মঙ্গলবার, ২ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

সবুজনগরী রাজশাহী

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

সবুজনগরী রাজশাহী

পদ্মার তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে সবুজে ঘেরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাজশাহী নগরী। বাতাসে ভাসমান মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কণা দ্রুত কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছে রাজশাহী শহর। এর ফলে নগরবাসী দুর্গন্ধমুক্ত নির্মল বাতাসে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিতে পারছেন। কংক্রিটের নগরীকে আরও সবুজ করতে মাসজুড়ে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচি। সিটি মেয়র ঘোষণা দিয়েছেন, বেশি গাছ লাগালে কমিয়ে দেওয়া হবে হোল্ডিং ট্যাক্স।

রাজশাহীকে নানা নামে ডাকা হয়, সবুজনগরী, শিক্ষানগরী, শান্তির নগরী, রেশমনগরী বা সিল্ক সিটি। রাজশাহীর পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত রিনা পি সোয়েমারনো তার রাজশাহীতে প্রথম সফরে এসে বলেন, ‘এখানকার চমৎকার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ দেখে আমি মুগ্ধ। এখানকার মানুষদের ভালো লেগেছে। রাজশাহী একটি পূর্ণাঙ্গ শহর।’

স্বাস্থ্যকর ও পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে দেশের সব শহরের চেয়ে এগিয়ে রাজশাহী। নগর উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও জিরো সয়েল প্রকল্প গ্রহণের কারণেই এ সাফল্য বলে জানিয়েছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। সংস্থাটির প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক জানান, ২০১৬ সালে যুক্তরাজ্যের দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বাতাসে ভাসমান মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কণা দ্রুত কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বিশ্বে এগিয়ে আছে রাজশাহী শহর। জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

এ ধারাবাহিকতা এখনো আছে জানিয়ে আশরাফুল হক বলেন, জিরো সয়েল প্রকল্পের কারণে এ মান অর্জন সম্ভব হয়েছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, পরিবেশ সুরক্ষা ও জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত প্রভাব ঠেকাতে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে রাসিক। বাতাসে ভাসমান মানবদেহের জন্য ক্ষুদ্র ধুলিকণামুক্ত হয়েছে নগরী। এর পাশাপাশি পুরো নগরীর সৌন্দর্যও বেড়েছে। নগরীর সড়ক বিভাজক সবুজায়নের আওতায় নেওয়া হয়েছে। নগরীর বেশিরভাগ অংশের সড়ক সুবজায়ন ও সৌন্দর্যবর্ধনের আওতায় আছে।

রাসিকের প্রধান প্রকৌশলী জানান, নগরীর প্রধান সড়ক বিভাজক ও সড়ক দ্বীপে ২০ ফুট অন্তর ৩৫০টি পামগাছ লাগানো হয়েছে। এর ভিতরে লাগানো হয়েছে রঙ্গন, কাঠ করবি, চেরি ও অ্যালামুন্ডা। এসবের নিচে লাগানো হয়েছে সবুজ হেজ। এরপর কাঠ ও বাঁশের আদলে তৈরি করা হয়েছে কংক্রিটের বেড়া। সব মিলিয়ে এখন দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠেছে পুরো নগরী। উন্নয়নকর্মী আরিফ ইথার জানান, নগরীকে চারদিক থেকে ঘিরে সবুজায়নের কাজ চলছে। রাজশাহী নগরীর পদ্মা নদীর পরিত্যক্ত পাড়ে বর্তমানে পরিকল্পিত পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। টাইলস দিয়ে হাঁটার পথ তৈরি করা হয়েছে। এটি এখন পদ্মার নির্মল বাতাসের একটি উৎস। নগরীর যে কোনো জায়গায় প্রাণভরে নিঃশ্বাস নেওয়া যায়। এ ছাড়া রাজশাহী নগরীর চারদিকে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে। নগরীর মধ্যে ডিজেলচালিত অটোরিকশার বদলে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলছে। এতে সবুজ গাছপালার ওপর কোনো প্রভাব পড়ে না। পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ার ক্ষেত্রে এসব উদ্যোগ কাজে আসছে।

স্কুল শিক্ষক তৌহিদ আরা জানান, কিছুদিন আগেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পরিচ্ছন্ন-সবুজ ক্যাম্পাস প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র। নগরীকে পরিচ্ছন্ন রাখতে বিভিন্ন সময় পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের শপথ পড়ান মেয়র। সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, বাংলাদেশের শহরগুলোর মধ্যে যদি পরিচ্ছন্নতা নিয়ে কোনো প্রতিযোগিতা হয়, তবে সেই প্রতিযোগিতায় রাজশাহী হবে এক নম্বর। আমরা এতেই সন্তুষ্ট থাকতে চাই না। আমরা চাই রাজশাহীকে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অন্যতম সেরা শহরে পরিণত করতে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর