মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

কাঁচাবাজার স্থানান্তরে জটিলতা বাড়ছে

কাজ শেষ হওয়ার পর প্রায় দুই বছর পার হলেও এভাবেই পড়ে রয়েছে ছয়তলা ভবনটি। অনেকেই আসছেন, দেখে ঘুরে চলে যাচ্ছেন।

জয়শ্রী ভাদুড়ী

কাঁচাবাজার স্থানান্তরে জটিলতা বাড়ছে

রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মহাখালী, আমিনবাজার ও যাত্রাবাড়ীতে সরানোর উদ্যোগ দীর্ঘদিনের। মহাখালীর তৈরি ভবন দুই বছরের বেশি সময় ধরে পড়ে আছে ছবি : জয়ীতা রায়

রাজধানীর কারওয়ান বাজার সরানোর জন্য নতুন তিনটি পাইকারি বাজার বানানোর পরিকল্পনা নিয়েছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। প্রকল্পের মেয়াদ শেষে দুই জায়গায় ভবন তৈরি সম্পন্ন হলেও এখনো চালু হয়নি সেসব কাঁচাবাজার। যাত্রাবাড়ীতে নির্মিত ভবনে এখনো বাকি রয়েছে ফিনিশিং কাজ। মহাখালীতে দুই বছর আগে ভবন নির্মাণকাজ শেষ হলেও বার বার বিজ্ঞপ্তি দিয়েও দোকান বরাদ্দ দিতে পারেনি ডিএনসিসি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর কাঁচাবাজার স্থানান্তর নিয়ে জটিলতা বাড়ছে।

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ‘ঢাকা শহরের তিনটি পাইকারি কাঁচাবাজার নির্মাণ প্রকল্প’ অনুমোদন করে ২০০৬ সালে। কৃষিপণ্যের বাজার ও সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নয়নের পাশাপাশি কারওয়ান বাজারে যানজট কমাতে প্রকল্পটি নেওয়া হয়। মহাখালী, আমিনবাজার ও যাত্রাবাড়ীতে তিনটি পাইকারি কাঁচাবাজার নির্মাণের জন্য প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির মেয়াদ তিন দফা বাড়িয়ে শেষ হয় ২০১৫ সালের জুনে। প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক ডিএনসিসির দায়িত্ব পাওয়ার পর বেগবান হয় এই প্রকল্প। কাঁচাবাজার সরাতে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে একাধিক মিটিং করেন তিনি। তাদের চাহিদা মতো দোকানের আকার এবং অন্যান্য সুবিধা সংযোজনও করা হয়। তার মৃত্যুর পর ঝিমিয়ে পড়ে এ প্রকল্প। এতদিনেও কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীদের স্থানান্তর করতে পারেনি সিটি করপোরেশন।

মহাখালীতে নির্মিত কাঁচাবাজার ভবনে গিয়ে দেখা যায়, ভবন নির্মাণের যাবতীয় কাজ অনেক আগেই শেষ। দোকান বরাদ্দ দেওয়ার জন্য একাধিকবার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অতিরিক্ত দাম এবং ব্যবসায়িক অসুবিধার কথা বলে বরাদ্দ নিতে চাইছেন না ব্যবসায়ীরা। ভবনের মূল ফটক খোলা রয়েছে। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার পর প্রায় দুই বছর পার হলেও এভাবেই পড়ে রয়েছে ছয়তলা ভবনটি। অনেকেই আসছেন, দেখে ঘুরে চলে যাচ্ছেন। কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী সাজেদুল ইসলাম তার কর্মচারীকে নিয়ে এসেছিলেন দোকান দেখতে। দোকান ভাড়া নেবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, দোকানগুলো প্রয়োজনের তুলনায় ছোট। আমাদের প্রয়োজনীয়তার কথা মাথায় রেখে নকশা করতে হতো। এখানে সবজি নামাতে-তুলতেও ঝামেলা হবে।  

গাবতলীতে নতুন পাইকারি বাজারে রাখা হয়েছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ট্রাক এবং প্রকৌশল বিভাগের যন্ত্রপাতি। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, গাবতলী বাসস্ট্যান্ডের দক্ষিণ পাশে বেড়িবাঁধের পূর্বদিকে নির্মাণ করা হয়েছে পাইকারি কাঁচাবাজারটি। কাঁচাবাজারের ভবনের সামনে রাখা হয়েছে সুপরিসর খোলা জায়গা। পার্কিংয়ের জন্যও রয়েছে আলাদা স্থান, কিন্তু দক্ষিণ-পূর্ব কোণে প্রকৌশল বিভাগের যন্ত্রপাতি, গাড়ি ও নির্মাণসামগ্রী রাখা হয়েছে। পার্কিং স্থান ও খোলা জায়গায় রাখা হয়েছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ট্রাক। মূল চত্বরের বাইরের ফটক ও খোলা জায়গায় বাইরের ট্রাক রেখে পুরো এলাকা দখল করা হয়েছে। সবকটি ভবনের চারপাশে জন্ম নিয়েছে আগাছা।

যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজারের ভবন তৈরির কাজ এখনো শেষ করতে পারেনি প্রকৌশল দফতর। চারতলা তিনটি ভবন এবং একতলা চারটি ভবনের কাঠামো সম্পূর্ণ দাঁড়িয়ে গেছে, কিন্তু এখনো ফিনিশিংয়ের কাজ বাকি। ফলে পাইকারি বাজারটি সম্পত্তি বিভাগকে হস্তান্তর করতে পারেনি প্রকৌশল বিভাগ। যাত্রাবাড়ী পাইকারি বাজারটি হস্তান্তর না করার ফলে দোকান বরাদ্দের বিজ্ঞপ্তি দেওয়াও সম্ভব হয়নি সিটি করপোরেশনের। খুব অল্প সময়ের মধ্যে পাইকারি বাজারটির কাজ শেষ করে সম্পত্তি বিভাগকে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প কর্মকর্তা।

‘ঢাকা শহরের তিনটি পাইকারি কাঁচাবাজার’ নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক ও ডিএনসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুর রহমান বলেন, দুটি পাইকারি বাজার হস্তান্তর করা হয়েছে। দোকান বরাদ্দের বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়েছে, যাত্রাবাড়ী পাইকারি বাজারের ফিনিশিংয়ের কাজ এখনো বাকি আছে। খুব শিগগিরই তা হস্তান্তর করা হবে।

কাঁচাবাজার সরানো নিয়ে দীর্ঘদিন আলোচনা চললেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। ভবন নির্মাণ দুই বছর আগে শেষ হলেও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সিটি করপোরেশনের সমন্বয়হীনতায় আটকে আছে প্রকল্প। এসব ভবন নির্মাণে শুরু থেকেই ব্যবসায়িক অসুবিধার কথা বলে আসছিলেন ব্যবসায়ীরা। এ ব্যাপারে নগর বিশ্লেষক স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, যে কোনো পরিকল্পনা গ্রহণের সময় তা বাস্তবায়নে আগ্রহ এবং উদ্যম থাকতে হবে। প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা করে তাদের মোটামুটি রাজি করিয়েছিলেন। তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী দোকানের নকশায়ও কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছিল। কিন্তু তার মৃত্যুর পর সিটি করপোরেশন আর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এভাবে ফেলে রাখলে অব্যবহৃত থেকে নষ্ট হবে কোটি টাকার ভবন। রাজস্ব হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সিটি করপোরেশন। তাই কাঁচাবাজার অপসারণে জোর পদক্ষেপ থাকতে হবে সিটি করপোরেশনের।

 

সর্বশেষ খবর