মঙ্গলবার, ২৫ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

আবার দখলে ফুটপাথ

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

আবার দখলে ফুটপাথ

রাজশাহী শহরে গত এপ্রিল মাসজুড়ে ফুটপাথ থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে অভিযান চালানো হয়। ফুটপাথ থেকে সব ধরনের ব্যবসায়ীকে উচ্ছেদ করা হয়। সিটি করপোরেশন থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, ফুটপাথে নয়, রাস্তার পাশে ভ্যান নিয়ে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা বিকাল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ব্যবসা করতে পারবেন। কিন্তু মাস না ঘুরতেই ফুটপাথ থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ অভিযান শেষ হওয়ার পর থেকেই আবার তা ফের দখল হওয়া শুরু হয়েছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের রাস্তার দুই পাশে আগের মতো ফুটপাথ দখল করে ব্যবসায়ীরা বসে পড়েছেন। সারা রাত সেখানে ব্যবসা চলে। শহরের অন্যান্য এলাকার ফুটপাথও আবার দখল হতে শুরু করেছে। নগরীর আলুপট্টি থেকে তালাইমারী মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে আবারও নতুন করে গড়ে উঠেছে স্থাপনা। আগে যেখানে স্থাপনাগুলো ছিল, সেখানেই আবার তারা স্থাপনা গড়েছেন। পথচারীদের নিরাপত্তার জন্য এসব ফুটপাথ নির্মাণ করা হলেও তা কোনো কাজে আসেনি। দখল হয়ে যাওয়ার কারণে ঝুঁকি নিয়ে পথচারীদের রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হয়।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ম্যাজিস্ট্রেট সমর কুমার পাল জানান, এপ্রিলে নগরীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালানো হয়েছিল। কিন্তু কিছুদিন না যেতেই সেগুলোতে আবারও স্থাপনা গড়ে উঠছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু এলাকায় আবারও স্থাপনা গড়ে ব্যবসা শুরু হয়েছে। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে উচ্ছেদ অভিযান আবারও চালানো হবে। এ জন্য নগরীজুড়ে মাইকিং করা হচ্ছে। সরকারি জায়গায় ১০তলা ভবন থাকলেও তা উচ্ছেদ করা হবে। রাজশাহী নগরীতে ২৪টি বাজার বসে রাস্তার দুই ধারে। এ ছাড়াও ফুটপাথের ওপর অসংখ্য ছোট ছোট দোকানপাট। এর মধ্যে বিনোদপুর ও শালবাগান বাজারের অংশবিশেষ মহাসড়কের ধারে বসে। এসব দোকানপাট পথচারীদের নির্বিঘœ চলাচলের প্রতিবন্ধক ও দুর্ভোগের কারণ, একই সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ। পথচারীদের বিড়ম্বনায় ফেলে, ঝুঁকির মধ্যে রাস্তার দুইপাশের বাজারগুলো হলো- বিনোদপুর, শালবাগান, ছোটবনগ্রাম, কাজলা, ঢাঁশমারি, জাহাজঘাট, সাতবাড়িয়া, শিরইল, সাগরপাড়া, হাদিরমোড়, মোন্নাফের মোড়, মতিহার থানা মোড়, হড়গ্রামবাজার, বালিয়াপুকুর, খড়খড়িবাজার, বাজেকাজলা, মহব্বতের ঘাট, দাসপুকুর, খুলিপাড়া, সাধুরমোড়, লক্ষ্মীপুর টিবি হাসপাতাল রোড, নওদাপাড়া বাজার, কাশিয়াডাঙ্গা মোড়, সাহেববাজার ইত্যাদি। কোথাও কোথাও রাস্তার দুই পাশের অংশবিশেষ দখল করে বসে শাক-সবজির বাজার। একই সঙ্গে মাছ, মাংস ও মুরগির বেচাকেনা। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর দুপাশের ফুটপাথ তো বটেই রাস্তা পর্যন্ত দখল করে ছোট ছোট ইউনিটের দোকানপাট বসে। ফুটপাথজুড়ে আছে কাপড়ের দোকান, পান-সিগারেটের দোকান, চা দোকান, ফলের পসরা, ফুটপাথ দখল করে নির্মিত হচ্ছে আসবাবপত্র, মেরামত হচ্ছে মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেল, বিক্রি হচ্ছে পেট্রল ও ডিজেলের মতো দাহ্য পদার্থ। চেয়ার, সোফা, র‌্যাক- কী নেই ফুটপাথে? কোথাও কোথাও ফুটপাথের ওপর হাল্কা যানবাহন যেমন- অটোবাইক, ভ্যান, মোটরসাইকেল কিংবা রিকশা পার্কিং করা থাকে। ফুটপাথের কোথাও কোথাও সম্পূর্ণ দখল করা আছে, কোথাও ৫০ থেকে ৮০ ভাগ পর্যন্ত দখল করা থাকে। ফুটপাতের ওপরই বেঞ্চ বসিয়ে চায়ের দোকান চলছে।

মাঝারি মানের ব্যবসায়ী যারা আছেন তারাও ফুটপাথ দখল করে তাদের পণ্য সাজিয়ে রাখছেন। সবচেয়ে ঝুঁকির বিষয় হলো ফুটপাথের অর্ধেক দখল করেই গরম তেলে ভাজা হচ্ছে পুরি সিঙ্গারা ইত্যাদি। সামান্য খালি স্থান দিয়েই চলাচল করছে পথচারীরা। ফুটপাথের ওপরই চলছে ওয়েলডিংয়ের কাজ। কোনো ক্ষেত্রেই পথচারীদের মোটেও তোয়াক্কা করা হয় না কিংবা পথচারীদের চলাচলের বিষয়টি বিবেচনায় নেয় না দোকানিরা।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন জানান, পরিকল্পিত নগরী গড়তে মানুষের হাঁটার পথ থাকতে হবে। কিন্তু কিছু মানুষের কারণে ফুটপাথ থাকছে না। এগুলো এপ্রিলে উচ্ছেদ করা হয়েছিল। ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও তিনি বৈঠক করেছিলেন। কিন্তু তারা আবার দখল শুরু করেছেন। এই দখল উচ্ছেদে আগামী মাসেই অভিযান শুরু হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর