মঙ্গলবার, ১০ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

খোঁড়াখুঁড়ির নগরে জলাবদ্ধতার শঙ্কা

জয়শ্রী ভাদুড়ী

খোঁড়াখুঁড়ির নগরে জলাবদ্ধতার শঙ্কা

রাজধানীজুড়ে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডের খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। পাশাপাশি ঢাকা ওয়াসা সড়ক খুঁড়ে বিভিন্ন এলাকায় পানি নিষ্কাশন পাইপ বসাচ্ছে। রবিবার মতিঝিল এলাকা থেকে তোলা ছবি : রোহেত রাজীবছবি : রোহেত রাজীব

বিশ্বের দূষিত শহর হিসেবে গত কয়েক মাস ধরে একাধিকবার শীর্ষে উঠেছে রাজধানী ঢাকা। নগরজুড়ে অনেক উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণ কাজের ধুলোবালিতে ঢাকার বায়ুদূষণ দুঃসহ হয়ে উঠেছে। রাজধানীর বিস্তৃত এলাকায় এখন খোঁড়াখুঁড়ির গভীর ক্ষত। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত নির্মাণাধীন মেট্রোরেল লাইন-৬ এর নির্মাণ চলছে। উত্তরা-মিরপুর-আগারগাঁওয়ে নির্মাণ কাজের বেশ অগ্রগতি হলেও ফার্মগেট, কারওয়ানবাজার, শাহবাগ, প্রেস ক্লাব, পল্টন ও মতিঝিল এলাকায় খোঁড়াখুঁড়ির শেষ নেই। অন্যদিকে বিমানবন্দর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালি পর্যন্ত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলছে। গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রধান সড়কের মাঝ বরাবর গভীরভাবে খুঁড়ে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট-বিআরটি নির্মাণের কাজ চলছে। অন্যদিকে মতিঝিল, মগবাজার, মিরপুর, উত্তরা, ধানমন্ডি এবং পুরান ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সড়ক উন্নয়নের কাজ করছে দুই সিটি করপোরেশন। পাশাপাশি ঢাকা ওয়াসার পানি নিষ্কাশন পাইপ বসানোর কাজ চলছে বিভিন্ন স্থানে। সব মিলিয়ে রাজধানীর প্রায় সব এলাকাতেই অরক্ষিত সড়ক। উন্নয়ন প্রকল্পের খোঁড়াখুঁড়ির কারণে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে আছে। আসন্ন বর্ষায় পানি নিষ্কাশন নিয়ে বড় বিপদ অপেক্ষা করছে বলে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। নগরীর ভরাট হওয়া খাল সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। খোঁড়াখুঁড়ির কাজও আগামী জুনের আগে শেষ হবে বলে মনে হচ্ছে না। পূর্ব প্রস্তুতি না থাকায় এবারের বর্ষার জলাবদ্ধতার ভয়াবহ ভোগান্তি অপেক্ষা করছে ঢাকাবাসীর সামনে। এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) আসন্ন বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা হতে পারে এমন ১১টি এলাকা চিহ্নিত করেছে। আগের বছরগুলোতেও এসব এলাকায় জলাবদ্ধতা বেশি হয়েছিল। তখনকার জলাবদ্ধতার কারণগুলো এসব এলাকায় সমাধান করা হয়নি। ফলে, এসব এলাকা এবার বড় ভোগান্তির কারণ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। ডিএনসিসির কর্মকর্তারা বলছেন, এ জন্য সরকারের একাধিক সংস্থার দায়দায়িত্ব রয়েছে। এসব এলাকায় জলাবদ্ধতার সঙ্গে ডিএনসিসি ছাড়াও ঢাকা ওয়াসা, মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, হাতিরঝিল প্রকল্প কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এই তালিকা ডিএনসিসির পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগে জমা দেওয়া হয়েছে। জলাবদ্ধতার প্রতিকারে করণীয়ও নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন বর্ষার আগে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রতিকারে নামলেই হয়।

ডিএনসিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, জলাবদ্ধতার কারণে বিভিন্ন এলাকায় আগের বছরেও ভোগান্তি হয়েছে। এলাকাগুলো সরেজমিন পরিদর্শনের মাধ্যমে কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। সরকারের অন্যান্য সংস্থা আন্তরিক না হলে একা সিটি করপোরেশনের পক্ষে এর সমাধান সম্ভব নয়। ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগে সভা অনুষ্ঠিত হয়। তাতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, এবারের বর্ষা মৌসুমে যেন জলাবদ্ধতার কারণে অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়তে না হয়। জনগণ অজুহাত শুনতে চায় না। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে মিরপুরের বাসিন্দারা জলাবদ্ধতার তীব্র ভোগান্তিতে পড়তে যাচ্ছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজের কারণে মিরপুর ১০ নম্বর থেকে আগারগাঁও এবং বিজয় সরণি থেকে সংসদ ভবনের পূর্ব প্রান্ত হয়ে শাহবাগ এমনকি প্রেস ক্লাব-তোপখানা পর্যন্ত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা এখন খোঁড়াখুঁড়ির কারণে বিপর্যস্ত। অন্যদিকে ঢাকা ওয়াসার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা সংস্কারের কারণে এখন বড় ব্যাসের পাইপ বসানোর কাজ শুরু হচ্ছে মিরপুর ১০ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত। ফলে এই পথে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ পোহাতে হবে এলাকাবাসীকে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সুশাসন ও নগরায়ণ বিষয়ক কমিটির সদস্যসচিব স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, সরকারি সংস্থাগুলো সাধারণ মানুষের দুর্ভোগকে কখনো আমলে নেয় না। জনদুর্ভোগে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কখনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। ফলে দুর্ভোগ লাঘবে তাদের কার্যকর উদ্যোগ চোখে পড়ে না। 

নগর ঘুরে দেখা যায়, উন্নয়ন কাজের জন্য নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পানি নিষ্কাশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থা অকেজো হয়ে পড়েছে। হাতিরঝিল প্রকল্পের আগে কারওয়ান বাজার এলাকার পানি সরাসরি হাতিরঝিলে যেত। হাতিরঝিল প্রকল্পের পর সরাসরি পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যায়। কারওয়ান বাজারের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সামনে থেকে সোনারগাঁও হোটেলসংলগ্ন স্থায়ী নির্গমন পথ পর্যন্ত পাইপলাইন বসানো হলে জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান হতে পারে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রকৌশলী ও হাতিরঝিল প্রকল্পের পরিচালক রায়হানুল ফেরদৌস বলেন, বৃষ্টির পানি নির্গমনের নতুন পথ নির্মাণ বা বিদ্যমান পথ সংস্কারের বিষয়ে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এখনো যোগাযোগ করা হয়নি। ঢাকা ওয়াসার চিকন নির্গমন পথের কারণে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সরণির হলিডে ইন হোটেল, পশ্চিম নাখালপাড়া ৬ নম্বর গলি থেকে ৮ নম্বর গলি হয়ে পাগলার পোল পর্যন্ত, পূর্ব ও পশ্চিম রাজাবাজার এলাকায় জলাবদ্ধতা হচ্ছে। বৃষ্টির পানি নির্গমনের পথ না থাকায় উত্তর বেগুনবাড়ি এলাকা ও মনিপুরিপাড়ায় জলাবদ্ধতা হচ্ছে। পান্থকুঞ্জ পার্ক, কাঁঠালবাগান, পান্থপথ হয়ে রাসেল স্কয়ার পর্যন্ত বক্স কালভার্ট ভরাট হয়ে গেছে। অভ্যন্তরীণ পানিনিষ্কাশনের লাইন ময়লা-আবর্জনায় পূর্ণ। তেজতুরী বাজারের গার্ডেন রোড, গ্রিন রোডের জলাবদ্ধতা নিরসনে পান্থপথের বক্স কালভার্ট এবং অভ্যন্তরীণ লাইনগুলো পরিষ্কার করতে হবে।

 

সর্বশেষ খবর