মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

কে সরাবে ছাদের পানি

জয়শ্রী ভাদুড়ী

কে সরাবে ছাদের পানি

সরকারি হোক কিংবা ব্যক্তিমালিকানাধীন হোক, ভবনের ছাদ পরিষ্কারের দায়িত্বে কেউ নেই : জয়ীতা রায়

রাজধানীর নয়াপল্টনে তিনতলা বাসার ছাদে বৃষ্টি হলেই পানি জমে থাকে। ছাদের পানির ট্যাঙ্কির পাশের নিচু জায়গার জমাট বাঁধা পানিতে সংসার পেতে বসেছে অসংখ্য মশক দম্পতি। স্বচ্ছ পানিতে মশার লার্ভা বেড়ে উঠলেও পরিষ্কারে কোনো আগ্রহ নেই ভবন মালিকদের। পাশের বাড়িতেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন অনেকে। মশার বংশবিস্তারের তৈরির অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে রাখার বিষয়ে অভিযোগ দিয়ে কাজ না হওয়ায় পাশের বাসা থেকে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দিয়েছেন প্রতিবেশীরা।

এ রকম রাজধানীর অনেক বাড়ির ছাদ কিংবা বেলকুনির কার্নিশে পানি জমে থাকলেও পরিষ্কার করছে না কেউ। বাড়ির মালিকের অসচেতনতার কারণে নিরাপদে বেড়ে উঠছে এডিস মশা। ছাদের জমাট বাঁধা পানি নিয়ে মাথাব্যথা নেই সিটি করপোরেশনেরও। প্রতিটি বাড়ির ছাদ নিরীক্ষণের মতো উদ্যোগ কিংবা সামর্থ্য নেই সিটি করপোরেশনের। শুধু বাসাবাড়ি নয় সরকারি প্রতিষ্ঠানের ছাদেও জমে থাকছে বৃষ্টির পানি। এগুলো পরিচ্ছন্নতায় নেই কোনো উদ্যোগ।

রাজধানীর খিলগাঁও তালতলা সোসাইটি পানির পাম্পের জন্য নির্মিত একতলা ভবনের ছাদে দীর্ঘদিন জমে থাকছে পানি। এই এলাকার ঘরে ঘরে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী

থাকলেও টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের। ওয়াসার এই পানির পাম্পের ছাদের স্বচ্ছ পানিতে লার্ভা ছাড়ছে এডিস মশা। সরকারি এসব প্রতিষ্ঠানের ছাদে দীর্ঘদিন জমে থাকছে পানি। কিন্তু কর্তৃপক্ষের অবহেলায় এডিস মশার নিরাপদ চারণ ভূমি হয়ে উঠেছে। রাজধানীজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে ওয়াসার একতলা বিশিষ্ট পানির পাম্প। এগুলোর অধিকাংশ ছাদ বছরে একবারও পরিষ্কার করা হয় না। শ্যাওলা থেকে শুরু করে আগাছা জন্মেছে ছাদে। এখানে অনুকূল পরিবেশে বেড়ে উঠছে এডিস মশা। শুধু সরকারি এসব ভবন নয় ব্যক্তিমালিকানাধীন ছাদও মশার বংশবিস্তারের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। এর মধ্যে বড় অংশ রয়েছে নির্মাণাধীন ভবনের ছাদে জমাট বাঁধা পানি।

রাজধানীর পূর্ব নাখালপাড়া এলাকায় একটি বাসার বেলকুনির বর্ধিত অংশে দীর্ঘদিন জমে আছে পানি। প্রতিবেশীদের নজরে আসলে তারা বাড়ির মালিককে পানি পরিষ্কার করার জন্য বললেও আমলে নেননি তারা। পাশের বাড়ির বাসিন্দা ফাহমিদ হোসেন বলেন, এই বাড়ির মালিককে কয়েক দফা পানি পরিষ্কার করার জন্য বললেও তারা কথা কানেই তুলছেন না। অথচ বারবার গণমাধ্যমে সচেতনতামূলক বার্তায় বলা হচ্ছে এসব জমাট বাঁধা পানিতে এডিস মশা বংশবিস্তার করে। এসব অসচেতন মানুষ নিজেদেরসহ প্রতিবেশীদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলছেন।     

রাজধানীর আনসার ক্যাম্প এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনের ছাদে দীর্ঘদিন ধরে জমে রয়েছে পানি। ছাদের ওপরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে পানির ট্যাঙ্কি। সেখানে জমাট বাঁধা পানিতে কিলবিল করছে মশার লার্ভা। এ ছাড়া চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পানি ভর্তি পলেথিন, মুখ খোলা প্লাস্টিকের বোতল। খোলা বোতলে জমছে বৃষ্টির স্বচ্ছ পানি। ভবনের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য বোতল, ক্যান, প্লাস্টিকের খাবারের প্যাকেট। বৃষ্টির পানি জমছে এগুলোর ভিতরে। বেশ কিছুতে লার্ভা ছেড়েছে মশা। এই ভবনের কেয়ারটেকার ছানোয়ার আলী বলেন, প্রায় ছয় মাস ধরে নির্মাণ বন্ধ রয়েছে। কাজ বন্ধ হওয়ার পরে ছাদের পানি কিংবা চারপাশ পরিষ্কার করা হয়নি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ কীটতত্ত্ব ড. বিএন নাগপাল গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে এসেছিলেন। রাজধানীর স্বাস্থ্য অধিদফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, মাত্র ২ মিলিমিটার জমাট বাঁধা পানিতেই এডিস মশা বংশবিস্তার করতে পারে। নির্মাণ প্রকল্পের কারণে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। নির্মাণাধীন ভবনের এডিসের প্রজননস্থল ধ্বংস করলে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ৪০ শতাংশ কমানো সম্ভব। এ ব্যাপারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে সচেতনতা তৈরি এবং এডিস মশার উৎস ধ্বংস করতে আমরা আজ থেকে চিরুনি অভিযান শুরু করছি। যেসব বাড়িতে মশার লার্ভা পাওয়া যাবে তাদের প্রধান ফটকে স্টিকার লাগানো হবে। পুনরায় যদি ওই বাড়িতে এডিসের লার্ভা পাওয়া যায় তবে তাদের জরিমানা করা হবে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোতে এডিসের লার্ভা পাওয়া গেলে জরিমানা করছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। আমরা চেষ্টা করছি নগরবাসীকে সচেতন করে সঙ্গে নিয়ে এই সমস্যার মোকাবিলা করতে।

 

সরকারি ভবনের ছাদ পরিষ্কার করার কেউ নেই : মোবাশ্বের হোসেন

নগর বিশেষজ্ঞ ও স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে এডিস মশার দ্রুত বিস্তার ঘটছে। এজন্য সমন্বিতভাবে এর বিরুদ্ধে সবাইকে নিয়ে চেষ্টা চালাতে হবে। রাজধানীর ৯৯ শতাংশ সুউচ্চ ভবনের নিচে পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে। সেখানকার স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশার বিস্তার ঘটছে। নগর ভবনের ছাদে গেলেও দেখা যাবে সেটি তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। সেই ছাদের দায়িত্বে কেউ নেই। প্রত্যেক সরকারি অফিস, ভবনের ছাদ অরক্ষিত। সেখানে পানি জমে। সেই স্বচ্ছ পানি পরিষ্কার করার কেউ নেই। বড় সাহেবদের টেবিল পরিষ্কার করার দায়িত্বে লোক আছে কিন্তু ভবনের ছাদ পরিষ্কার করার দায়িত্বে কেউ নেই। এই অব্যবস্থাপনা দূর করতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর