মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

কবে সরবে নগরীর টার্মিনাল

জয়শ্রী ভাদুড়ী

কবে সরবে নগরীর টার্মিনাল

রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলো নগরের যানজট বাড়িয়ে তুলেছে। মহাখালী বাস টার্মিনালের গাড়ির চাপে বন্ধ হয়ে যায় মূল সড়ক। রবিবার মহাখালী থেকে তোলা ছবি : জয়ীতা রায়

রাজধানীর আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালগুলো শহরের বাইরে সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আবারও আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনাল অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে গত রবিবার ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) পরিচালনা পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, রাজধানীর ভিতরে থাকা আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালগুলো সরিয়ে নেওয়া হবে। এ জন্য ঢাকা মহানগরীর বাইরে জায়গা খোঁজা হচ্ছে। স্থানান্তরের পর গাবতলী ও মহাখালী টার্মিনালের জায়গায় ‘ট্রান্সপোর্টেশন হাব’ গড়ে তোলা হবে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে নগর ভবনে অনুষ্ঠিত সভা শেষে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করে ঢাকা মহানগর থেকে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালগুলো ক্রমান্বয়ে সরিয়ে নেওয়া হবে।

সোয়া কোটি মানুষের যানজটকবলিত এ নগরীতে চারটি বাস টার্মিনাল সড়ক পরিবহনের নৈরাজ্য আরও বাড়িয়ে তুলেছে। জায়গা স্বল্পতার কারণে টার্মিনাল ছাড়িয়ে বাস ছড়িয়ে পড়ছে মূল রাস্তায়। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের সামনের রাস্তাটি সব সময় আন্তঃজেলা যাত্রীবাহী বাসের দখলে থাকে। ফলে টার্মিনালের সামনের রাস্তাটিতে যানজট লেগে থাকে সব সময়। মহাখালী বাস টার্মিনালেও অভিন্ন পরিস্থিতি। টার্মিনালের ভিতরে বাসের জায়গা হচ্ছে না। ফলে, টার্মিনালের সামনের রাস্তায়ও বাস ফেলে রাখা হচ্ছে। মূল রাস্তায় গাড়ি রাখায় বাড়ছে যানজট। মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক বলেন, আমাদের টার্মিনালে বাসের জায়গা হচ্ছে না। এ জন্য গাদাগাদি করে বাস রাখা হয়েছে। টার্মিনালের পূর্বে জায়গা আছে। উল্টোপাশে সড়ক ও জনপথের জায়গা আছে। আমরা চেষ্টা করেও পাইনি। পাশে সিটি করপোরেশন কাঁচাবাজার করে রেখেছে, তা চালু করতে পারছে না। কিন্তু জায়গার অভাবে টার্মিনালে সমস্যা হচ্ছে। এদিকে মহাখালী টার্মিনালে দূরপাল্লার বাসের কারণে মহাখালী মোড় থেকে টঙ্গী পর্যন্ত পুরো বিমানবন্দর সড়কটিতে জায়গায় জায়গায় দিনভর যানজট লেগে থাকছে। টার্মিনালটি টঙ্গীতে সরিয়ে নিলে বিমানবন্দর সড়কে অন্তত ২০ শতাংশ গাড়ি কমে যায়। যানজটও সহনীয় পর্যায়ে চলে আসে। অন্যদিকে ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালের কারণে রাজধানীর গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া এলাকায় সব সময় যানজট লেগে থাকে।    

এদিকে রাজধানী ঢাকার সর্ববৃহৎ নগর ও আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল গাবতলীও সরিয়ে নেওয়া হবে। এ টার্মিনালের উত্তরাংশে মেট্রোরেলের জন্য নির্মাণ করা হবে ভূগর্ভস্থ স্টেশন ভবন। এসব কারণে আমিন বাজারের ট্রাক টার্মিনালে স্থানান্তর করা হতে পারে এ বাস টার্মিনাল। এ ধরনের একটি প্রস্তাব সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের বিবেচনাধীন রয়েছে।

গত সেপ্টেম্বরে বিদায় নেওয়ার আগে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) মো. আছাদুজ্জামান মিয়া ঢাকার সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে এবং যানজট নিরসনে মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল শহরের বাইরে নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছিলেন। তিনি আরও বলেছিলেন, বাস টার্মিনালগুলো সরিয়ে নেওয়ার সময় এসেছে। এগুলো সরাতে হবে। কারণ টার্মিনালগুলো বাস ডিপোতে পরিণত হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী বাস ডিপো নগরীর বাইরে থাকার কথা। বাস থামে রাস্তায়। ফলে পেছনে দীর্ঘ লাইন সৃষ্টি হয়। ১৬৭টি বাস স্টপেজ আমরা চিহ্নিত করেছি। এখন কিছুটা হলেও যানজট নিরসন হচ্ছে। কিন্তু এটি স্থায়ী সমাধান নয়।

উল্লেখ্য, রাজধানীকে যানজটমুক্ত করতে নয় বছর আগে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল দূরে সরানোর প্রস্তাব করা হয়েছিল। ২০১০ সালে সায়েদাবাদ টার্মিনাল কাঁচপুর সেতুর পাশে, ফুলবাড়িয়াকে কেরানীগঞ্জে, মহাখালীকে উত্তরায় ও গাবতলী টার্মিনাল সাভারে স্থানান্তর করার পরিকল্পনা করা হয়। এ জন্য তৎকালীন ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) রাজউকের কাছে জমিও চেয়েছিল। রাজউক জমি খোঁজা শুরু করেছিল। কিন্তু তা আর কার্যকর হয়নি। বরং বাস কোম্পানিগুলো পাল্লা দিয়ে পুরো ঢাকায় টিকিট কাউন্টার বসিয়েছে। টিকিট কাউন্টারগুলো আগে টার্মিনালের আশপাশের এলাকায় থাকলেও এখন ছড়িয়ে পড়েছে পুরো শহরে। দূরপাল্লার বাসগুলো দিনে-রাতে এসব কাউন্টার ঘুরে যাত্রী তোলে। ফলে টার্মিনাল ছাড়াও নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে নিয়মিত যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. সামছুল হক বলেন, সমন্বিত পরিকল্পনা না থাকলে এলোমেলো উন্নয়ন বিপত্তি ঘটায়। সায়েদাবাদ ঢাকায় প্রবেশ এবং বের হওয়ার গুরুতপূর্ণ হাব হতে পারত। পাশেই কমলাপুর রেলস্টেশন। এমআইটি সংযোগ, সদর ঘাটের সঙ্গে সংযোগ রাখার সুযোগ ছিল। কিন্তু হানিফ ফ্লাইওভার নির্মাণ করে সে সুযোগ নষ্ট করা হয়েছে। টার্মিনাল সরানোর উপযোগিতা এবং কোথায় করলে ভালো হবে সে বিষয় সার্বিক জরিপ করতে হবে। বিজ্ঞানভিত্তিক উন্নয়নে নজর দিতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর