মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

বাড়ছে প্রবীণের স্বাস্থ্যসচেতনতা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, বয়স হলে মানুষকে বিভিন্ন রকমের অসুখের মুখোমুখি হতে হয়

জয়শ্রী ভাদুড়ী


বাড়ছে প্রবীণের স্বাস্থ্যসচেতনতা

রমনা পার্কে ব্যায়াম করছেন প্রবীণরা ছবি : জয়ীতা রায়

ভোর সাড়ে ৫টায় ঘড়িতে বেজে উঠে অ্যালার্ম। সকাল ছয়টায় হাঁটতে বের হন ফয়জুল ইসলাম। বয়স ৬৫’র কোঠায় পৌঁছলেও রমনা পার্কে পুরো ১ ঘণ্টা হেঁটে কিছুক্ষণ ব্যায়াম করে বাসায় ফেরেন তিনি। সচেতনতার কারণে ডায়াবেটিস রয়েছে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে।

ফয়জুল ইসলাম বলেন, ৪৫ বছর বয়সে আমি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হই। তখন থেকে হাঁটার অভ্যাস শুরু। হাঁটলে রাতে ঘুম ভালো হয়। হাঁটতে এসে সকালের নির্মল বাতাসে মন ভালো হয়ে যায়। অনেকের সঙ্গে পরিচিতি সৃষ্টি হওয়ায় আড্ডাও ভালোই জমে।

গতকাল রমনা পার্কে দেখা যায়, সকালে হাঁটছেন এমন মানুষের মধ্যে প্রবীণের সংখ্যাই বেশি। অনেকেই ইয়োগাসহ বিভিন্ন রকমের ব্যায়াম করছেন। হাড় কাঁপানো শীতেও আলসেমি নেই তাদের। গত শনিবার সকালে ধানমন্ডি লেকেও দেখা যায় একই চিত্র। শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে নিয়ম করে হাঁটছেন তারা। হাঁটতে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। অবসরে যাওয়া মানুষ অনেকেই কাজ না থাকায় মানসিক অবসাদে ভোগেন।

বৈশ্বিক গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মৃত্যুর সপ্তম প্রধান কারণ ডায়াবেটিস। ২০৪০ সালে মৃত্যু বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হতে পারে। সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোগটি এখন প্রায় প্রতিটি পরিবারের উদ্বেগের বিষয়। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর হেলথ ম্যাট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশনের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, মেক্সিকোর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ৩৮ জন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও গবেষক বিশ্বের ১৯৫টি দেশে ২৫০টি রোগে মৃত্যু ও ভবিষ্যতে কোন রোগে বেশি মৃত্যু হবে, তার পূর্বাভাস দিয়েছেন। ওই অনুমিত হিসাবে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে বাংলাদেশে ডায়াবেটিসে ৩১ হাজার ৪৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই অসংক্রামক রোগে ২০৪০ সালে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ৬৯ হাজার ৭৫০ হবে। বয়স ৪০ বছরের বেশি হওয়ার পর থেকে টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁঁকি বেড়ে যায়। তবে দক্ষিণ এশিয়ার লোকজনের মধ্যে এই ঝুঁকি তৈরি হয় তাদের ২৫ বছর বয়স হওয়ার পর থেকেই।

মানসিক অবসাদ, হতাশায় বাড়ছে মানসিক রোগ। চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পর কর্মহীন জীবনে তৈরি হচ্ছে অবসাদ। বিভিন্ন অঙ্গে ব্যথাসহ নানা রোগ বাসা বাঁধছে শরীরে। তাই শরীর এবং মন সুস্থ রাখতে প্রবীণ ব্যক্তিরা সকাল-বিকাল হাঁটা এবং ব্যায়ামের কসরত গড়ে তুলছেন। ধানমন্ডি লেকে প্রতিদিন সকালে এবং বিকালে হাঁটতে আসেন লোকমান আলী। সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন তিনি। বিকালে ১ ঘণ্টা হাঁটা শেষে সমবয়সীদের সঙ্গে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন তিনি। প্রতিদিন হাঁটেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিদিন দুই বেলা হাঁটি এবং বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম করি। আগে ডায়াবেটিস সমস্যায় খুব ভুগতে হয়েছে। এখন পুরাপুরি নিয়ন্ত্রণে। হাঁটাহাঁটি শেষে সবার সঙ্গে আড্ডা, হাসি, গল্পে মনও ভালো হয়ে যায়। পাশে বসে থাকা সিরাজউদ্দিন বলেন, আগে রাতে ভালো ঘুম হতো না। পরিশ্রম না থাকায় ঘুমের বদলে তৈরি হতো দুশ্চিন্ততা। নিয়মিত ব্যায়াম করায় রাত ১১টা বাজলেই ঘুমিয়ে পড়ি। পরিমিত খাবার, পরিশ্রম এবং ঘুমের কারণে বয়স ৬৮ হলেও সুস্থ আছি।

এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, বয়স হলে মানুষকে বিভিন্ন রকমের অসুখের মুখোমুখি হতে হয়। প্রবীণ মানুষের মধ্যে ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। তাই নিয়মিত হাঁটা, পরিমিত খাবার এবং চিনি কম খেলে সুস্থ থাকা সম্ভব। আগের তুলনায় মানুষ অনেক বেশি সচেতন হয়েছে। রোগ সম্পর্কে জানলে, সচেতন হলে প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হয়।

সর্বশেষ খবর