মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

বদলে গেল ত্রিপুরা পল্লী

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

বদলে গেল ত্রিপুরা পল্লী

আধুনিক নয়, সাধারণ নাগরিক জীবনেরও ছোঁয়া ছিল না। তারা ছিল অসম্ভব রকমের অসচেতন। অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে একই পরিবারের তিনজনসহ মারা যায় চার শিশু। ছিল না বিদ্যুৎ। মোবাইল চার্জ দিতে হতো টাকা দিয়ে। প্রধান সড়ক থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার পথ। কিন্তু ছিল না কোনো সড়ক। এমন একটি অজপাড়াগাঁ ছিল চট্টগ্রামের হাটহাজারীর ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের মনাই ত্রিপুরাপাড়া। কিন্তু একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উদ্যোগে বদলে গেল সেই মনাই ত্রিপুরাপাড়া। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রধান সড়ক থেকে প্রায় দুই কিলোমিটারের আইল উন্নীত করা হয়েছে ১৫ ফুট প্রস্থের কাঁচা সড়কে, তৈরি হয়েছে আটটি কালভার্ট ও আটটি সেমিপাকা বাথরুম। তা ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা অর্থায়নে স্থাপন করা হয়েছে তিনটি গভীর নলকূপ, মন্দিরভিত্তিক স্কুল শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে তৈরি করা হয়েছে টিনশেড ঘর, ব্যবস্থা করা হয়েছে সৌরবিদ্যুতের। ত্রিপুরা পল্লীর বাসিন্দা শচীন ত্রিপুরা বলেন, এতদিন আমরা নাগরিক জীবনের সুবিধার বাইরে ছিলাম। কিন্তু একজন সরকারি কর্মকর্তার উদ্যোগে বদলে গেল আমাদের জীবনমান। এখন আমরা বিদ্যুৎ, সড়ক, টিউবওয়েল, শিশুদের শিক্ষাসহ অনেক কিছু পেয়েছি। হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, মনাই ত্রিপুরাপাড়ার অবস্থান চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের হাটহাজারী-ফরহাদাবাদ সড়ক থেকে পশ্চিমে গাড়িতে প্রায় ১০ কিলোমিটার। এরপর পায়ে হেঁটে যেতে হয় আরও এক কিলোমিটার। এমন একটি অজপাড়াগাঁয়ে আধুনিক নাগরিক জীবন বলতে কিছু ছিল না। কিন্তু এখন সেটি বদলে গেছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের আন্তরিক সহযোগিতায় অনেক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। আইলকে সড়কে উন্নীত, ত্রিপুরা পল্লীর জন্য ৮টি সেমিপাকা টয়লেট, তিনটি গভীর নলকূপ স্থাপন ও মন্দিরভিত্তিক স্কুল শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। তিনি বলেন, উন্নয়নের পূর্বশর্ত হলো উন্নত যোগাযোগ। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকলে সেখানে কোনো কাজ সহজে হয় না। তাই প্রথমেই তাদের যাতায়াতের আইলটি সড়কে উন্নীত করা হয়। তা ছাড়া শিক্ষাসহ অবকাঠামোগত নানা উন্নয়ন করা হয়।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, হাটহাজারী উপজেলার এক নম্বর ফরহাদাবাদ এলাকার মনাই ত্রিপুরাপাড়ায় ২০১৮ সালের ২৬ আগস্ট অজ্ঞাত রোগে চার শিশু মারা যায়। এরপর থেকে পল্লীটি আলোচনায় আসে। বের হয় সেখানে নাগরিক জীবন বলতে কিছু না থাকার নানা তথ্য। অজপাড়াগাঁয়ের এ পল্লীতে ৫৫টি পরিবারে বাস করে ৩৭৫ জন মানুষ। সেখানে ছিল না বিদ্যুৎ। মোবাইলে চার্জ দিতে হয় প্রতি ঘণ্টা পাঁচ টাকা করে। তবে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দেওয়া হয়েছে সৌরবিদ্যুৎ। ত্রিপুরা পল্লীতে দেওয়া হয় তিনটি বাতি এবং একটি মোবাইলে চার্জ দেওয়ার পয়েন্ট। পুরো পল্লীতে মাত্র একটি চায়ের দোকান আছে, সেখানেও লাগানো হয়েছে সোলার বাতি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর