মঙ্গলবার, ২৫ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

প্রকল্প আছে, জলাবদ্ধতাও আছে!

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

প্রকল্প আছে, জলাবদ্ধতাও আছে!

চট্টগ্রামের দুঃখ জলাবদ্ধতা। তিন সংস্থার সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ চলছে। কিন্তু দুর্ভোগ থেকে মুক্তি মিলছে না ছবি : দিদারুল আলম

চট্টগ্রাম নগরের অভিশাপখ্যাত জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) বাস্তবায়ন করছে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার একটি, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) বাস্তবায়ন করছে এক হাজার ২৫৬ কোটি টাকার একটি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) গ্রহণ করেছে এক হাজার ৬২০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প।

জলাবদ্ধতা নিয়ে তিন সংস্থা তিনটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও নিরসন হচ্ছে না জলাবদ্ধতা। প্রতি বছরই দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে। জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্প আছে, সঙ্গে জলাবদ্ধতাও আছে। ফলে জলাবদ্ধতা নগরবাসীর জন্য হয়ে দাঁড়িয়েছে কপাল লিখন। এ নিয়ে প্রকল্প গ্রহণ, আলোচনা-সমালোচনা, দুই সেবা সংস্থার মধ্যে চিঠি চালাচালি এবং ক্ষোভ প্রকাশ থাকলেও নগরবাসীর দুঃখ ঘুচছে না। মৌসুমি বৃষ্টিতেই হাঁটু পানি হয়ে যাওয়ায় বর্ষা মৌসুম নিয়ে ভয় ও শঙ্কায় আছে নগরবাসী।

জানা যায়, গত ১৫ জুন নগরে মাত্র ১৯ মিলিমিটারের মৌসুমি বৃষ্টিতে নগরের অধিকাংশ নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা হয়। তাছাড়া গত ২ এপ্রিল রাতেও মৌসুমি বৃষ্টিতেই নগরের অনেক নিম্নাঞ্চলে পানি ওঠে। মৌসুমি বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা হওয়ায় ক্ষোভ তৈরি হয় নগরবাসীর মধ্যে। ৩ এপ্রিল নগর ভবনে জরুরি বৈঠকে বসেন চসিক মেয়র এবং কাউন্সিলররা। বৈঠকে সিডিএ’র জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়নের ধীর গতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। এরপর গত ২৫ মে রাতে মাত্র ১৫ মিলিমিটারের বৃষ্টিতেই চট্টগ্রাম নগরের প্রবর্তক মোড়, দুই নম্বর গেট, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, চকবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এ নিয়েও নগরবাসী চরম বিরক্ত হয়। বাকলিয়া এলাকার বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘কে কোন প্রকল্প গ্রহণ করেছে সেটা বিবেচ্য নয়, কথা হলো আমরা জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত হচ্ছি কিনা। আর কতদিন আমরা জলাবদ্ধতা নিরসনের মুখরোচক কথা শুনব।’           

জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্পের পরিচালক লে. কর্নেল মো. শাহ আলী বলেন, ‘জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে সব সংস্থার সমন্বয়ে উচ্ছেদ অভিযান হবে। ইতোমধ্যে অবৈধ নালা-নর্দমার তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। এ কাজে স্থানীয় কাউন্সিলরগণকেও সম্পৃক্ত করা হয়েছে। খাল-নালার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হলে পানি স্বাভাবিক গতিতে চলাচল করতে পারবে। তখন জলাবদ্ধতা অনেকাংশেই কমে যাবে।’    

সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘মেগা প্রকল্পটি দীর্ঘমেয়াদি। প্রকল্পের কাজ শেষ হলেই এর সুফল মিলবে। তাই আমাদের আরও একটু অপেক্ষা করতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে সেনাবাহিনী দ্রুতগতিতে কাজ করে যাচ্ছে। আশা করছি, যথাসময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।’ চসিকের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘খাল খনন প্রকল্পের জন্য চার কিস্তির টাকা একসঙ্গে ছাড় দেওয়া হয়েছে। এখন কাজ শুরু করা যাবে।’   

জানা যায়, সিডিএ নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক মেগা প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ৯ আগস্ট অনুমোদন পায়। অনুমোদনের প্রায় দুই বছর হলেও এখনো কাজের অগ্রগতি মাত্র ১৮ শতাংশ। প্রকল্প অনুমোদনের প্রায় আট মাস পর গত বছরের এপ্রিলে খাল ও নালা-নর্দমার খনন কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের অধীনে ৩৬টি খাল খননের কথা। বর্তমানে প্রকল্পের আওতায় মহেশখাল, বির্জা খাল, ডোমখালী খাল, চাক্তাই খাল, খন্দকিয়া খাল, রাজাখালী খাল-২, মহেশখালী খাল, মির্জা খাল, নোয়া খাল, ফিরিঙ্গিবাজার খাল, গয়নাচরা খাল ও টেকপাড়া খালের খননকাজ এবং ১১টি খালের ব্রিজের কাজ চলমান। ইতোমধ্যে ব্যয় হয়েছে ৪১৮ কোটি টাকা। তবে শিগগিরই সব সংস্থার সমন্বয়ে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হবে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে চসিক ‘বহদ্দারহাট বারৈপাড়া থেকে কর্ণফুলী পর্যন্ত নতুন খাল খনন’ প্রকল্পটি ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতাসহ নানা কারণে আটকে আছে।

জানা যায়, সাধারণত নগরের নালা-নর্দমা ড্রেন পরিষ্কার করে চসিক। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমের আগেই এসব পরিষ্কার করা হতো। কিন্তু ৩ ফুট প্রশস্তের নালা-নর্দমা নির্মাণ ও পরিষ্কার সিডিএ’র মেগা প্রকল্পভুক্ত হওয়ায় এবার চসিক এ কাজটি করছে না। পক্ষান্তরে একই কাজ দুই সংস্থার করা হবে এমন শঙ্কায় চসিক নালা-নর্দমা পরিষ্কার কাজ বন্ধ রাখে। ফলে ময়লা-আবর্জনায় ভরাট হয়ে ক্রমশ পানি চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়ছে নালা-নর্দমাগুলো। তবে চসিক রুটিন কাজের অংশ হিসেবে পরিষ্কার কাজ করছে বলে দাবি করছে।

সর্বশেষ খবর