মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

গরিবের হাসপাতাল ইজারা!

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

গরিবের হাসপাতাল ইজারা!

গরিবদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় চালু করা হয়েছিল সিটি হাসপাতাল। মাত্র ২০ টাকায় গরিব মানুষরা সেখান থেকে সপ্তাহজুড়ে চিকিৎসাসেবাসহ ওষুধ পেতেন। কিন্তু সেই গরিবের হাসপাতালটি ইজারা দিয়েছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক)। বেসরকারি উদ্যোক্তাদের হাতে ছেড়ে দেওয়ায় নগরীর হাজার হাজার গরিব মানুষ চিকিৎসাসেবা ও ফ্রি ওষুধ থেকে বঞ্চিত হবেন। এ নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে নগরবাসীর মধ্যে। তাদের দাবি, ব্যক্তি স্বার্থে হাসপাতালটি ইজারা দিয়ে গরিব মানুষদের চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত করা হলো। এখন ইজারা গ্রহণকারীরা বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মতো ইচ্ছেমতো অর্থ আদায় করবেন। চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হবেন ছিন্নমূল গরিব মানুষ। জানা গেছে, স্বাধীনতার পরপরই রাজশাহীর নগরীর রানীনগর এলাকায় আরবান ডিসপেনসারি নাম দিয়ে একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয় প্রায় দুই একর জায়গা নিয়ে। প্রথম দিকে এটি রাজশাহী সিভিল সার্জনের আওতায় পরিচালিত হতো। তখন থেকেই এ হাসপাতালটি নগরীর গরিব, অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষদের কাছে আস্থার প্রতীক হয়েছিল। পরে হাসপাতালটিতে আরও আধুনিকায়ন করে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের আওতায় নেওয়া হয়। এরপর থেকে এটিকে সিটি হাসপাতাল নামকরণ করা হয়। তখন থেকে হাসপাতালটিতে মাত্র ২০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে পুরো এক সপ্তাহজুড়ে চিকিৎসা করাতে পারতেন গরিব, অসহায় রোগীরা। এমনকি এ হাসপাতালে মাত্র ১০০ টাকায় নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান প্রসব করানো হতো। সিজারের প্রয়োজন হলে ওষুধসহ সর্বোচ্চ ব্যয় হতো মাত্র ৫ হাজার টাকা। গত ২ জুলাই হাসপাতালটি তুলে দেওয়া হলো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে। ওইদিন সকালে মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বেসরকারি কোম্পানিকে হাসপাতালটি তুলে দেন। সেই সঙ্গে গরিবের হাসপাতাল নামে পরিচিত ‘সিটি হাসপাতালটি’ও এখন থেকে পরিণত হয় ধনীদের হাসপাতালে। কারণ এখন এ হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে যে ব্যয় হবে, সেটি পরিশোধ করতে পারবেন না নগরীর গরিব ও অসহায় মানুষরা। নগরীর সাধুর মোড়ের বাসিন্দা হযরত আলী বলেন, এ হাসপাতালেই আমার দুটি সন্তান হয়েছে মাত্র ১০০ টাকা করে জমা দিয়ে। কিন্তু এখন হাসপাতালে ভর্তি হতেই নাকি ৩০০ টাকা লাগবে। আর প্রতিদিনের বেড ভাড়া দিতে হবে ৩০০ টাকা করে।

জানা গেছে, ‘সেলট্রন’ নামের একটি বেসরকারি কোম্পানি প্রথম বছরে মাত্র ১২ লাখ টাকায়, দ্বিতীয় বছরে ১৮ লাখ টাকা এবং তৃতীয় বছর থেকে ২০ লাখ টাকা হারে নিয়ে সিটি হাসপাতালটি ইজারা দিয়েছে রাসিক।

সুশাসনের জন্য নাগরিক রাজশাহী জেলা কমিটির সভাপতি আহমেদ শফিউদ্দিন বলেন, ‘রাসিকের এ সিদ্ধান্তের ফলে রীতিমতো গরিব নাগরকিদের তাদের চিকিৎসসেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত করা হলো। এটা সম্পূর্ণ বেআইনি। একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান এভাবে ইজারা দিতে পারে না রাসিক।

সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘নগরীতে সাধ্যের মধ্যে আধুনিক চিকিৎসা সেবা দিতে যাত্রা শুরু করল সিটি হাসপাতাল। চিকিৎসা সেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাজশাহী সিটি হাসপাতাল নতুন যাত্রা শুরু করল। রাজশাহীসহ আশপাশের অঞ্চলের রোগীদের সঠিক সেবা দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে সেলট্রন বদ্ধপরিকর।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর