মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

তবুও তৈরি হয়নি জনসচেতনতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

তবুও তৈরি হয়নি জনসচেতনতা

নিরাপদ সড়কের দাবিতে নজিরবিহীন শিক্ষার্থী আন্দোলনের এক বছর পেরিয়ে গেলেও যাত্রী-পথচারীদের মধ্যে তৈরি হয়নি সচেতনতা। সড়কে আসেনি শৃঙ্খলা। রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে গত বছরের ২৯ জুলাই দুই বাসের রেষারেষিতে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় নজিরবিহীন বিক্ষোভের জন্ম দেন শিক্ষার্থীরা। এরপর ইউনিফর্ম পরে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালনে নেমে পড়েন শিক্ষার্থীরা। তখন ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করায় অনেক এমপি, সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা, এমনকি পুলিশ সদস্যকে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়তে হয়। দুই দিনেই শিক্ষার্থীরা বদলে ফেলেন রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থা। ফিরে আসে শৃঙ্খলা। লেন মেনে চলতে বাধ্য হয় সব গাড়ি। পথচারীরা রাস্তা পারাপারে জেব্রা ক্রসিং ও ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার শুরু করেন। ওই ঘটনার ১৩ মাসের মাথায় রাজধানীর সড়কগুলোতে ফের সেই অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা। মানুষের মধ্যে এক বছরও স্থায়ী হয়নি সেই সচেতনতা।

রাজধানী ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ ফুট ওভারব্রিজের নিচ দিয়েই পারাপার হচ্ছে মানুষ। হাত উঁচু করে ৪০-৫০ কিলোমিটার গতিতে চলা গাড়ি থামিয়ে দিয়ে দৌড়ে চলে যাচ্ছে রাস্তার একপাশ থেকে অন্য পাশে। এমনকি যে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সড়কে ফিরে এসেছিল শৃঙ্খলা, সেই শিক্ষার্থীরাই ব্যবহার করছেন না জেব্রা ক্রসিং বা ফুটওভারব্রিজ। রাজধানীর ১০ নম্বর গোলচত্বর, উত্তরার হাউজবিল্ডিং, বাংলামোটরসহ বিভিন্ন এলাকার ফুটওভারব্রিজের নিচ দিয়ে স্কুলগামী বাচ্চার হাত ধরে অনেক অভিভাবককেও ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হতে দেখা গেছে। অথচ সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর সেই আন্দোলনে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন এই অভিভাবকরাও। তবে যেসব এলাকায় সড়ক বিভাজনকে লোহা ও গাছ দিয়ে তৈরি উঁচু বেড়া দেওয়া আছে সেসব এলাকাতে ফুটওভারব্রিজ দিয়েই মানুষ পারপার হতে দেখা গেছে। ঠিক যেমনটা শাহীন কলেজের সামনের ফুটওভারব্রিজ দিয়ে পার হতে দেখা গেছে শত শত মানুষ। উত্তরার হাউজবিল্ডিং এলাকায় ৭ বছরের বাচ্চা নিয়ে দৌড়ে ব্যস্ত রাস্তা পার হওয়া ফিউচার ফাউন্ডেশন স্কুলের এক শিক্ষার্থীর মা বলেন, বাচ্চার স্কুলের দেরি হয়ে যাওয়ায় ফুটওভারব্রিজে ওঠেননি। অন্য সময় তিনি এভাবে পার হন না। জেব্রা ক্রসিংয়ে হাত উঁচু করলে কোনো গাড়ি থামে না বলেও অভিযোগ তার। একই স্থানে ফুটওভারব্রিজ দিয়ে রাস্তা পার হওয়া ব্যক্তিরা বলেন, এ দেশে বাধ্য না করলে কেউ কথা শুনতে চায় না। শিক্ষার্থীরা বাধ্য করেছিল, তখন সবাই সচেতন হয়ে গিয়েছিল। এখন শিক্ষার্থীরাও সেটা মানছে না। যেসব স্থানে সড়ক বিভাজনকে উঁচু বেড়া দেওয়া আছে সেখানে ঠিকই মানুষ ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার করছে। তবে ফুটওভারব্রিজের সংখ্যা কম হওয়া ও জেব্রা ক্রসিংয়ে গাড়ি না দাঁড়ানোর কারণেও অনেকে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। এ ব্যাপারে পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এস এম সালেহ উদ্দিন বলেন, গত কয়েক বছরে ঢাকায় অনেক ফুটওভারব্রিজ তৈরি হয়েছে। কিন্তু মানুষ সেগুলো দিয়ে পার হয় না। আবার জেব্রা ক্রসিংয়ে চালক গাড়ির গতি কমায় না। উন্নত দেশগুলোতে এজন্য চালক ও পথচারী উভয়ের জরিমানা হয়। এখানেও তেমন করতে হবে।

সর্বশেষ খবর