মঙ্গলবার, ১১ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

ফ্লাইওভারের মুখে থামে বাস

প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা, সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। তবুও নজর নেই কর্তৃপক্ষের

জয়শ্রী ভাদুড়ী

ফ্লাইওভারের মুখে থামে বাস

মহাখালী ও মালিবাগ-মৌচাক ফ্লাইওভারের মুখে এভাবে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলছে যাত্রী ওঠানামা ছবি : জয়ীতা রায়

রাজধানীর মহাখালী ও মালিবাগ-মৌচাক ফ্লাইওভারের মুখে বাস থামিয়ে চলছে যাত্রী ওঠানামা। দ্রুত গতির যানবাহন ফ্লাইওভার মুখে হঠাৎ থেমে যাওয়ায় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। ফ্লাইওভারে দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও টনক নড়েনি যাত্রী, চালক কিংবা কর্তৃপক্ষের। 

সরেজমিনে দেখা যায়, মহাখালী ফ্লাইওভারের জাহাঙ্গীর গেট প্রান্তে দ্রুত গতিতে গাড়ি ওঠানামা করছে। এর মাঝেই এয়ারপোর্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পরিবহন ফ্লাইওভারের মুখে দাঁড়িয়ে যাত্রী নামাচ্ছে। ফ্লাইওভারের শুরুর এই জায়গা থেকে যাত্রী তুলতে রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নামতে দেখা যায় চালকদের। জাহাঙ্গীর গেটের সিগন্যাল পার হতেই দ্রুত গতিতে গাড়ি চালিয়ে এসে চালকরা হঠাৎ করে দাঁড়িয়ে পড়েন ফ্লাইওভারের মুখে। এখানে বাস থামানো নিষেধ সংবলিত সাইনবোর্ড থাকলেও তা মানছেন না কেউ। দীর্ঘদিন ধরে এভাবে যাত্রী ওঠানামা চললেও শুধু সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছে কর্তৃপক্ষ। বিকাশ পরিবহনের দুটি গাড়ি ফ্লাইওভারের প্রান্ত থেকে যাত্রী তোলার জন্য প্রতিযোগিতায় নামতে দেখা যায়। ভূঁইয়া পরিবহনের গাড়িগুলোও যাত্রী তুলছে ফ্লাইওভারের প্রান্ত থেকে। এভাবে যাত্রী তোলার প্রতিযোগিতায় নামায় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। হঠাৎ করে ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে পড়ায় পেছনে থাকা দ্রুত গতির গাড়িগুলো দুর্ঘটনার মুখে পড়ছে। ফ্লাইওভারের চেয়ারম্যান বাড়ি প্রান্তেও একই চিত্র দেখা যায়। ফ্লাইওভার থেকে নামার সময় ঝুঁকি নিয়ে যাত্রী নামাতে দেখা যায় বিকাশ পরিবহনকে। একই সময়ে আরও দুটি বাস এসে পেছনে দাঁড়ায়। বেশি যাত্রী তোলার জন্য প্রায়ই ফ্লাইওভারের মুখে বাসগুলোকে এভাবে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে দেখা যায়। বাসগুলো এলোমেলোভাবে দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলার কারণে ফ্লাইওভারের মুখে তৈরি হচ্ছে যানজট। পুরো ফ্লাইওভার ফাঁকা থাকলেও এসব বাসের কারণে যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে অন্য পরিবহনগুলোকে। ফ্লাইওভারের দুই প্রান্তে সচেতনতামূলক সাইনবোর্ড ঝুলিয়েছে ট্রাফিক পুলিশ। তাতে লেখা রয়েছে, ফ্লাইওভারের মুখে গাড়ি থামাবেন না। কিন্তু এই সাইনবোর্ডের লেখা যেন কারোরই চোখে পড়ছে না। ফ্লাইওভারের মুখে না থামার বিষয়ে ট্রাফিক আইন থাকলেও তা কেউ মানছে না। ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি থেকে ওঠানামা করছেন এবং ফ্লাইওভারের মুখের রাস্তা পার হচ্ছেন যাত্রীরা।

এভাবে ঝুঁকি নিয়ে নামার বিষয়ে এক যাত্রীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখান থেকে নেমে আমতলীর দিকে যাব। তাই ফ্লাইওভারের মুখে না নেমে পড়লে ফ্লাইওভারে গাড়ি উঠে যাবে। তখন আবার ঘুরে আসা লাগবে। এজন্য ঝুঁকি নিয়ে হলেও এখানে নেমে পড়তে হচ্ছে।

যাত্রীদের সেবার কথা চিন্তা করে রাজধানীর সব রুটেই বাস সার্ভিস চালু আছে। মহাখালী ফ্লাইওভারের নিচ দিয়েও অনেক গাড়ি যাতায়াত করে। কিন্তু অসচেতনার কারণে অনেকেই ভিন্ন রুটের গাড়িতে যাতায়াত করেন। এতে করে বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। বিকাশ পরিবহনের চালক আনোয়ার হোসেন বলেন, যাত্রীরা ইচ্ছা মতো গাড়িতে ওঠে। আবার ইচ্ছা মতো নামতে চায়। তাদের না নামিয়ে দিলে ঝামেলা শুরু করে। অনেকে গালিগালাজ করে। ভাড়া নিয়েও কারও কারও সঙ্গে বাকবিতন্ডা হয়। তাই বাধ্য হয়েই ফ্লাইওভারের মুখে গাড়ি থামাতে হয়। একই চিত্র মালিবাগ-মৌচাক ফ্লাইওভারেরও। ফ্লাইওভারের মৌচাক অংশে বাস থামিয়ে চলছে যাত্রী ওঠানামা। গতকাল দুপুর ১টার দিকে মৌচাক মোড়ে দেখা যায়, ফ্লাইওভার থেকে নামার মুখে মনজিল পরিবহন একটি বাস যাত্রী তুলছে। দীর্ঘ সময় ধরে ফ্লাইওভারের নামার প্রান্ত আটকে রাখায় বাধছে যানজট। এই রুটের প্রতিটি পরিবহন কোম্পানির গাড়িকেই এখান থেকে যাত্রী তুলতে এবং নামাতে দেখা যায়। প্রভাতী-বনশ্রী পরিবহন, বলাকা পরিবহনের গাড়িগুলোকে ফ্লাইওভারের মুখ থেকে যাত্রী ওঠাতে দেখা যায়।

বলাকা পরিবহনের চালক ইয়াকুব আলী বলেন, ফ্লাইওভারের মুখে অনেক যাত্রী নামতে চাওয়ায় আমাদের গাড়ি থামাতে হয়। এর পাশে কোনো থামার জায়গা না থাকায় এখান থেকেই আমাদের যাত্রী তুলতে হয়। বলাকা পরিবহনের যাত্রী তাহিয়া আক্তার বলেন, এখানে না নামলে অনেক দূরে গিয়ে বাস থামবে। উল্টোপথে আসতে গিয়ে আরও ৩০ টাকা বেশি রিকশা ভাড়া গুনতে হয়। কাছাকাছি একটা নির্দিষ্ট বাস স্টপেজ থাকলে সেখানে নামতে পারতাম। ফ্লাইওভারের প্রান্তে যাত্রী ওঠানামা ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে সড়ক পরিবহন বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেন, এভাবে ফ্লাইওভারের মুখে যাত্রী ওঠানামা করা ঝুঁকিপূর্ণ। যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাই যাত্রী ও চালকদের সচেতন হওয়ার পাশাপাশি কর্তৃপক্ষকেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

সর্বশেষ খবর