মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

মোটরসাইকেলে ঝুঁকির যাত্রা

জয়শ্রী ভাদুড়ী

মোটরসাইকেলে ঝুঁকির যাত্রা

সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেলে মৃত্যু সবচেয়ে বেশি। আগে যাওয়ার তাড়নায় ভারী যানবাহনের সামনে দিয়ে বেপরোয়া চলাচলে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। বুড়িগঙ্গা সেতুর ওপর থেকে সম্প্রতি তোলা ছবি : জয়ীতা রায়

রাজধানীর ব্যস্ত সড়ক কারওয়ানবাজার সার্ক ফোয়ারায় এক পাশের সিগন্যাল ছেড়ে অন্য পাশে ইশারা দিয়েছেন গাড়ি থামার। বাস চালকরা থামলেও ফাঁকফোকর দিয়ে হুট করে বেরিয়ে আসছেন মোটরসাইকেল চালকরা। দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ বার বার নিষেধ করলেও থামছে না মোটরসাইকেলে ঝুঁকির যাত্রা।

গত শনিবার দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্য ইমরান হোসেন বলেন, রাইড শেয়ারিং অ্যাপসে যাত্রী পরিবহন শুরু হওয়ায় বেড়েছে মোটরসাইকেলের সংখ্যা। সিগন্যালে মোটরসাইকেল সামলানোই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে গেছে। কোনো লেন মানে না, কোথাও একটু ফাঁকফোকর থাকলে সেখান দিয়েই যাওয়ার চেষ্টা করে।

বিআরটিএর হিসাবে রাজধানীতে বর্তমানে মোটরসাইকেলের সংখ্যা ৬ লাখ ৪০ হাজার ৩৯৬টি। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ৩৬ হাজার ৩৩২টি। এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে এক লাখের বেশি মোটরসাইকেল। ২০১৫ সালে মোটরসাইকেলের সংখ্যা ৪৬ হাজার ৭৬৪টি। ২০১৬ সালে আরও ৫৩ হাজার ৭৮৩টি মোটরবাইক নতুন করে যোগ হয়, যা তার আগের বছরের তুলনায় ৭ হাজার বেশি। ২০১৭ সালে ৭৫ হাজার ২৫১টি মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন হয়। তা আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণ বেড়ে যায়। সর্বশেষ এ বছর মার্চ মাস পর্যন্ত ২৩ হাজার ৭৫৫টি মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন হয়েছে।

রাইড শেয়ারিং অ্যাপে আয়ের কথা চিন্তা করে রাজধানীতে বাইরে থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে আসছেন অনেকে। অ্যাপসভিত্তিক সেবা উবারের চালক মহিউদ্দিন জানান, তার বাড়ি ময়মনসিংহে। তাদের এলাকার অনেকেই ঢাকায় মোটরসাইকেল চালিয়ে ভালো উপার্জন করছেন। সে আশায় তিনি এসেছেন। মোটরসাইকেল চালানোর ক্ষেত্রে আইনকানুন জানা আছে কিনা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, হেলমেট সঙ্গে থাকলেই হলো আর নিয়মের কী আছে। ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকলেই যে কেউ এসব অ্যাপসভিত্তিক রাইড শেয়ারিংয়ে চালক হিসেবে নিবন্ধন করতে পারবেন। সেখানে এলাকা নির্দিষ্ট করা নেই। তাই দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আয়ের আশায় ঢাকায় এসে মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন অনেকে। বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেল চালানোয় বাড়ছে দুর্ঘটনা। আকিক পরিবহনের চালক আলিম মিয়া বলেন, মোটরসাইকেলগুলো কোনো লেন মানে না। তাড়াতাড়ি যাওয়ার জন্য  কোথাও একটু ফাঁকা থাকলেই ঢুকে পড়ে। দুই বাসের মাঝে পড়ে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। আমাদের শুধু ইশারা দেয় তাদের আগে যেতে দেওয়ার জন্য। আগে এ অবস্থা ছিল না। মোটরসাইকেল ভাড়ায় চালানোর পর থেকেই এ পরিস্থিতি হয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। এ বাহনটি দিন দিন যেমন জনপ্রিয় হচ্ছে, তেমনি মোটরসাইকেল চালকদের বিরুদ্ধে বেপরোয়া আচরণের অভিযোগও জোরালো হচ্ছে। একই সঙ্গে মোটরসাইকেল আরোহীদের দুর্ঘটনার পরিসংখ্যানও ভারি হচ্ছে। বিপজ্জনক বাহন হিসেবে মোটরসাইকেলের পরিচিতি থাকলেও ঢাকার মতো শহরগুলোতে চলাচলের জন্য অনেকেই এটিকে বেছে নিচ্ছেন। শহরের বিভিন্ন জায়গায় সুযোগ পেলেই বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো কিংবা ফুটপাথের ওপর দিয়ে মোটরসাইেকেল চালানো একটি নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনা।

পথচারী সিরাজউদ্দিন বলেন, মোটরসাইকেল আরোহীরা ফুটপাথের ওপর দিয়ে যাতায়াত করে। এতে পথচারীদের সমস্যা হয়। তাদের নিষেধ করলে তর্ক জুড়ে দেয়। এসব চালকের জন্য ফুটপাথের ওপর দিয়ে সিমেন্টের কিংবা লোহার খুঁটি বসানো হয়েছে। তবুও থামছেন না তারা। রাস্তার সিগন্যালে অপেক্ষা করার মতো ধৈর্যও তাদের থাকে না।

সড়ক পরিবহন বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সামছুুল হক বলেন, মোটরসাইকেলে দুর্ঘটনা ঝুঁকি অন্য যানবাহনের তুলনায় বেশি। অন্য দেশে পরিকল্পনা করে যে কোনো সিস্টেম চালু করা হয়। আর আমাদের চালু করার পর বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পর নিয়ন্ত্রণের চিন্তা করা হয়। অ্যাপসভিত্তিক রাইড শেয়ারিং চালু করার আগে নীতিমালার প্রয়োজন ছিল। সেটা না করায় রাজধানীজুড়ে রাস্তা বাড়েনি, কিন্তু বেড়েছে মোটরসাইকেল।

সর্বশেষ খবর