মঙ্গলবার, ১৬ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

খেলার মাঠে ঘাসের নাচন

সবাই এখন ঘরে বন্দী। ফলে অলস পড়ে থাকা মাঠগুলো ঢেকে গেছে ঘন আর লম্বা ঘাসে। মানুষের পদচিহ্নবিহীন এই খেলার মাঠগুলোতে লকলকিয়ে বেড়ে উঠছে সবুজ ঘাস।

মানিক মুনতাসির, ঢাকা ও রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

খেলার মাঠে ঘাসের নাচন

নগরীর খেলার মাঠগুলোতে এখন অবাধে বেড়ে ওঠা অবাধ্য ঘাসের নাচন চলছে। উত্তরা ফ্রেন্ডস ক্লাব মাঠের ছবি শিমুল মাহমুদ ও মিরপুর গোলারটেক মাঠের ছবি তুলেছেন জয়ীতা রায়

করোনাভাইরাসকবলিত এই অচলাবস্থায় শিশুদের সময় কাটছে চার দেয়ালের ভিতর। প্রবল ইচ্ছে থাকলেও বন্ধুদের সঙ্গে মাঠে গিয়ে খেলার কোনো সুযোগ নেই। করোনাভাইরাস ঠেকানোর প্রধান শর্তই হলো শারীরিক দূরত্ব মেনে চলা। ফলে রাজধানীর প্রায় সব এলাকার খেলার মাঠগুলো অলস পড়ে আছে তিন মাস ধরে। যে মাঠে দিনরাত খেলা হতো। মাসের পর মাস সেখানে মানুষের পা-ই পড়ছে না। খেলার মাঠে নেই শিশু কিশোর ক্রীড়ামোদির দৌড়ঝাঁপ। প্রাতঃভ্রমণকারীদের হাঁটাচলাও নেই। সবাই এখন ঘরে বন্দী। ফলে অলস পড়ে থাকা মাঠগুলো ঢেকে গেছে ঘন আর লম্বা ঘাসে। মানুষের পদচিহ্নবিহীন এই খেলার মাঠগুলোতে লকলকিয়ে বেড়ে উঠছে সবুজ ঘাস। নগরীর খেলার মাঠগুলোতে এখন অবাধে বেড়ে ওঠা অবাধ্য ঘাসের নাচন চলছে।  

খিলগাঁও জোড়াপুকুর মাঠ, আরামবাগ, কলাবাগান, মিরপুর গোলারটেক, উত্তরার বিভিন্ন মাঠসহ রাজধানীর সব মাঠেই এখন বড় বড় ঘাস গজিয়েছে। অন্য সময় মাঠে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এনে ঘাস লাগানো হয়। করা হয় পরিচর্যা। এখন আর ঘাস লাগানোর প্রয়োজন নেই। প্রকৃতিগতভাবেই ঘাসে ভরে গেছে মাঠ। প্রতিটি মাঠই এখন যেন সবুজ গালিচা। চিরচেনা মাঠগুলো এখন যেন অচেনা কোনো সবুজ চত্বর।

রাজধানীর খিলগাঁওয়ে বাবা মায়ের সঙ্গে থাকেন সাত বছর বয়সী তাজওয়ার মুনতাসির কল্প। সে ক্লাস ওয়ানে পড়ে। সে জানায়, তার মন খুব খারাপ। স্কুলে যাওয়া হয় না। জুমে অনলাইনে ক্লাস করতে হয়। বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে পারছে না। মাঠে দৌড়াতে পারছে না। বিকাল বেলা ছাদে গিয়ে নিত্যদিন আকাশ দেখে। ঘুড়ি ওড়ায়। কিন্তু তার মন ভালো হয় না। মাঠে গিয়ে খেলতে চায়। আবার দৌড়াতে চায় বন্ধুদের সঙ্গে। একই এলাকার কলেজপড়–য়া মাহফুজ নাফিস জানায়, সে বাসায় থাকতে থাকতে বিরক্ত। আর ভালো লাগছে না। মাঠে যেতে চায়। কিন্তু করোনাভাইরাসের ভয়ে মা-বাবা যেতে দেন না কোথাও।

করোনাভাইরাস যেন পুরো বিশ^কে পাল্টে দিয়েছে। সবাই এখন ঘরবন্দী। এ তো গেল ঘরের মাঠের কথা। আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় সব খেলাধুলাই এখন বন্ধ। ফলে বড় বড় মাঠ, পার্ক, স্টেডিয়াম সবখানেই এখন বড় বড় সবুজ ঘাসের গালিচা। এক সময় মাঠে ঘাস লাগানো কিংবা পরিচর্যার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করা হতো আর এখন প্রকৃতির নিয়মে প্রতিটি মাঠে সবুজ ঘাসে ছেয়ে গেছে।  

এদিকে দিনের সবটুকু সময় বাসায় কাটানোটা শিশু-কিশোরদের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বদ্ধ ঘরে স্মার্টফোন, টিভি, কম্পিউটারই হয়ে উঠেছে শিশুর সঙ্গী। হাতের মুঠোয় সংকুচিত হয়ে পড়েছে শিশু-কিশোরদের পৃথিবী। কিন্তু অতিমাত্রায় এসব প্রযুক্তি পণ্যের ব্যবহার শিশুর জন্য বিপদও ডেকে আনতে পারে।

চট্টগ্রামের গৃহিণী কুমকুম আজাদ বলেন, আমার চার ও সাত বছরের দুই শিশুকে বাসায় অনেক কষ্ট করেই ধরে রাখতে হচ্ছে। এমনিতে স্কুল আর বাসার গলিতে খেলত। এখন সে সুযোগটাও নেই। ফলে সারাটা দিন তাদের ধরে রাখাটা অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।     

শিশুস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নগরায়ণে শিশুরা এমনিতেই মুক্ত আঙিনা থেকে বঞ্চিত। এখন করোনার কারণে তা আরও প্রকট হয়েছে। তাছাড়া বর্তমানে শিশুদের স্কুলও বন্ধ। সার্বিক বিবেচনায় বর্তমান পরিস্থিতিতে শিশু-কিশোরদের স্বাস্থ্য সম্মতভাবে বেড়ে ওঠা একটা চ্যালেঞ্জ। তবে বাসায়ও যদি কিছু নিয়ম অনুসরণ করা হয় তাহলে শিশুদের এ ঘাটতি কিছুটা পূরণ হবে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. শাহ আলম বলেন, শিশু-কিশোররা খেলতে পছন্দ করে। কিন্তু করোনা সংক্রমণের কারণে এখন শিশুরা খেলতে পারছে না। ফলে তাদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে মা-বাবা শিশুদের জন্য বাসায় খেলাধুলা করা, আনন্দ দেওয়াসহ এ জাতীয় পরিবেশ তৈরি করতে পারেন। এতে শিশুর মানসিকতায় এক ঘেয়েমি আসবে না। শিশুকে পরিবারে আনন্দময় পরিবেশ দিতে পারলে বিষণ্নতা দূর হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর