মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ফার্নেস হালদা নদীতে!

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ফার্নেস হালদা নদীতে!

চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ১১ মাইল এলাকায় অবস্থিত ‘হাটহাজারী ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্লান্ট’। এর প্রায় ৩০০ মিটার দূরেই আছে মরাছড়া খাল। এ খালের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত উপমহাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্যপ্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীর। অথচ কোনো পরিশোধন ছাড়াই পিকিং পাওয়ার প্লান্টের পোড়া ফার্নেস ওয়েল এ খালেই ফেলা হচ্ছে। গত সোমবার হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ রুহুল আমীন সরেজমিন পরিদর্শন করে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সরাসরি দূষিত কালো ফার্নেস তেল এ খালে পড়তে দেখে পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক বরাবরে ‘হাটহাজারী ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্লান্ট কর্তৃক পরিবেশ দূষণ সংক্রান্ত’ একটি চিঠি দেন। চিঠিতে বলা হয়, ‘হাটহাজারী পৌরসভাস্থ ১১ মাইল এলাকার ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্লান্টের বিদ্যুৎ উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত পোড়া ফার্নেস তেল নালার মাধ্যমে মরাছড়া খালে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ওই খাল সরাসরি হালদার সঙ্গে সংযুক্ত।’ চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশ অধিদফতর পাওয়ার প্লান্টের ব্যবস্থাপককে ঘটনার সত্যতা জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন। 

হাটহাজারী উপজেলার ইউএনও মুহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, ‘আমরা বিদ্যুৎ চাই, হালদা নদীও চাই। কিন্তু উপমহাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্যপ্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীকে এভাবে গলাটিপে হত্যা করার মতো দূষণ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন কোনোমতেই সমর্থন যোগ্য নয়। তারা রাতের অন্ধকারে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে হালদায় বর্জ্য ফেলছে। এ ব্যাপারে আমি পরিবেশ অধিদফতরকে চিঠি দিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বর্জ্য শোধনাগার করার কথা থাকলেও তা না করে প্রতারণা করে আসছে। উল্টো তারা বৃষ্টি হলেই নানা কৌশলে তাদের বর্জ্য এ খালেই ফেলছে।’

পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক আজাদুর রহমান মল্লিক বলেন, ‘কারখানার তরল বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) স্থাপন করা হয়নি। সঠিকভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে না বলে দূষিত বর্জ্য নির্গত হচ্ছে এবং পরিবেশ ও প্রতিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। তাছাড়া কারখানার সৃষ্ট তরল বাইপাস ড্রেনের মাধ্যমে পরিবেশের নির্গত হচ্ছে। তাই এ ব্যাপারে তাদের ব্যাখ্যা দিতে বলেছি।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হালদা রিচার্স ল্যাবরেটরির সমন্বয় অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পরিশোধন ছাড়াই মরাছড়া খালে ফেলে আসছে। ইতিপূর্বে তাদের জরিমানাও করা হয়েছে। তবুও তারা দূষিত ফার্নেস অয়েল ফেলা বন্ধ করেনি। অথচ এসব দূষিত তেল সরাসরি গিয়ে পড়ছে হালদা নদীতে।’

হাটহাজারী পিকিং পাওয়ার প্লান্টের ব্যবস্থাপক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শফি উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘প্রবল বর্ষণের কারণে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিতরের নালাগুলো ও রাস্তা পানিতে ভেসে যায়। ফলে কিছু তেল ধুয়ে হয়তো নালা দিয়ে বাইরে চলে গেছে। পরিবেশ অধিদফতরের শুনানিতে আমরা বিষয়টি উপস্থাপন করব।’ স্থানীয়দের অভিযোগ, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সব সময় বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করে। বৃষ্টি হলেই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অপরিশোধিত বর্জ্য খালে ফেলা হয়। এগুলো সরাসরি হালদা নদীতে পড়ছে। এভাবেই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বর্জ্যে দূষিত হয়ে চরম হুমকিতে পড়েছে হালদা নদীর জীববৈচিত্র্য। এর আগে হালদা নদীতে বর্জ্য ফেলার কারণে তাদের ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল।

 

সর্বশেষ খবর