুষকে সচেতন হতে হবে। নিজের জীবনের নিরাপত্তা নিজেকেই নিতে হবে। নাগরিককে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। তাহলে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে।

সম্প্রতি রাজধানীর নদ্দা এলাকায় বাসের চাপায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরী নিহত হন।

এরপর নিরাপদ সড়কের দাবিতে সড়কে নামেন হাজার হাজার শিক্ষার্থী। তারা এরই মধ্যে সরকারকে আট দফা দাবিও দিয়েছেন। এর আগে গত বছরের ২৯ জুলাই রাজধানীর কুর্মিটোলায় বাসচাপায় দুই কলেজশিক্ষার্থী নিহত হন। তখন নিরাপদ সড়কের দাবিতে সারা দেশে তীব্র আন্দোলন গড়ে ওঠে। তারপরও সড়ক নিরাপদ হয়নি। প্রতিদিনই বাড়ছে সড়কে মৃত্যুর মিছিল। মহাসড়কে দুর্ঘটনায় ভারী যানবাহনের পাশাপাশি মোটরসাইকেলও অন্যতম প্রভাবক। মোট দুর্ঘটনার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ঘটে মোটরসাইকেলের কারণে।

এ জন্য নিরাপত্তার স্বার্থে মোটরসাইকেলের যাত্রী ও আরোহী উভয়কেই হেলমেট পরতে বলা হয়। কিন্তু বাইক আরোহীদের হেলমেট না পরায়ই যেন আনন্দ। এই আইন অমান্যে পুলিশ বাইকাররাও শরিক হন বিনাদ্বিধায়। এ অবস্থায় কীভাবে হবে নিরাপদ সড়ক।

সর্বশেষ খবর