মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ঢাকায় চলবে ইলেকট্রিক ট্রেন

জয়শ্রী ভাদুড়ী

ঢাকায় চলবে ইলেকট্রিক ট্রেন

ট্রেন যাত্রা হবে স্বাচ্ছন্দ্যময় : রাজধানীর সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ ও জয়দেবপুরের যাতায়াতে স্বচ্ছন্দ আনতে ইলেকট্রিক ট্রেন চালুর লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। বর্তমানে টঙ্গী-জয়দেবপুর এবং নারায়ণগঞ্জ থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ সকালে ঢাকায় এসে অফিস ও অন্যান্য কাজ সেরে বিকালে ফিরে যান। সড়কে যানজটের কারণে যাত্রীরা নির্ভরশীল রেলপথের ওপর। ঢাকামুখী ট্রেনগুলোতে প্রচ- ভিড় থাকে। ইলেকট্রিক ট্রেন চালু হলে এ যাত্রা হবে স্বাচ্ছন্দ্যের। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ট্রেনে ভিড়। গতকাল কমলাপুর থেকে তোলা ছবি : জয়ীতা রায়

যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এসেছে পরিবর্তন। রেলযোগাযোগে বিরতিহীন ট্রেনসহ চালু হয়েছে নানামুখী উদ্যোগ। এবার রাজধানী থেকে অন্য জেলা শহরগুলোতে যাতায়াতের জন্য ইলেকট্রিক ট্র্যাকশন চালুর উদ্যোগ নিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া দ্রুতগতির বুলেট ট্রেন চালুর পরিকল্পনাও হাতে নিয়েছে মন্ত্রণালয়। এই উদ্যোগে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে দেশের রেলওয়ের যোগাযোগ ব্যবস্থায়।

এ ব্যাপারে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে গত এক দশকে রেলওয়েকে ঢেলে সাজাতে এবং একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বহু কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ রেলওয়ে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-জয়দেবপুর রুটে ইলেকট্রিক ট্র্যাকশন চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে করে ট্রেনের গতি বাড়বে কয়েক গুণ। তিনি আরও বলেন, আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ায় নতুন এই উদ্যোগ আমরা গ্রহণ করতে পেরেছি। ইলেকট্রিক ট্র্যাকশন বসানো হলে রেলওয়ের খরচ কমবে এবং খুব দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাবে মানুষ। এ ছাড়া ঢাকার সঙ্গে জেলা শহরগুলোর যোগাযোগকে সহজ করতে হাইস্পিড বুলেট ট্রেনের সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে।

রেল মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম সেকশনে ইলেকট্রিক ট্র্যাকশন (ওভারহেড ক্যাটিনারি ও সাব-স্টেশন) প্রবর্তনের লক্ষ্যে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রস্তাব রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ২০১৫ সালের ৮ ডিসেম্বর পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। ওই সমীক্ষা প্রকল্পের ওপর পরিকল্পনা কমিশনে ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। পিইসি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৮১২ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে সমীক্ষা প্রস্তাব পুনর্গঠন করে ২০১৬ সালের ৩০ মার্চ ফের পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। ২০১৬ সালের ১৩ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে বৈদ্যুতিক ট্রেন চালুর অংশ হিসেবে গাজীপুর-নারায়ণগঞ্জ রুটে বৈদ্যুতিক ট্রেন প্রথম চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী ২০১৬ সালের ২৫ জুলাই পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্পের যৌক্তিকতা পর্যালোচনা বিষয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় নারায়ণগঞ্জ থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত সম্ভাব্যতা সমীক্ষার পরিবর্তে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা হয়ে জয়দেবপুর পর্যন্ত ইলেকট্রিক ট্র্যাকশন (ওভারহেড ক্যাটিনারি ও সাব স্টেশন নির্মাণসহ) প্রবর্তনের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা যেতে পারে বলে সিদ্ধান্ত হয়। গত ৭ জুলাই ঢাকা-চট্টগ্রাম সেকশনে ইলেকট্রিক ট্র্যাকশন প্রবর্তনের লক্ষ্যে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্পের ওপর পরিকল্পনা কমিশনে ফের পিইসির সভা হয়। প্রকল্পটি অনুমোদিত হলে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত বৈদ্যুতিক ট্রেন সার্ভিস চালুর সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে। সমীক্ষার প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বিনিয়োগ প্রকল্প গ্রহণ করে এর বাস্তবায়ন করা হবে। বর্তমানে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথে প্রতিদিন ১৬ জোড়া ট্রেন চলাচল করে। গাদাগাদি করে এই রুটে যাত্রীরা আসা-যাওয়া করে। প্রতিদিন গাজীপুর থেকে মতিঝিল এসে অফিস করেন ব্যাংক কর্মকর্তা ফয়জুর রহমান। তিনি বলেন, আমি প্রায় ১২ বছর ধরে এই রুটের নিয়মিত যাত্রী। এই রুটে যাত্রীর চাপ অনেক বেশি। আন্তঃনগর ট্রেনে কিছটা কম সময় লাগলেও লোকাল ট্রেনে অনেক সময় লাগে। আর ট্রেন মিস হলে তো বাসে পাঁচ ঘণ্টাতেও মতিঝিল পৌঁছাতে পারব না। তাই ইলেকট্রিক ট্রেন চালু হলে আমরা অল্প সময়ে স্বাচ্ছন্দ্যে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারতাম। বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী ঢাকা- চট্টগ্রাম ভায়া কুমিল্লা/লাকসাম রুটে দ্রুতগতির রেলপথ নির্মাণের জন্য একটি সমীক্ষা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ২০১৭ সালের ১৮ মার্চ প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। গত বছরের ৩১ মে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। বর্তমানে সমীক্ষা চলছে। এটি সম্পন্ন হলে প্রথমবারের মতো ঢাকা-চট্টগ্রামের মধ্যে দ্রুতগতির বুলেট ট্রেন চালু হবে। বুলেট ট্রেন চালু হলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে মাত্র ৫৭ মিনিট লাগবে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী।

সর্বশেষ খবর