মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

অয়েল ট্যাংকার দুর্ঘটনা রোধে প্রস্তুতি দুর্বল

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

অয়েল ট্যাংকার দুর্ঘটনা রোধে প্রস্তুতি দুর্বল

দেশে প্রতিনিয়ত বাড়ছে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অয়েল ট্যাংকার পরিবহনে দুর্ঘটনাও। কিন্তু তেল পরিবহনে  ট্যাংকার দুর্ঘটনা মোকাবিলার প্রস্তুতি প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল এবং দুর্বল। পতিত তেল অপসারণে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষিত জনবল ও উপকরণ না থাকায় তা দ্রুত অপসারণ করা যায় না। ফলে দূষিত হয় নদীর পানি।     

জানা যায়, ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর অপরিশোধিত তরল বর্জ্য পড়ে নদী দূষণের অপরাধে একটি ফিশিং করপোরেশনকে ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা করে পরিবেশ অধিদফতর। ২০১৬ সালের ১৫ জুলাইয়ে দুই ট্যাংকারের সংঘর্ষে জ্বালানি তেল ছড়িয়ে পড়ে কর্ণফুলীতে। ২০১৫ সালের ১৯ জুন বোয়ালখালী উপজেলা বেঙ্গুরা এলাকায় সেতু ভেঙে জ্বালানি তেলবাহী একটি ট্রেনের ইঞ্জিনসহ তিনটি ওয়াগন বোয়ালখালী খালে পড়ে যায়। এর মধ্যে দুটি খালে ডুবে প্রায় ৫৫ হাজার লিটার তেল খাল হয়ে কর্ণফুলী নদীতে ছড়িয়ে পড়ে। সর্বশেষ গত ২৫ অক্টোবর ভোরে কর্ণফুলী নদীর ৩ নম্বর ডলফিন জেটি এলাকায় লাইটার জাহাজ ‘সিটি ৩৮’ ও তেলবাহী ট্যাংকার ‘দেশ-১’-এর মধ্যে সংঘর্ষে কর্ণফুলী নদীতে প্রায় ১০ টন তেল নদীতে পড়ে যায়। এভাবে অয়েল ট্যাংকার দুর্ঘটনায় পড়ার কারণে দূষিত হচ্ছে নদী, কমছে জীববৈচিত্র্য, নদী হারাচ্ছে প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য।  

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক নদী বিশেষজ্ঞ ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘বর্তমানে উন্নয়ন কর্মকা- বাড়ছে। সঙ্গে বাড়ছে ফার্নেস অয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যাও। এর বহুমাত্রিক ব্যবহারও চলছে। ফলে নদী ও সড়ক পথে নানাভাবে পরিবহন করা হচ্ছে। কিন্তু তেল পরিবহনে দুর্ঘটনা মোকাবিলা ও তেল অপসারণে দক্ষ জনবল এবং প্রযুক্তিসমৃদ্ধ উপকরণ অত্যন্ত দুর্বল। তাই আমরা মনে করি, ফায়ার সার্ভিসের মতো একটি প্রশিক্ষিত টিম থাকলে তারা জরুরি মুহূর্তে নদী থেকে দ্রুত তেল অপসারণ করতে সক্ষম হবে।’ তিনি বলেন, ‘নদীতে তেল পড়ার কারণে বহুমাত্রিক ক্ষতি হয়। তবে বেশি ক্ষতি হয় মাছের। তাই তেল পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা দ্রুত অপসারণ করা জরুরি।’

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘নদীতে অয়েল ট্যাংকার ফুটো হলে আমরা তাৎক্ষণিক তেল অপসারণে উদ্যোগ গ্রহণ করি। তেল অপসারণ জাহাজ বে-ক্লিনার-১ ও ২ এবং সাপোর্ট ভ্যাসেল কান্ডারি-৮, ১০ ও ১১ কাজ করে। এসব উপকরণ দিয়ে তেল অপসারণ করা হয়।’

চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে চট্টগ্রামে সরকারি -বেসরকারি প্রায় ১২টি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র আছে। এর মধ্যে আছে সরকারি ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার দোহাজারি পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং ১০০ মেগাওয়াট হাটহাজারী পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট।  বেসরকারি পর্যায়ে আছে ১০০ মেগাওয়াট জুলধা-১ একর্ন পাওয়ার প্ল্যান্ট,

১০০ মেগাওয়াট জুলধা-৩ একর্ন পাওয়ার প্ল্যান্ট, ১০৮ মেগাওয়াট এনার্জি প্যাক ইসিপিভিএল (এনার্জি প্যাক কনফিডেন্স পাওয়ার ভেঞ্চার লিমিটেড), ১১০ মেগাওয়াট বারাকা কর্ণফুলী পাওয়ার প্ল্যান্ট, ১০৫ মেগাওয়াট বারাকা শিকলবাহা পাওয়ার প্ল্যান্ট, ৩০০ মেগাওয়াট ইউনাইটেড পাওয়ার প্ল্যান্ট ও ৫৪ মেগাওয়াট জোডিয়াক পাওয়ার প্ল্যান্ট। প্রায়ই এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য সড়ক ও নদী পথে তেল পরিবহন করা হয়। এ সময় ঘটে নানা দুর্ঘটনা।

সর্বশেষ খবর