মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

সিটি ভোটে জয়ের ফ্যাক্টর

মাহমুদ আজহার ও রফিকুল ইসলাম রনি

সিটি ভোটে জয়ের ফ্যাক্টর

হরেক রকমের ভোটার ঢাকায়। বস্তিবাসী থেকে শুরু করে ভাসমান, তরুণ, নারী, গার্মেন্ট কর্মী, শ্রমিক, ড্রাইভার, কুলি, সংখ্যালঘু, ধর্মীয়, আঞ্চলিক সব ধরনের ভোটারই আছে রাজধানীতে। সুষ্ঠু ভোট হলে নির্বাচনে এসব ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে। আবার ভোট কেন্দ্র দখল করে কিংবা প্রশাসনকে ব্যবহার করে ভোট হলে কোনো ফ্যাক্টরই কাজে আসবে না। প্রধান দুই দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থীরা সব শ্রেণি পেশার মানুষের ভোটের পেছনে ছুটছেন। অন্য প্রার্থীরাও নিজেদের সাধ্যমতো সব ফ্যাক্টরে ভোট প্রার্থনা করছেন। সব ফ্যাক্টর অনুকূলে আনতে সংশ্লিষ্টদের কাজেও লাগাচ্ছেন। ঢাকা সিটি দক্ষিণের পুরান ঢাকায় যেমন ‘আদি ঢাকাইয়া’ ভোট আছে, তেমনি ঢাকা সিটি উত্তরে ভাসমান ভোটই বেশি।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এবার বস্তিবাসী, নারী, তরুণ ও ভাসমান ভোটই জয়-পরাজয় নির্ধারণ করবে। বিশেষ করে যারা সব শ্রেণি পেশার প্রতিনিধিদের সমানতালে ভোট টানবেন তিনিই নগরপিতার আসনে বসবেন। দুই প্রধান দল ও জোটের ভোটও কাজে লাগাবেন নৌকা-ধানের শীষের প্রার্থীরা।

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, দুই সিটির মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৩০ লাখ ১০ হাজার ২৭৩ এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ভোটার ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ১৯৪ জন। উত্তর সিটিতে ভোটারের মধ্যে পুরুষ ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ৫৬৭ এবং নারী ভোটার রয়েছেন ১৪ লাখ ৬০ হাজার ৭০৬ জন। দক্ষিণ সিটিতে পুরুষ ১২ লাখ ৯৩ হাজার ৪৪১ এবং নারী ১১ লাখ ৫৯ হাজার ৭৫৩ জন।

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, নির্বাচন কমিশনের প্রতি জনগণের আস্থার অভাব রয়েছে। সরকার, নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি সঠিকভাবে যার যার দায়িত্ব পালন করে তাহলে ভোটের ফ্যাক্টরগুলো কাজ করবে। আর যদি তা না হয়, তাহলে এসব ফ্যাক্টরে কোনো লাভ হবে না। তবে নির্বাচন কমিশনের প্রতি যেভাবে মানুষের অনাস্থা সৃষ্টি হচ্ছে, তাতে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে জনগণের মধ্যে নানা শঙ্কা রয়েছে। 

রাজনৈতিক বিশ্বেষকদের মতে, ঢাকার দুই সিটিতে বস্তিবাসী প্রায় ৫ লাখ ভোটারও মেয়র প্রার্থীদের ভোটে ফ্যাক্টর হতে পারে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ের শ্রমিক, ড্রাইভার, দারোয়ান, সুইপার, কাজের বুয়া, নিম্নআয়ের মানুষ, দলিত সম্প্র্র্রদায়, ভাসমান ভোটাররা নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ রোল প্লে করবে। ফ্যাক্টর হতে পারে ইসলামী ভোটও। দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় আছে অসংখ্য কওমি, হাফেজিয়া ও আলিয়া মাদ্রাসা। যেসব মাদ্রাসা হেফাজতে ইসলামের নিয়ন্ত্রণে তাদের ভোট কোন প্রার্থী পাবেন সে হিসাব-নিকাশ শুরু হয়ে গেছে।

ঢাকা উত্তর সিটির ভোটাররা বলছেন, উত্তর সিটি করপোরেশনে প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের একটি প্রভাব পড়বে এবারের ভোটে। তার উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় পরে বিজয়ী ৯ মাসে আতিকুল ইসলাম কতটুকু সফল হতে পেরেছেন তাও ভোটাররা চূলচেরা বিশ্লেষণ করবেন। এ ছাড়া জলাবদ্ধতা, ডেঙ্গু মশা নিধনে উত্তর সিটি কতটুকু সফল হয়েছে তাও বিশ্লেষণে আসবে। তাছাড়া উত্তরে নোয়াখালীর ভোটারের সংখ্যা বেশি। বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের বাড়িও নোয়াখালীতে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলামের বাড়ি নোয়াখালী না হলেও কাছাকছিÑ কুমিল্লায়। সেই বিবেচনায় দুজনই বৃহত্তর নোয়াখালীর ভোট টানবেন। বিশেষ করে কুমিল্লা, ফেনী, লক্ষ্মীপুরসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের ভোটারদের কাছে টানতে এ দুই প্রার্থী ছুটছেন ভোটারদের পেছনে পেছনে। নোয়াখালী অঞ্চলের নেতাদেরও কাজে লাগাচ্ছেন তারা।

এদিকে তাবিথ আগে আরও দুইবার নির্বাচন করার সুবাদে উত্তর সিটি নিয়ে তার হোমওয়ার্কও রয়েছে। তার বাবা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুও ঢাকা সিটি নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করছেন। এটাও তাবিথের জন্য বাড়তি সুবিধা হিসেবে কাজ করবে।

দক্ষিণ সিটির ভোটাররা বলছেন, ঢাকা সিটি করপোরেশন দক্ষিণেও কয়েকটি ফ্যাক্টর কাজ করবে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফজলে নূর তাপসের একটি ক্লিন ইমেজ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ নেই। তিনি স্পষ্ট ভাষায় সুন্দর করে কথাও বলতে পারেন, যা ভোটারদের কাছে টানতে ভূমিকা পালন করবে। অন্যদিকে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ইমেজ কাজে লাগাচ্ছেন তার পুত্র তরুণ নেতা প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন। খোকা দীর্ঘ ৯ বছর মেয়র পদে ছিলেন।

পুরান ঢাকায় তিনি এর বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন। এ ছাড়া ঢাকা সিটির সাবেক মেয়র বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও তার পতœী আফরোজা আব্বাসও খোকার ছেলের পক্ষে ভোটের মাঠে সক্রিয় হয়ে গণসংযোগ করছেন। যাত্রাবাড়ী-শ্যামপুরের বিএনপির দুই প্রভাবশালী নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ ও নবীউল্লাহ নবী ঐক্যবদ্ধ হয়ে ধানের শীষের পক্ষে মাঠে নেমেছেন। এটাও ইশরাকের জন্য বাড়তি পাওনা। দুই দলের শক্তিও দক্ষিণ সিটি ভোটে কাজ করবে। এ ছাড়া খোকাপুত্র ইশরাককে স্থানীয় ঢাকাইয়্যা বলেও পুরান ঢাকাবাসী গ্রহণ করেছেন। এটাও ভোটে ফ্যাক্টর।

সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ভোট সুষ্ঠু হলেই কেবল ফ্যাক্টরগুলো কাজে লাগবে। কেন্দ্র দখল করে ভোট হলে কোনো ফ্যাক্টরই কাজে আসবে না। এ জন্য নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর