মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ভেপিং কমিউনিটি ডোবাচ্ছে তারুণ্য

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

ভেপিং কমিউনিটি ডোবাচ্ছে তারুণ্য

সাধারণ ধূমপানকে পাশ কাটিয়ে কৌশলে গ্রহণ করা হচ্ছে ই-সিগারেট। আধুনিক এবং স্মার্ট হতে গিয়ে তরুণরা ক্রমে ঝুঁকছে এ ডিজিটাল সিগারেটের দিকে। সাধারণ সিগারেটের মতো এটিও গিলে খাচ্ছে তারুণ্য। সর্বনাশা ই-সিগারেটে আসক্ত হয়ে পড়ছে তারুণ্য।  

বর্তমানে এ সিগারেট ক্রমেই সহজলভ্য হয়ে যাচ্ছে। নিকট অতীতে এটি রাজধানীতে মিললেও এখন পাওয়া যাচ্ছে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে। সহজলভ্য হওয়ায় ই-সিগারেটসেবীদের সংখ্যাও  বাড়ছে। 

চট্টগ্রামে ই-সিগারেট মিলছে নগরীর নিউ মার্কেট, ভিআইপি টাওয়ার, জিইসি মোড় ও চকবাজার এলাকার বেশ কিছু দোকানে। তাছাড়া সোশ্যাল মিডিয়াতেও চলে ই-সিগারেটের বিকিকিনি। চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক গড়ে উঠেছে নানা নামে ফেসবুক গ্রুপ ও পেজ। এর মধ্যে আছে ‘ভেইপ হাউস চিটাগং’, ‘ভেইপ ট্রেইড অ্যান্ড একচেঞ্জ ইন চিটাগং’, ‘চিটিজি ভেইপ কমিউনিটি’। এসব ফেসবুক গ্রুপে সদস্যের সংখ্যা কয়েক হাজার। এর মধ্যে অধিকাংশই আবার স্কুল-কলেজ ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। অন্যদিকে উপজেলা পর্যায়েও পাওয়া যাচ্ছে ই-সিগারেট। গত মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার পৌরসভার চারটি দোকানে ই-সিগারেটের সন্ধান মিলে। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে আর বিক্রি না করার মুচলেকা দেন বিক্রেতারা। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, ‘স্কুল ফাঁকি দিয়ে দলবেঁধে ই-সিগারেট পান, অতঃপর বড় ভাইয়ের সান্নিধ্যে গিয়ে যোগ দেয় কিশোর গ্যাংয়ে। উপজেলার স্কুলগামী ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরাই মূলত ই-সিগারেটের ক্রেতা। এ ব্যাপারে অনেক স্কুলের প্রধান শিক্ষক অভিযোগও করেছেন। গতকাল চারটি দোকানে অভিযানে গেলে অনেক দোকানদার একমত যে, তারা তরুণ ও বাচ্চাদের কাছে ই-সিগারেট বিক্রি করেন। তবে বিষয়টি অন্যায় বলেও স্বীকার করেন। তিনি বলেন, কিশোর ক্রেতারা আরও বেশি দামের ই-সিগারেট আনতে বলে। কার্যত ১৪-১৫ বছরের কিশোররাই ই-সিগারেট নেয়। তাই কিশোরদের অধঃপতন রোধে এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকা জরুরি।’

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আলী আজগর চৌধুরী বলেন, ‘সাধারণ সিগারেটের মতোই ই-সিগারেটও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এ সিগারেটেও আছে নিকোটিন। আর নিকোটিন মানেই স্বাস্থ্যঝুঁকি। তরুণদের ধারণা, এ সিগারেট মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর নয়। অথচ এটি স্বাস্থ্যসহ নানা ক্ষতি করে। তাছাড়া এটি ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস হওয়ায় দুর্ঘটনার ঝুঁকিও আছে।’  

জানা যায়, উদ্ভাবনী কৌশল এবং আকর্ষণীয় ডিজাইনের কারণে কিশোর-তরুণ এবং স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ই-সিগারেট ক্রমে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কার্যত অনলাইনে বিভিন্ন পণ্য বিক্রয়ের ওয়েবসাইটে নজরকাড়া ই-সিগারেটের বিজ্ঞাপন কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে মিশে এ নেশায় আক্রান্ত হচ্ছে। এর সঙ্গে আছে নানা মাধ্যমে ই-সিগারেট বা ভেইপিংয়ের অভ্যাস গড়ে উঠছে শিশু-কিশোরদের মধ্যে।  

প্রসঙ্গত, ই-সিগারেট হলো ‘ইলেক্ট্রনিক্স নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেমস’-এক ধরনের ব্যাটারিচালিত ডিভাইস। যা ই-লিক্যুইড বা নিকোটিনযুক্ত তরল দ্রবণকে তাপের মাধ্যমে বাষ্পে রূপান্তরিত করে। একজন ব্যবহারকারী যখন ডিভাইসটিতে টান দেয়, তখন নিকোটিনের দ্রবণ গরমে বাষ্পীভূত হয় এবং ব্যবহারকারীকে নিকোটিন সরবরাহ করে। এতে নিকোটিন ছাড়াও নানা রকম রাসায়নিক এবং সুগন্ধি মেশানো থাকে, যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ইলেক্ট্রনিক সিগারেট বা ই-সিগারেট, ভ্যাপ বা ভ্যাপ পেনস্, ই-হুক্কা, ই-পাইপ এবং ই-সিগারেট প্রভৃতি পণ্যের বিভিন্ন ধরন। সাধারণ সিগারেট বা পাইপ আকৃতি ছাড়াও এগুলো দেখতে কলম, পেন ড্রাইভ কিংবা সিলিন্ডার আকৃতির হয়ে থাকে।

সর্বশেষ খবর