মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

দেয়ালে টানানো প্রতিরোধের ইতিহাস

মাহবুব মমতাজী

দেয়ালে টানানো প্রতিরোধের ইতিহাস

মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ সদস্যদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে স্থাপিত হয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। ২৫ মার্চ কালরাতে পুলিশ বাহিনীর তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত, সাহসিকতা ও বীরত্বগাথার বিভিন্ন প্রমাণ বহন করছে এই জাদুঘরটি। অত্যাধুনিক, সুদৃশ্য ও নান্দনিক অবয়বে নির্মিত এ জাদুঘরে ঢুকলে প্রথমেই চোখে পড়বে বঙ্গবন্ধু গ্যালারি। গ্যালারির দুই পাশের দেয়ালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নানা সময়কার দুর্লভ আলোকচিত্র ও কিছু বাণী। ডানপাশে একটি ভার্চুয়াল লাইব্রেরি, বামপাশে অডিও ভিজ্যুয়াল কক্ষ। লাইব্রেরিতে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রায় হাজারখানেক বই।

জাদুঘরটিতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পুলিশ সদস্যদের ব্যবহৃত রাইফেল, বন্দুক, মর্টার শেল, হাতব্যাগ, টুপি, চশমা, মানিব্যাগ ও ইউনিফর্ম রাখা হয়েছে। দেয়ালজুড়ে সেঁটে দেওয়া হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা পুলিশ সদস্যদের যুদ্ধের সময়ের ডায়েরি, হাতে লেখা বিভিন্ন বার্তা, আলোকচিত্র ও পোস্টার। এ ছাড়া

ব্রিটিশ আমলে ব্যবহৃত পুলিশের বিভিন্ন অস্ত্র ও সরঞ্জাম স্থান পেয়েছে। প্রতিদিনই অনেক দর্শনার্থী আসেন এই জাদুঘরে। দর্শনার্থীর বেশির ভাগই শিশু-কিশোর। এখানে মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের অবদান ও বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে পারছে শিশুরা।

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাইদুর বলে, ‘স্কুল থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অ্যাসাইনমেন্ট করতে দেওয়ায় তারা জাদুঘরটি ঘুরে দেখে। মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে আগে যেসব বিষয়ে তারা জানত না জাদুঘরে গিয়ে সেসব জানতে পারে।’ ২০১৭ সালের মার্চে জাদুঘরটিকে আধুনিকায়ন করা হয়। ওই বছর থেকে এখন পর্যন্ত ৩৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৩ হাজার ৫৩৬ শিক্ষার্থী জাদুঘর পরিদর্শন আসে। জাদুঘরের দেয়ালের এক পাশে গ্লাসের কাঠামোয় মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পুলিশের একটি পরিসংখ্যান আছে। এতে দেখা যায়, ১৪ হাজার পুলিশ পাকিস্তানের আনুগত্য ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়।

মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ১ জন ডিআইজি, ৪ জন পুলিশ সুপার, ১ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ১ জন ডিএসপি, ১ জন এসডিপিও, ১২ পুলিশ পরিদর্শক এবং ৮১ উপ-পরিদর্শকসহ ১১শ’র বেশি পুলিশ শহীদ হন। আরেকটি দেয়ালে টানানো খেতাবপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদের তালিকা। সেখানে তিনজন বীরবিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত, দুজন আছেন বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত এবং তিনজনকে দেওয়া হয়েছে সেনাপতির প্রশংসাপত্র।  

প্রতিদিনই দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে মুক্তিযুদ্ধের এই সংগ্রহশালা। শনিবার থেকে মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এবং শুক্রবার বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত জাদুঘর খোলা থাকে। বুধবার সাপ্তাহিক বন্ধ।

২০১৩ সালের ২৪ মার্চ রাজারবাগ পুলিশ লাইনের টেলিকম ভবনে প্রথম জাদুঘরটি উদ্বোধন হয়। পুলিশ সদর দফতরের এআইজি ও পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের পরিচালক জালাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী জানান, মুজিববর্ষ উপলক্ষে জাদুঘরটিকে ঘিরে বিস্তারিত কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। তারা যেন মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের অবদানের সঠিক ইতিহাস জানতে পারে।

সর্বশেষ খবর