মঙ্গলবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা
হাজারীবাগ খাল

বর্জ্যে বন্ধ হাজারীবাগ খাল

জয়শ্রী ভাদুড়ী

বর্জ্যে বন্ধ হাজারীবাগ খাল

হাজারীবাগ খাল পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে ছবি : জয়ীতা রায়

খাল শুধু কাগজে-কলমে, বাস্তবে ময়লার ভাগাড়। পলিথিন থেকে শুরু করে গরুর চামড়া, শিং, পুরনো কাপড়ের স্তূপে বন্ধ হয়ে রয়েছে খাল। পানি প্রবাহ নেই বললেই চলে। খাল পাড়েও রয়েছে স্তূপাকৃতির ময়লা। দুর্গন্ধে নাক চেপে যাতায়াত করতে হয় রাজধানীর মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকার হাজারীবাগের এই খালপাড় দিয়ে যাতায়াতকারী মানুষকে।

সরেজমিন বেড়িবাঁধ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, হাজারীবাগের খালপাড় ঘেঁষে সামনে এগোলেই এখনো রয়েছে বেশ কিছু কাঁচা চামড়ার আড়ত। এখানে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে উচ্ছিষ্ট অংশ ফেলা হয় খালে। খালের ময়লার স্তূপে গরু, ছাগলের চামড়ার পাশাপাশি পড়ে রয়েছে শিং, খুর, বাঁশের চাটাই। এ ছাড়া পাটের বস্তা, প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে ফেলে রাখা হয়েছে ময়লা। খালের পাড়ে প্রায় ৫০টি বস্তায় ভরে ফেলে রাখা হয়েছে পশুর হাড়। ময়লার স্তূপের ওপর খালের এপার থেকে ওপারে যেতে বানানো হয়েছে বাঁশের সাঁকো। মাত্র ১০ ধাপ দিলেই পার হওয়া যাচ্ছে খাল। খাল দখল করে চলছে বিস্তর ব্যবসা-বাণিজ্য। খালপাড়ে গড়ে তোলা হয়েছে পশুর হাড়ের ব্যবসা। হাড় ছাড়িয়ে অপ্রয়োজনীয় অংশ ফেলা হয় খালে। চামড়ার আড়তের কর্মচারী বেলাল বলেন, চামড়ার উচ্ছিষ্ট জমা করে রাখলে সিটি করপোরেশনের গাড়ি এসে নিয়ে যায়। কিন্তু অনেক সময় না এলে কিংবা দেরি হলে খালে ফেলা হয়। শুধু আড়তের বর্জ্য নয়, খালে ফেলা হয় বাসাবাড়ির বর্জ্যও।

এলাকার বাসিন্দা আবদুস সালাম বলেন, সন্ধ্যার পরে অনেকেই খালে ময়লা ফেলে। বাসাবাড়ির বর্জ্যরে পাশাপাশি দোকানের মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্যও ফেলা হয়। পলিথিন থেকে শুরু করে বাঁশের ঝুড়ি কী নেই এই খালের মধ্যে। দুর্গন্ধে রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করা যায় না।

পাশের মুদি দোকানি জহির হোসেন বলেন, খালের নোংরা পানিতে মশার বসবাস। সন্ধ্যা হতেই ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসে মশা। মশার কামড়ে দোকানে, বাসায় অতিষ্ঠ অবস্থা। প্রতিনিয়ত ময়লার স্তূপে খাল ভরাট হয়ে গেলেও পরিষ্কারে নজর নেই কর্তৃপক্ষের। তিনি আরও বলেন, এই খালটির কিছু অংশ উত্তর আর কিছু অংশ দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে পড়েছে। তবে কেউই এই খাল পরিষ্কার করে না।

এ ব্যাপারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমোডর মো. জাহিদ হোসেন বলেন, ময়লায় ভরাট অংশটুকু ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ভিতরে। আমরা নিয়মিত পরিষ্কার করি। এ ছাড়া লালবাগ এলাকায় চামড়ার আড়তের উচ্ছিষ্ট প্রচুর বর্জ্য আমরা অপসারণ করে নিয়ে গেছি।

উল্লেখ্য, বুড়িগঙ্গা দূষণের অন্যতম মাধ্যম হাজারীবাগ ট্যানারি সরিয়ে নেওয়া হলেও দূষণ মোটেও কমছে না। এলাকাবাসী নির্বিচারে ময়লা ফেলার কারণে খালের বিভিন্ন অংশ বন্ধ হয়ে গেছে। পানি প্রবাহের কোনো ব্যবস্থাই এখন আর অবশিষ্ট নেই। সরেজমিন দেখা যায়, খাল থেকে বর্জ্যযুক্ত পানি বুড়িগঙ্গায় গিয়ে পড়ছে। এখন দুর্গন্ধে নদীর পাড়ে দাঁড়ানোই যায় না। এ ছাড়া শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি ও চর্ম রোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এখানকার বাসিন্দারা। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বুড়িগঙ্গা দূষণের জন্য নদীপাড়ের কলকারখানা, ঢাকা ওয়াসা ও ঢাকা সিটি করপোরেশন বড় ভূমিকা পালন করছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বুড়িগঙ্গা দূষণের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৬০ ভাগ ঢাকা ওয়াসা ও ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দায়ী করা হয়েছে। বাকি ৪০ ভাগ অপর প্রতিষ্ঠানগুলোকে দায়ী করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

ঢাকার বিভিন্ন কলকারখানা থেকে ৯০ হাজার ঘনমিটার বর্জ্যসহ দেড় কোটি ঢাকাবাসীর দৈনিক ১৩ লাখ ঘনমিটার পয়ঃবর্জ্য উৎপাদিত হয়। এগুলো পরিশোধনের জন্য ঢাকা ওয়াসার ১ লাখ ২০ হাজার ঘনমিটার পরিশোধন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি অত্যাধুনিক পরিশোধনাগার রয়েছে।

বর্তমানে যেটিতে মাত্র ৫০ হাজার ঘনমিটার পরিশোধন করা যায়। এটি ঠিকমতো কাজ না করায় বাকি ১২ লাখ ৫০ হাজার ঘনমিটার পয়ঃবর্জ্য অপরিশোধিতভাবে সরাসরি বুড়িগঙ্গায় গিয়ে পড়ে। ফলে দূষিত হচ্ছে নদীর পরিবেশ।

 

 

সর্বশেষ খবর