মঙ্গলবার, ২ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প এখন জঙ্গল

বড় বড় দেশি গাছ কেটে আমদানি করা ১২-১৫ ফুট উচ্চতার বনসাই গাছ লাগানোর ফলে এ প্রকল্পের কার্যকারিতা নিয়ে সমালোচনা হয়েছিল

নিজস্ব প্রতিবেদক

সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প এখন জঙ্গল

সড়কের দুপাশের বনসাই ঢেকে গেছে আগাছায়। অযত্ন-অবহেলায় রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের বনসাই পরিণত হয়েছে গুল্মলতার ঝোপে। দৃষ্টিনন্দন ছায়া সুুনিবিড় করার পরিকল্পনা থাকলেও কাজ শেষ না করেই ফেলে রাখা হয়েছে মুর‌্যালসহ বিভিন্ন স্থাপনা।

২০১৭ সালের শুরুতে ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ বনানী-বিমানবন্দর সড়কের ধারের কৃষ্ণচূড়া, রাঁধাচূড়া এবং অন্যান্য জাতের গাছ কেটে বিদেশ থেকে আমদানি করা তিন কোটি টাকার ফাইকাস বনসাই গাছ লাগানো হয়। ওই সময় রাস্তার ধারের সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। সবুজায়ন এবং অক্সিজেন সরবরাহের সক্ষমতা এ গাছগুলোর আছে কি না তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছিল। বড় বড় দেশি গাছ কেটে আমদানি করা ১২-১৫ ফুট উচ্চতার বনসাই গাছ লাগানোর ফলে এ প্রকল্পের কার্যকারিতা নিয়ে সমালোচনা হয়েছিল।

সড়ক ও ফুটপাতের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজটি মূলত সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধানে ‘বনানী ওভারপাস টু এয়ারপোর্ট বিউটিফিকেশন’ প্রকল্পের আওতায়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভিনাইল ওয়ার্ল্ড গ্রুপ নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্প শুরু করে।

সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের এ বেহাল দশা সম্পর্কে জানতে চাইলে ভিনাইল ওয়ার্ল্ড গ্রুপের স্বত্বাধিকারী আবিদ মনসুর বলেন, ‘প্রকল্পটি এখনো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বনসাইয়ের পাশাপাশি প্রায় তিন লাখ দেশি গাছ লাগানো হয়েছে। তবে ছোট অবস্থায় থাকায় চোখে পড়ছে না।’ অপরিচর্যার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বনসাই গাছ ছাঁটতে হয়। কিন্তু সমালোচনা হওয়ায় বনসাই গাছ নতুন করে ছাঁটা হচ্ছে না। তবে শিগগিরই নতুন করে সাজানো হবে।’

সরেজমিন দেখা যায়, রাস্তার দুপাশই আগাছায় ভরে উঠেছে। দীর্ঘদিন আগাছা পরিষ্কার না করায় বনসাই গাছগুলো সেভাবে নজরে আসছে না। ফলে রাস্তার সৌন্দর্য আগের তুলনায় নষ্ট হয়েছে। অপরদিকে গাছের ছায়া না থাকায় পথচারীরা রোদে পুড়ে যাতায়াত করছেন। রাস্তার পাশের মুর‌্যালগুলো অযতেœ পড়ে আছে। প্রকল্পের আওতায় তৈরি যাত্রী ছাউনিগুলোর কাজ অসমাপ্ত পড়ে আছে। পথচারী ওমর ফারুক বলেন, ‘বনসাই গাছের পরিবর্তে এখানে অন্যান্য গাছ থাকলে অন্তত ছায়ায় চলাচল করা যেত। বনসাই থাকায় ছায়ায় আশ্রয় নেওয়ার মতো জায়গা এ পথে নেই।’

নগর বিশ্লেষক মোবাশ্বের হোসেন বলেন, রাস্তার পাশে সবসময় এমন গাছ লাগাতে হয়, ‘সারা বছর যার পাতা থাকে। যেমন শিশু গাছ, মূল্যবান কাঠের গাছ। এসব গাছ ক্ষতিকারক কার্বনডাই অক্সাইড টেনে নিয়ে দ্রুত অক্সিজেন ছাড়ে, রাস্তায় ছায়া দেয়। আয়ুও হয় অনেক দীর্ঘ।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার জানা মতে, বিশ্বের কোথাও রাস্তার পাশে এ ধরনের বনসাই গাছ নেই। আমরা প্রথম থেকে এ প্রকল্পের বিরোধিতা করেছি, আন্দোলন করেছি। এখন তা ব্যর্থ হচ্ছে। তিন বছর আগে পরিকল্পিতভাবে ছায়াদানকারী গাছ লাগালে আজ তা অনেক বড় হয়ে যেত। তাই এখনো সময় থাকতে সঠিক পরিকল্পনা করে বনসাইয়ের পাশাপাশি দেশি বৃক্ষরোপণ করা যেতে পারে।

সর্বশেষ খবর