ভোটের কঠিন যুদ্ধ সামলে নির্বাচিত হলেও এলাকার মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ খুব কমই পান ঢাকার দুই সিটির সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলররা। মেয়র কিংবা সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয় তাদের। তাই সাধারণ কাউন্সিলর পদেও তাদের অংশগ্রহণ খুবই কম।
আগামী ১ ফেব্রুয়ারি উত্তরের ১৮টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৭৭ জন এবং দক্ষিণের ২৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৮২ জন নারী প্রার্থী লড়ছেন। এর মধ্যে দক্ষিণে দুজন ইতিমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত ওয়ার্ডে (৯, ১০ ও ১১ নম্বর) আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী রাজিয়া সুলতানা ইতি বলেন, আমাদের সংরক্ষিত না বলা হোক, এটা যেন তুলে দেয়। আমরা এখন ইলেকটেড, সিলেকটেড না।
উত্তর সিটির সংরক্ষিত ওয়ার্ডে (২৯, ৩০ ও ৩২ নম্বর) বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী খন্দকার ফারহানা ইয়াসমিন আতিকা এবারই প্রথম ভোটে লড়ার সুযোগ পেয়েছেন। এ ওয়ার্ডে দুই লাখ ২ হাজার ৭৩৭ জন ভোটার রয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একজন এমপির সমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা তাকে করতে হচ্ছে, আর সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের তিনগুণ।’নিজের তিনটি ওয়ার্ডে ২৫৯টি বুথ এবং ৬৯টি কেন্দ্র রয়েছে জানিয়ে আতিকা বলেন, ‘সব বুথে এজেন্ট দিতে না পারলেও সবগুলো কেন্দ্রে তো দিতেই হবে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত ওয়ার্ডের (৮, ৯ ও ১০ নম্বর) আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মিনু রহমান মনে করেন, সিটি করপোরেশনের আইনেই গলদ রয়েছে। ‘নারীদের জন্য যে কাজের সুযোগগুলো আছে, সেগুলোই আমরা করি। সিটি করপোরেশন আইনেই তো আমাদের কাজের তেমন সুযোগ নেই, সাধারণ কাউন্সিলরদের আছে।’
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত ওয়ার্ডের (৭০, ৭১ ও ৭২ নম্বর) আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সেলিনা খান বলেন, ‘আমাদের পুরুষশাসিত সমাজ, আমরা চাইলেও সব কাজ করতে পারি না।’ সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ‘বৈষম্য’ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত ওয়ার্ডে (৩৯, ৪০ ও ৪৯ নম্বর) আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী লাভলী চৌধুরী। ‘১৬-১৭ বছর ধরে দেখছি সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের হাতেই সব ক্ষমতা। কাজের সুযোগ তারাই পায়। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত ওয়ার্ডে (২৭, ২৮ ও ৩০ নম্বর) বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী শামসুন নাহার ভূঁইয়া আগেও ১৫ বছর ধরে কাউন্সিলরের দায়িত্ব সামলেছেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ মহিলা দলের এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আসলে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরদের জন্য কোনো নীতিমালা নেই যে, আমরা কী কাজ করব? শুধু সংরক্ষিত আসনে নির্বাচিত হলে তো হবে না, কাজের সুযোগ দিতে হবে।’
উত্তর সিটি করপোরেশনে ১, ১৭ ও ১৮ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হাছিনা বারী চৌধুরী বলেন, ‘তিনটা ওয়ার্ড হওয়ায় আমাদের চাপ অনেক বেশি, অনেক পরিশ্রম করতে হচ্ছে।’ দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৬, ১৭, ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী আওয়ামী লীগ সমর্থিত নারগিস মাহাতাব বলেন, ‘আমাকে তিনটি ওয়ার্ডের কথা চিন্তা করে মানুষের সেবা করতে সুযোগ দিতে হবে।’