মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

উন্নয়নে অরক্ষিত ঢাকার ফুটপাথ

জয়শ্রী ভাদুড়ী

উন্নয়নে অরক্ষিত ঢাকার ফুটপাথ

রাজধানী ঢাকায় অনেকগুলো উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে ফুটপাথ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ভেঙে ফেলা হয়েছে ফুটওভারব্রিজও। মানুষ হাঁটছে মূল রাস্তা ধরে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। জাতীয় প্রেস ক্লাব ও দোয়েল চত্বর থেকে রবিবার তোলা ছবি : জয়ীতা রায়

সময় সকাল ৯টা বেজে ৪৫ মিনিট। রাজধানীর খামাড়বাড়ি মোড়ে বাস, প্রাইভেটকার, অটোরিকশা, মোটরসাইকেলের লম্বা লাইন। এদিকে উন্নয়ন কাজের জন্য কাটা পড়েছে ফুটপাথ। তাই গাড়ির পাশ গলেই যেতে হচ্ছে পথচারীদের। ট্রাফিক পুলিশ সিগন্যাল ছাড়তেই হুড়মুড় করে চলতে শুরু করে সব পরিবহন। হঠাৎ একটি মোটরসাইকেলের চাকা উঠে যায় পথচারী সালেহা বেগমের (৬০) পায়ে। পরবর্তীতে রিকশায় তুলে আশপাশের লোকজন তাকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করে। রাজধানীজুড়ে বিভিন্ন প্রকল্পের উন্নয়ন কাজ। এর ফলে উধাও হয়ে গেছে পথচারী চলাচলের জায়গা ফুটপাথ। এ ছাড়া অনেক জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ফুটওভার ব্রিজ, আন্ডারপাস। এতে করে ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে পথচারীদের, প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।

রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা যায়, খামাড়বাড়ি মোড় থেকে ফার্মগেট, বাংলামোটর, শাহবাগ এলাকায় ফুটপাথ ভেঙে ফেলা হয়েছে। সরিয়ে নেওয়া হয়েছে সড়কবাতি। উন্নয়ন কাজে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কারওয়ানবাজারের আন্ডারপাস প্রজাপতি গুহা। কারওয়ানবাজারে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষকে ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হয়। এখানে নিরাপদে রাস্তা পার হওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই।

দোয়েল চত্বর থেকে হাইকোর্ট মোড় পর্যন্ত রাস্তায় চলছে উন্নয়ন কাজ। প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে পল্টন মোড় পর্যন্ত রাস্তায় চলছে উন্নয়ন কাজ। ফুটপাথ এবং রাস্তার মাঝখানে ঘিরে চলছে উন্নয়ন কাজ। ব্যস্ত এ সড়কে যানজটের ফাঁকে যাতায়াত করছে মানুষ। সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ফুটওভার ব্রিজও। এ এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই থাকে সভা, সমাবেশ, মানববন্ধন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সরগরম থাকে এলাকা। প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে আসেন হাজারো মানুষ। এ এলাকায় রয়েছে অসংখ্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এ পথে যাতায়াতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয় পথচারীদের। রাস্তা পার হতে হয় গাড়ির আনাগোনা দেখে। প্রায় জল-কাদায় মাখামাখি হয়ে থাকে রাস্তা। দ্রুত গতিতে গাড়ি এলে অনেক সময় ঘটে দুর্ঘটনা।

প্রেস ক্লাবের সামনের চা বিক্রেতা মাইদুল মিয়া বলেন, ফুটপাথ না থাকায় রাস্তা দিয়ে মানুষকে যাতায়াত করতে হয়। চাপা জায়গায় হঠাৎ বাস চলে এলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ফুটওভারব্রিজ না থাকায় উন্নয়ন কাজের জন্য ঘিরে রাখা অংশের মাঝ দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে মানুষকে। সপ্তাহখানেক আগে এখানে রাস্তা পার হতে গিয়ে মা-মেয়ে আহত হয়েছেন। মতিঝিল এলাকায় উন্নয়ন কাজ চলছে বেশ জোরেসোরে। উন্নয়ন কাজের অংশ হিসেবে উধাও হয়ে গেছে ফুটপাথ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্মচাঞ্চল্য বাড়ে অফিসপাড়া মতিঝিলে। রোদে ধুলায় একাকার এলাকা। নাম-মুখ চেপে রাস্তা দিয়ে বাস, সিএনচিালিত অটোরিকশার ফাঁকফোকর গলে যাতায়াত করছে মানুষ। ফুটপাথ না থাকায় রাস্তায় নামতে হচ্ছে পথচারীদের। পাশেই মাইকে নতুন সড়ক আইন নিয়ে সচেতনতামূলক বার্তা প্রচার করা হচ্ছে। ফুটপাথ না থাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বারান্দায় দাঁড়িয়ে হ্যান্ডমাইকে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। এ পথে নিয়মিত যাতায়াত করেন রিমা হালিম। তিনি বলেন, দৈনিক বাংলামোড়ে বাস থেকে নেমে পাঁচ মিনিট হেঁটে অফিসে যেতে হয়। অনেক সময় দ্রুত গতিতে গাড়ি চলে আসে। আমি সব সময় ফুটপাথ দিয়ে হাঁটি, ফুটওভারব্রিজ দিয়ে রাস্তা পার হই। কিন্তু এখন আমি ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হতে বাধ্য হচ্ছি। আমি দুর্ঘটনায় আহত বা নিহত হলে এ দায় কে নেবে?

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেন, সেবা সংস্থার সমন্বয়হীনতায় রাজধানীবাসীকে এ দুর্ভোগ পোহাতে হয়। মেট্রোরেলের পরিকল্পনা আগেই চূড়ান্ত ছিল, তাহলে কোটি টাকা খরচ করে ফুটপাথ কেন তৈরি করা হলো। খরচ করবে আর ভাঙবে এটাই চলছে দেশে। যেন কোনো অভিভাবক নেই। তিনি আরও বলেন, অন্য দেশে পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন, রক্ষণাবেক্ষণ একটি প্রতিষ্ঠানের আওতায় হয়। ভুল-ত্রুটির দায়ও তাদের থাকে।

কিন্তু আমাদের দেশে প্রজেক্ট নির্ভর উন্নয়নে নেমেছে সেবা সংস্থাগুলো। নগর-সরকারের অধীনে কাজ হলে এ সমন্বয়হীনতার ভোগান্তি মানুষকে পোহাতে হতো না।

সর্বশেষ খবর