শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

খাল উদ্ধারের এখনই সময়

জয়শ্রী ভাদুড়ী

খাল উদ্ধারের এখনই সময়

দখল ও দূষণে বেহাল রাজধানীর খালগুলো পুনরুদ্ধারের সময় এখনই। শুষ্ক মৌসুমে খাল উদ্ধারে উদ্যোগ নেয়া হলে তা ফলপ্রসূ হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। নগরীর রামচন্দ্রপুর, শুভ্যাডা ও হাজারীবাগ খালের ছবি তুলেছেন জয়ীতা রায়

বর্ষা মৌসুমে হালকা বৃষ্টিতেই ডুবে যায় মিরপুর এলাকা। মিরপুরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বাউনিয়া খাল ভরাট হওয়ায় পানি জমে তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। বৃষ্টির সময় খাল পুনরুদ্ধারে দৌড়ঝাঁপ শুরু হলেও শুষ্ক মৌসুমে স্থবির থাকে এ কার্যক্রম। খাল পুনরুদ্ধারের এখনই উপযুক্ত সময় হলেও দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের।

ওয়াসার তথ্য অনুযায়ী, মিরপুর-১৪ নম্বর বাসস্ট্যান্ডের পাশ থেকে বাউনিয়া খালের শুরু। প্রায় আট কিলোমিটার দৈর্ঘ্যর এ খালের প্রায় এক হাজার ১৮২ মিটারের (জয়নগর থেকে মিরপুর-১৪ নম্বর) মালিক জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। বাকি অংশের মালিক ওয়াসা। ওয়াসা জানিয়েছে, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খালটির প্রস্থ হওয়ার কথা ৬০ ফুট। কিন্তু কাগজে-কলমে থাকলেও বাস্তবে তার অস্তিত্ব নেই। বিভিন্ন জায়গায় ময়লার স্তূপ এবং দখলে নালায় পরিণত হয়েছে খাল। আট কিলোমিটার লম্বা বাউনিয়া খালকে দুই জায়গায় চেপে ধরেছে সরকারেরই দুই প্রকল্প। আর বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন স্থানে চলছে প্রভাবশালীদের দখল। ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভাষানটেক পুনর্বাসন প্রকল্প ও গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের জয়নগর প্রকল্পের জন্য বিলীন হচ্ছে বাউনিয়া খালের অস্তিত্ব। মিরপুরবাসীর দুঃখ এই খাল নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই কর্তৃপক্ষের। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে আন্দোলন করা হলেও লাভ হয়নি কিছুই। এ ব্যাপারে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. জামাল মোস্তফা বলেন, এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিটি দফতরে দৌড়িয়েছি এই খাল পুনরুদ্ধারে। ওয়াসা থেকে শুরু করে মন্ত্রণালয়েও কয়েক দফা চিঠি চালাচালি হয়েছে। কিন্তু সিটি করপোরেশনের কোনো ক্ষমতা না থাকায় সমস্যার মধ্যে থেকেও কিছুই করতে পারছি না।

রাজধানীজুড়ে শিরা-উপশিরার মতো ছড়িয়ে ছিল ৪৬টি খাল। এসব খাল সচল থাকলে ভারি বর্ষণেও জলাবদ্ধতা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু বর্তমানে হালকা বৃষ্টি হলেই অচল হয়ে যায় পুরো নগরী। খাল দখল, খালের সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া, প্রশস্ত খাল সংকুচিত করার কারণে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। রাজধানীর ৪৬ খালের মধ্যে ২৬টির অস্তিত্ব রয়েছে বলে দাবি ঢাকা ওয়াসার। কিন্তু ওয়াসার খাতায় টিকে থাকা কয়েকটি খালও দখলের পথে। সরেজমিন দেখা গেছে, কল্যাণপুর ‘চ’ খালের কিছু জায়গা দখল হয়ে আছে। রামচন্দ্রপুর খালের ২০০ মিটার অংশেই ৩০ ফুট জায়গা ভরাট করে রাস্তা তৈরি করেছে সিটি করপোরেশন। এ খালের মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদসংলগ্ন স্থানে ৬০ ফুটের স্থলে ৩০ ফুট রয়েছে। খিলগাঁও-বাসাবো খালের খিলগাঁও ফ্লাইওভারসংলগ্ন ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুলের সামনেই আরেকটি ফলক। কিন্তু খিলগাঁও অংশ থেকে তিলপাপাড়া পর্যন্ত খালের কোনো চিহ্ন চোখে পড়ে না। ওয়াসার নথিপত্রে খালটির প্রস্থ স্থানভেদে ১৬ থেকে ৩২ ফুট। বাস্তবে সেটা কোথাও পাওয়া যায়নি।

তিলপাপাড়া থেকে আমানুল্ল­াহ সুপার মার্কেট পর্যন্ত খাল ভরাট করে কিছু স্থানে পাইপ ড্রেন তৈরি করা হয়েছে। উত্তরার দক্ষিণ আজমপুর থেকে শুরু হয়ে কসাইবাড়ি ঘুরে মোল্লারটেক গিয়ে শেষ হওয়া কসাইবাড়ি খালটিকে সাধারণভাবে বোঝার উপায় নেই। ছোট একটি ড্রেনে পরিণত হয়েছে খালটি। এ ছাড়া সরকারি নথিতে ৬০ ফুট প্রশস্ত বাসাবো খাল এখন ৩০ ফুট, রামচন্দ্রপুর খাল ১০০ ফুটের স্থলে ৬০ ফুট, মহাখালী খাল ৬০ ফুটের স্থলে ৩০ ফুট, আবদুল্ল­াহপুর খাল ১০০ ফুটের বদলে ৬৫ ফুট, কল্যাণপুর প্রধান খাল ১২০ ফুটের বদলে স্থানভেদে ৬০ থেকে ৭০ ফুট, কল্যাণপুর ‘ক’ খালের বিশিল অংশে এখন সরু ড্রেন, রূপনগর খাল ৬০ ফুটের স্থলে ২৫ থেকে ৩০ ফুট, ইব্রাহিমপুর খালের কচুক্ষেতসংলগ্ন মাঝামাঝি স্থানে ৩০ ফুটের স্থলে রয়েছে ১৮ ফুট। এসব খাল দখলের চিত্র নিয়ে প্রতি বছরই আলোচনা আছে কিন্তু নেই পুনরুদ্ধার কার্যক্রম। ঢাকা জেলা প্রশাসন এবং ওয়াসার মালিকানায় থাকা খালগুলো দখলদারের কবলে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে খাল বাঁচাও স্লে­াগান উঠলেও শুকনা মৌসুমে কোনো কার্যক্রমই চোখে পড়েনি। এ ব্যাপারে নগর বিশ্লে­ষক স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ঢাকা শহরের প্রাণ হলো এই খালগুলো। খালগুলো সচল থাকলে ঢাকাবাসীকে কখনো জলাবদ্ধতার সমস্যায় ভুগতে হতো না। মেয়রের শহর ঝাড়ু দেওয়া ছাড়া আর কোনো ক্ষমতাই নেই। তাই সেবা সংস্থার চিঠি চালাচালিতে আটকে থাকে খাল পুনরুদ্ধার কার্যক্রম।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর