মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

দখলে বিপন্ন পুরাতন গোমতী

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

দখলে বিপন্ন পুরাতন গোমতী

কুমিল্লা নগরীর পুরাতন গোমতী হয়ে উঠতে পারে নগরীর ফুসফুস। এই প্রাকৃতিক জলাধার প্রতিদিন প্রভাবশালীদের দখলে চলে যাচ্ছে। নদীতে আবর্জনা ফেলে দখল করা হচ্ছে। দখল হওয়া নদীর এ বিশাল এলাকাজুড়ে নির্মিত হয়েছে দোকানপাট ও বহুতল ভবন। সবাই প্রতিযোগিতায় নেমেছে বাড়িটা নদীর দিকে বাড়িয়ে করার। নদীর বাকি অংশে স্যুয়ারেজ লাইন এবং আবর্জনা ফেলায় তা মরা খালে পরিণত হচ্ছে। নদীটি দখলমুক্ত করে এর পাড়ে ওয়াকওয়ে করা যেতে পারে। ওপরে হাতিরঝিলের আদলে সৌন্দর্য বাড়ানো যেতে পারে। এতে বাড়বে নগরীর সৌন্দর্য। বজায় থাকবে প্রাকৃতিক ভারসাম্য। ২০১৭ সালে নির্বাচিত মেয়র মনিরুল হক সাক্কু পুরাতন গোমতী নদীকে হাতিরঝিলে রূপ দেওয়ার ইশতেহার দিয়েছিলেন। নগরবাসী এ ঘোষণার দ্রুত বাস্তবায়ন চায়।

সূত্র মতে, পুরাতন গোমতী নদী থেকে গত এক যুগ ধরে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করার জন্য প্রশাসন পদক্ষেপ নিলেও রাজনৈতিক এবং বিভিন্ন কারণে তা কার্যকর হয়নি। হালনাগাদ তালিকা অনুযায়ী ২৫৮ দশমিক ৭৪ একর জায়গা অবৈধ দখলদারমুক্ত করা হবেÑ এমন খবর জেনে দখলদাররা অভিযান ঠেকাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক তদবির অব্যাহত রেখেছে। গোমতী নদী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুমিল্লার বিবিরবাজার সীমান্ত দিয়ে কুমিল্লা জেলায় প্রবেশ করে। শহর রক্ষার জন্য এ নদীর গতিপথ পরিবর্তন করা হলে শহরের উত্তর প্রান্তে কাপ্তানবাজার থেকে শুভপুর পর্যন্ত দীর্ঘ নদীটি পুরনো গোমতী নদী নামে পরিচিতি পায়। এরপর থেকে রাজনৈতিক ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা নদীটি দখল করে নির্মাণ করে বাড়িঘর ও দোকানপাট। শুভপুর, চঁনপুর, সুজানগর, গাংচর, টিক্কারচর, গয়ামবাগিচা, মোগলটুলী শাহসুজা মসজিদ রোড, পুরাতন চৌধুরীপাড়া, কাপ্তানবাজার, ভাটপাড়া, বিষ্ণুপুর ও বজ্রপুর এলাকার মধ্যে পুরাতন গোমতীর দুই পাড়ের প্রায় ২শ’ একর সরকারি ভূমি অবৈধ দখলদারদের কবলে রয়েছে। এর মধ্যে ৫২২ জন অবৈধ দখলদারের তালিকা করা হয়েছে। ২০০৩ সাল থেকে এসব অবৈধ দখলদারকে ৮-৯ বার উচ্ছেদ নোটিস দেওয়া হয়। দখলদারদের মধ্যে রাজনৈতিক প্রভাবশালী নেতা থাকায় উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনায় বিঘ্ন হয়।  বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন কুমিল্লার সভাপতি ডা. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, নদীটি দখলমুক্ত করে ওয়াকওয়ে করা যেতে পারে। ওপরে হাতিরঝিলের আদলে সৌন্দর্য বাড়ানো যেতে পারে। নদীটি রক্ষায় আমরা এরই মধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছি। জেলা প্রশাসক ও সিটি মেয়রকে স্মারকলিপি দিয়েছি। মেয়র মনিরুল হক সাক্কু পুরাতন গোমতী নদীকে হাতিরঝিলে রূপ দেওয়ার ইশতেহার ঘোষণা করেছিলেন। কুমিল্লা সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, পুরাতন গোমতীর মালিক জেলা প্রশাসন। দখল রোধে তারা ভূমিকা নিতে পারে। পুরাতন গোমতীর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে জাইকাতে প্রকল্প জমা দিয়েছি। আশা করছি পুরাতন গোমতীর সৌন্দর্য বর্ধনে কাজ করতে পারব।

সর্বশেষ খবর