চট্টগ্রাম নগরের সিনেমা প্যালেস মোড় থেকে বৌদ্ধ মন্দির। এ সড়কটিতে নাক-মুখ চেপে ধরা ছাড়া হাঁটার কোনো সুযোগই নেই। মাস্ক ছাড়া হাঁটলে মুহূর্তেই ধুলায় ধূসরিত হয়ে যাবে সারা শরীর। নগরের বাদামতলী থেকে শুরু করে এক্সেস রোড, পোর্ট কানেক্টিং রোড, গণি বেকারি থেকে চকবাজার গুলজার মোড়সহ নগরের অধিকাংশ সড়ক এখন ধুলায় নাকাল। প্রায় প্রতিটি সড়কেই উড়ছে ধুলা। সেবা সংস্থাগুলোর অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ির কারণেই এমনটি হচ্ছে।
জানা যায়, নগরের রাস্তার ধুলাবালি পরিষ্কারে ২০১৩ সালের জুন মাসে পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে (চসিক) দুইটি গাড়ি অনুদান দেয়। গাড়ি দুটির দাম প্রায় ৮৬ লাখ টাকা করে। এর আগে রাস্তার ধুলাবালি পরিষ্কারের জন্য ২০০৫ সালে চসিক নিজস্ব অর্থায়নে একটি সুইপিং গাড়ি কিনে। গাড়িটির দাম এক কোটি ১৩ লাখ টাকা। পরিবেশ অধিদফতরের ‘থ্রি আর’ প্রকল্পের আওতায় ৫ কোটি ১ লাখ ৭ হাজার টাকা দামে ছয়টি ‘রোড সুইপিং’ গাড়ি কেনা হয়। এর মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে চারটি ও চসিককে দুইটি গাড়ি দেয় পরিবেশ অধিদফতর। গাড়ি দুটি তখন প্রায় ছয় মাস নগরের ধুলা পরিষ্কার করে। প্রতিদিন একটি গাড়ি আগ্রাবাদ থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দর, আরেকটি গাড়ি কালুরঘাট থেকে আগ্রাবাদ পর্যন্ত ধুলা পরিষ্কার করত। কিন্তু ছয় মাস পর অজ্ঞাত কারণে এসব গাড়ি বন্ধ করে দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন ব্যবহার না হওয়ায় এগুলো বিকল হয়ে পড়ে আছে। এর মধ্যে একটি গাড়ি নিলামযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে।
অভিযোগ আছে, উন্নয়ন কাজ চলাকালে তৈরি হওয়া ধুলাবালি নিয়ন্ত্রণ বা নিরসনে চসিক কিংবা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয় না। পরিকল্পিত পদ্ধতিতে উন্নয়ন কাজ করলে পথচারী কিংবা যানবাহনগুলোকে চরম পর্যায়ের ভোগান্তিতে পড়তে হতো না। অথচ গাড়িগুলো দিয়ে সামান্য হলেও সড়কের ধুলা নিবারণ করা সম্ভব হতো।চসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) সুদীপ বসাক বলেন, ‘পরিবেশ অধিদফতরের দেওয়া গাড়িগুলো ধুলাবালি পরিষ্কারের জন্য যথেষ্ট উপযোগী ছিল না। ধুলাবালি পরিষ্কারের সময় আশপাশে উল্টো আরও উড়ত। কারণ, গাড়িগুলো কম ধুলা পরিষ্কারের জন্য উপযোগী। কিন্তু নগরে ধুলার পরিমাণ অনেক বেশি।’ তিনি বলেন, ‘গাড়িগুলোর জন্য বেশি তেল প্রয়োজন হতো। এর তুলনায় যদি ধুলাবালি পরিষ্কারের সুফল পাওয়া যেত, তাহলে তেল বেশি খরচ হলেও চালু রাখা যেত। এখন এসব গাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে।’
নগর ঘুরে দেখা যায়, উন্নয়ন কাজ চলছে এমন এলাকাগুলো ধুলায় ধূসর হয়ে আছে। চসিক, চট্টগ্রাম ওয়াসা, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বিটিআরসিসহ একাধিক সেবা সংস্থা নগরে উন্নয়ন কাজ করছে। সমন্বয়হীনতায় এসব সড়কে উড়ছে ধুলাবালি।